নাটোরে এবারও রসুনের বাম্পার ফলন

নাটোরে এবারও রসুনের বাম্পার ফলন

নাটোর সংবাদদাতা: নাটোরে এবারও রসুনের বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি মৌসুমে প্রায় সাড়ে ২১ হাজার হেক্টর জমিতে এক লাখ ৭৮ হাজার ৮৫ টন রসুন পাওয়া গেছে। জমি থেকে কৃষকদের রসুন সংগ্রহ শেষে বাড়ির আঙিনায় গায়ের বধূরা ব্যস্ত সময় পার করছেন রসুন প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ কাজে।

চলতি মৌসুমের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশের ১৪টি কৃষি অঞ্চলের ৬৪ জেলায় রসুনের আবাদী জমির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৮ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে সাড়ে ২১ হাজার হেক্টর অর্থাৎ সর্বাধিক আবাদী জমি নাটোর জেলায়। দেশের রসুনের আবাদী জমির ২৫ ভাগই নাটোর জেলায়।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি রবি মৌসুমে নাটোর জেলায় রসুন চাষ হয়েছে ২১ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমি। কৃষি বিভাগের প্রাপ্ত তথ্যে এবার রসুনের উৎপাদন ১ লক্ষ ৭৮ হাজার ৮৫ টন। অর্থাৎ বিঘাপ্রতি ফলন সাড়ে ২৭ মণ।

নাটোরে উৎপাদিত রসুনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- বিনা চাষে রসুন উৎপাদন। প্রচলিত পদ্ধতিতে জমি চাষ করে রসুন লাগানো হয়। নাটোরে রসুনের আবাদী জমির প্রায় ৮০ ভাগই বিনা চাষের রসুন। ১৯৯৪-৯৫ সালে জেলার সীমান্তবর্তী বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর উপজেলার কৃষকরা স্বপ্রণোদিত হয়ে বিনা চাষে রসুন আবাদ করেন। গুরুদাসপুর উপজেলার কাছিকাটা এলাকার কৃষক জেহের আলী কার্তিক মাসে বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর জমিতে রসুনের কোয়া বুনে বিনা চাষে রসুন উৎপাদনের প্রচলন করেন।
বড়াইগ্রাম উপজেলার তিরাইল গ্রামের রসুন চাষী ইকবাল হোসেন চলতি মৌসুমে ১৬ বিঘা জমিতে রসুন আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, মৌসুমের শুরুতে অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করায় রসুন বীজের অঙ্কুরোদগম ভাল হয়েছিল। বিঘাপ্রতি গড়ে ২৬ মণ ফলন পেয়েছেন তিনি। আহমদপুর এলাকার রুহুল আমিন বিঘায় ফলন পেয়েছেন ৩২ মণ। গুরুদাসপুর উপজেলার সিধুলি গ্রামের খলিলুর রহমানের বিঘায় ফলন ২৭ মণ।

বড়াইগ্রাম উপজেলা কৃষি অফিসার ইকবাল আহমেদ রসুনের গড় ফলনে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কিছু ক্ষেত্রে রসুনের উৎপাদন কম হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, একই জমিতে বার বার রসুন চাষ এবং মাটিতে জৈব সারের ঘাটতির কারণে ক্ষেত্র বিশেষে এমন হতে পারে।

গুরুদাসপুর উপজেলার কৃষি অফিসার আব্দুল করিম জানান, শুধু বিনা হালে রসুন চাষই নয়, রসুনের জমিতে সাথী ফসল হিসেবে তরমুজ ও বাঙ্গী চাষের উদ্ভাবনও এই এলাকা থেকেই হয়েছে।

বড়াইগ্রাম উপজেলার সরকার বাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খাদেমুল ইসলাম বলেন, ৯০-এর দশকে উদ্ভাবনের পর থেকে রসুন চাষের মাধ্যমে এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। এলাকার কাঁচাবাড়ীগুলো পাঁকা হয়েছে। বাড়িতে বাড়িতে শিক্ষার্থীরা ব্যয় নির্বাহ করে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন।