নির্মাণাধীন সেতু দেবে যাওয়ায় ৩ প্রকৌশলী বরখাস্ত, মেয়রকে শোকজ

নিউজ ডেস্ক: টাঙ্গাইল শহরের বেড়াডোমায় নির্মাণাধীন একটি সেতু দেবে যাওয়ার ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে তিন প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সেইসঙ্গে সেতু নির্মাণে অনিয়ম হচ্ছে জেনেও আইনগত পদক্ষেপ না নেওয়ায় টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়রকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

গত ১৪ নভেম্বর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ পৌর-১ শাখার উপ-সচিব মো. আব্দুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে রোববার (২০ নভেম্বর) মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে সেটি আপলোড করা হয়।

এদিকে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইব্রাহিম স্বাক্ষরিত অভিযোগনামায় আদেশে অনিয়মের অভিযোগ এনে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া টাঙ্গাইল পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) শিব্বির আহমেদ আজমীসহ আরও দুই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া সেতু নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ব্রিকস অ্যান্ড বিল্ডিং লিমিটেড এবং দ্যা নির্মিতিকে সেতু নির্মাণে ডিজাইন ও প্রাক্কলন যথাযথ অনুসরণ না করায় তাদের তালিকাভুক্ত করাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ব্যক্তিরা হলেন- নির্বাহী প্রকৌশলী শিব্বির আহমেদ আজমী, সহকারী প্রকৌশলী রাজীব গুহ ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী জিন্নাতুল হক। এদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করে দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও অসদাচরণের অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগনামা প্রাপ্তির ১০ কার্য দিবসের মধ্যে তাদের লিখিতভাবে স্থানীয় সরকার বিভাগে জানানোর জন্য বলা হয়েছে।

গত ১৬ জুন রাতে বেড়াডোমা এলাকায় লৌহজং নদীর ওপর সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন সেতু দেবে যায়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীন টাঙ্গাইল পৌরসভা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছিল। ৮ মিটার প্রস্থ ও ৪০ মিটার দীর্ঘ সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

সাময়িক বরখাস্তের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নির্মাণাধীন সেতুর ঢালাই কাজের পূর্বে সেন্টারিং ও সাটারিং এর সময় ঠিকাদার ড্রয়িং ও ডিজাইন অনুসরণ না করে বল্লি ও বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করেন। এ ব্যাপারে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ব্যক্তিরা শুধু চিঠির মাধ্যমে তাদের নিষেধ করেন। তারা ঢালাইয়ের কাজ বন্ধ করার কোনো ব্যবস্থা নেননি। বরং ঢালাইয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন তারা। এটিকে দায়িত্বে চরম অবহেলা প্রদর্শন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে জানানো হয়, সেতুটি নির্মাণের ক্ষেত্রে ডিজাইন ও প্রাক্কলন যথাযথভাবে অনুসরণ না করে গাছের বল্লি ও বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করায় ঢালাইয়ের ৩১তম দিনে দেবে যায়। এ কারণে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্রিকস অ্যান্ড বিল্ডিং লিমিটেড এবং দ্যা নির্মিতি কে (জেভি) দায়ী। এতে ওই দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এদিকে পৌরসভার প্রকৌশলীদের সঙ্গে ঠিকাদার পক্ষের স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজন অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং সেতু নির্মাণকাজে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে জেনেও কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া, কাজের অগ্রগতির তুলনায় অতিরিক্ত বিল প্রদান করায় মেয়র এস এম সিরাজুল হককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ১০ কার্য দিবসের মধ্যে নোটিশের জবাব তাকে দিতে বলা হয়েছে।

তিন প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত এবং কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া প্রসঙ্গে মেয়র এস এম সিরাজুল হক আলমগীর বলেন, মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত চিঠি পেয়েছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই চিঠির জবাব দেওয়া হবে।