নির্বাচন কমিশন ‘নিথর, লক্ষ্যভ্রষ্ট, বিপথগামী’

ঢাকা: ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা ও ২২ জনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ দাবি করেছে বিএনপি।
বৃহস্পতিবার সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ দাবি জানান।
তিনি বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার পর থেকে ২২ মার্চ প্রথম ধাপে দেশব্যাপী ৭১২টি ইউপি নির্বাচনের পূর্বাপর সংঘাত, সংঘর্ষ, সহিংসতায় পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির গুলিবর্ষণ এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পৈশাচিক হামলা চালিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ২২ জন মানুষকে হত্যা করেছে। নিহতদের মধ্যে তিন জন প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীও রয়েছেন।’
রিজভী বলেন, নির্বাচনের দিন সহ আগের দিন ও পরের দিন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রায় ১২ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তবাদী দল-বিএনপির পক্ষ থেকে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, এখনো নির্বাচনী সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। মানুষের বাড়িঘরে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা অগ্নিসংযোগসহ হামলা-লুটপাট, নির্যাতন ও তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছে। নির্বাচনী এলাকাগুলোতে এক ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে।
রিজভী বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনের এধরনের কথাবার্তায় মনে হয়েছে তিনি মানসিক অস্থিরতায় ভুগছেন।

বিএনপির ১৭ নেতার গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, সরকারের প্ররোচনায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি মিথ্যা মামলায় বুধবার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু, বিএনপি’র স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু এবং যুবদল সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নিরব সহ ১৭ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

রিজভী বলেন, সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদে সুষ্পষ্টভাবে লেখা আছে, “নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হইবে।” নির্বাচনকে শান্তিপুর্ণ ও সুষ্ঠু করার জন্য নির্বাচন কমিশন যখনই সরকারের সহায়তা চাইবে সরকার তা দিতে বাধ্য থাকবে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের এ কথা সরকার না মানে তাহলে অবশ্যই সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। নির্বাচন কমিশনের সেই মূহুর্তে উচিত নিজস্ব শক্তি প্রয়োগ করার। আর সেই শক্তি প্রয়োগে সরকার যদি রাষ্ট্রশক্তি ব্যবহার করে বাধা দান করে তাহলে নির্বাচন কমিশন দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তা অবহিত করে সরকারের সংবিধান লঙ্ঘনের কথা উল্লেখ করে পদত্যাগ করা উচিৎ। কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিজেই বলেছেন-রাষ্ট্রযন্ত্র সহযোগিতা করছে না। সুতরাং সেই ক্ষেত্রে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিজস্ব শক্তি প্রয়োগে যাবতীয় ব্যবস্থা নিতে পারতেন।

রিজভী বলেন, সংবিধান লঙ্ঘনের জন্য সরকারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করতে পারতেন। কিন্তু তিনি সেটি না করে অনুগত হয়ে প্রভূর মনোবাঞ্ছাই পূরণ করলেন। এই সরকার যেমন বেআইনি, ভোটারবিহীন জবরদখলকারী সরকার তেমনি এই নির্বাচন কমিশনও এখন একটি বেআইনি প্রতিষ্ঠানে হিসেবে পরিণতি হয়েছে।

বহুল আলোচিত তনু হত্যা প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত ২১ মার্চ যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ইউনিয়ন ছাত্রদল সহ-সভাপতি তনুকে কুপিয়ে নৃশংস কায়দায় হত্যা করেছে আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। আমি অবিলম্বে তনুকে হত্যাকারী চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে কঠিন শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছি। আমি নিহত তনুর বিদ্রোহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি জানাচ্ছি গভীর সমবেদনা।’