নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালের ৩ বিভাগে নেই সিনিয়র কনসালটেন্ট

নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা: মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের একমাত্র ভরসা নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল। এটি ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল নামেও পরিচিত। প্রতিদিনই এ হাসপাতালে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারো মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন। তবে ছয় মাস ধরে শিশু, গাইনি এবং ইএনটি (নাক, কান ও গলা) বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্টের পদ শূন্য রয়েছে।

বর্তমানে এসব বিভাগে কাজ চলছে জুনিয়র রেজিস্টার্ড চিকিৎসক দিয়ে। প্রতিদিন কয়েক হাজার রোগী চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে গুরুতর রোগীদের বাধ্য হয়েই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হচ্ছে। এছাড়া সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা বঞ্চিত হয়ে দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন অনেকেই।

হাসপাতাল সূত্র বলছে, শিশু বিভাগে মাসে গড়ে চার থেকে সাড়ে ৪ হাজার রোগী সেবা নিতে আসেন। গাইনি বিভাগে মাসে ৪ হাজারের মত রোগী আসেন। নাক, কান, গলা বিভাগেও সংখ্যাটা কম নয়। আড়াই থেকে ৩ হাজারের মত রোগী আসে। এ হিসেবে প্রতিমাসে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বিভাগে সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন ১১ হাজার রোগী। গত ছয় মাসে সেবা বঞ্চিত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৬ হাজার জনে। এ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।

দুদিন আগে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু লাবিবাকে (৪ মাস) হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন বাবা সোহেল হোসেন। শহরের পুরাতন জিমখানা এলাকায় তার বসবাস। তিনি বলেন, হাসপাতালের পরিবেশটা ভালো। মেয়ের চিকিৎসা যা পাচ্ছি, তাতে আমি খুশি। তবে এখানে কোনো শিশু বিশেষজ্ঞ নেই, মেডিকেল চিকিৎসকরা সেবা দিচ্ছেন বলে জেনেছি।

হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি হতে এসেছিলেন বক্তাবলীর হারুন অর রশিদের গর্ভবতী স্ত্রী মিতু আক্তার। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় তাকে খানপুর হাসপাতালে চলে যেতে হয়।

কয়েকজন সিনিয়র স্টাফ নার্সদের সঙ্গে কথা জানা যায়, হাসপাতালটিতে একজন শিশু কনসালট্যান্ট খুব প্রয়োজন। এখন মেডিকেল কর্মকর্তা শিশুদের দেখাশোনা করছেন। জরুরি মুহূর্তে জরুরি বিভাগ থেকে পরামর্শে আবার কখনো কখনো মোবাইল ফোনে পরামর্শ নিয়ে শিশুদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। এর আগে যখন শিশু বিশেষজ্ঞ ছিলেন, তখন অনেক রোগী ছিল। তিনি বদলি হওয়ার পর থেকে শিশু রোগীদের দেখার একটু সমস্যা হচ্ছে।

শহরের আমলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা জামির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের দৈন্যদশা। এটা দেখার কোনো লোক নেই। রাজনৈতিক নেতারা, সংসদ সদস্যরা হাসপাতালটি নিয়ে চিন্তা করেন না। জনগুরুত্বপূর্ণ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে কোনো শিশু বিশেষজ্ঞ নেই। দূর-দূরান্ত থেকে জরুরি মুহূর্তে সেবা নিতে এলে চিকিৎসক নেই। এ হাসপাতালে যে হাজার হাজার গরিব রোগী আসে, শিশু আসে এদের ডাক্তাররা দেখেন না, এদের ব্যবসা ক্লিনিক নিয়ে। আমি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে হাসপাতালটির দিকে নজর দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মো. ডা. ফরহাদ জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের সিনিয়র তিনজন কনসালট্যান্ট নেই আরকি। পাঁচ থেকে ছয় মাস ধরে শিশু, গাইনি ও ইএনটি বিভাগে সিনিয়র কনসালটেন্ট পদগুলো খালি রয়েছে। আমরা চেয়েছি, হয়তো কোনো কারণে পোস্টিং দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যে পদের যে লোক তিনি না থাকলে কাকে দেবে।

অন্য অব্যবস্থাপনার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের এখানে কোনো সমস্যা নেই। আমাদের পানির কোনো সমস্যা নেই। আমাদের এখানে বিদ্যুৎ তেমন যায় না। মাঝখানে কিছুদিন সমস্যা ছিল তখন একটি লাইন ছিল। আমরা এখন ডাবল লাইন ব্যবহার করছি। যার কারণে বিদ্যুতেরও কোনো সমস্যা নেই।

সিভিল সার্জন ডা. এ এফ এম মুশিউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, সিনিয়র কনসালট্যান্ট বদলি হয়ে যাওয়ার কারণে বর্তমানে এসব পদগুলো খালি রয়েছে। আমরা লোকবল চেয়েছি, কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যেহেতু সিনিয়র কনসালট্যান্ট প্রয়োজন এখানে সিনিয়র ছাড়া অন্যজনকে দেওয়া যায় না।

তিনি আরও বলেন, আমাদের কাজ চলমান রয়েছে। প্রতিদিনই অপারেশন হচ্ছে। কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে মাথার ওপর সিনিয়র কনসালট্যান্ট থাকলে বড় অপারেশনগুলো করা যেত। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। হয়তো নভেম্বরের মধ্যে পোস্টিং হয়ে যাবে।