দেশে শিক্ষিত বেকার বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে দিনকে দিন শিক্ষিত বেকার বাড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেও চাকরি মিলছে না। সংকুচিত হচ্ছে কর্মক্ষেত্র। এ বিষয়ে বিডিজবসের প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম মাশরুর বলেন, শিক্ষকেরা চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের তৈরী করতে পারছেন না। যার কারণেই শিক্ষিত বেকার বাড়ছে।

চাকরির বাজারের এখনকার ট্রেন্ডস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চাকরির বাজার গত ৩/৪ বছর বলতে গেলে একটু খারাপই। সুনির্দিষ্ট করে যদি বলি বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ থেকে যারা গ্র্যাজুয়েশন করে বের হচ্ছে তাদের চাকরির ক্ষেত্র খুব কম তৈরী হচ্ছে। এখন প্রতি বছর দেড় থেকে দুই লাখ গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছে। তাদের ৭০ থেকে ৮০ ভাগই কোন চাকরি পাচ্ছে না।

কোন ধরনের দক্ষতার চাকরি বেশি এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখনও টেকনিক্যাল স্কিলের চাকরি বেশি। জেনারেল স্কিলে চাকরি আসলে কম। আইটি বা ফ্যাক্টরি ম্যানেজমেন্ট লেভেলে এখনও কিছু চাকরি হচ্ছে।

চাকরির বাজারে কোন খাতে বেতন কাঠামো ভালো এ প্রশ্নে তিনি জানান, এখন টেকনিক্যাল স্কিলের বেতম কাঠামো তুলনামূলক ভালো। বিবিএ, এমবিএ যারা করছেন তাদের বেতন বেড়েছে। সাধারণভাবে প্রাইভেট সেক্টরে বেতন কাঠামো কমে গেছে।

বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারত্বের হার বেশি কেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন এর যথেষ্ট কারণ আছে। এর মধ্যে প্রধান কারণ হল, আগে এত বেশি গ্র্যাজুয়েট বের হতো না। গত ৫/১০ বছরে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহু ছাত্র বের হচ্ছে। চাকরির তুলনায় সাপ্লাই এখন বেড়ে গেছে। এখন এদের জন্যতো চাকরি তৈরী হচ্ছে না। এছাড়া গত ৩/৪ বছরে বেশ কিছু ইন্ডাস্ট্রি কিন্তু এ্যাফেকটেড। যেমন ধরেন তৈরি পোশাক খাত। ২০১৯ সালটা কিন্তু তৈরি পোশাকের জন্য খারাপ গেছে। এরপর ব্যাংকিং খাত একটা বড় বাজার ছিল। খেলাপি ঋণসহ নানা কারণে ব্যাংকে চাকরির জায়গা কমে গেছে। টেলিযোগাযোগ খাতে আগে চাকরির জায়গা ছিল। যেমন গ্রামঢুফোনে আগে ৫/৭ হাজার মানুষ কাজ করতেন। এখন তারা আউটসোর্সের মাধ্যমে অনেক কিছু করাচ্ছে। ফলে সেখানে এখন চাকরি আছে ২/৩ হাজারের।

স্কিল গ্যাপের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রিয়েলাইজ করছে না যে, তাদের পড়াশোনা চাকরির বাজারের সঙ্গে যাচ্ছে না। তাদের মেইন ফোকাস হচ্ছে ডিগ্রি কাউকে ধরিয়ে দেওয়া। সে চাকরি পাচ্ছে কি পাচ্ছে না সেটা তারা দেখেন না। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়ান তারা ইন্ড্রাস্টির প্রয়োজন দেখেন না। ফলে তারা যে থিওরি পড়াচ্ছেন সেটা বাস্তবে গিয়ে কাজে লাগছে না। পাশ হচ্ছে, ডিগ্রিও পাচ্ছে কিন্তু এর মূল্য থাকছে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষে যারা উদ্যোক্তা হতে চাচ্ছেন তাদের সমস্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে অনেকে উদ্যোক্তা হয়েছেন বা হচ্ছেন। এটা নতুন ট্রেন্ড। বিদেশে উদ্যোক্তাদের অর্থ সংস্থানের একটা ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু এখানে সরকারি বা বেসরকারি খাত থেকে সেভাবে তারা অর্থ পান না। পাশাপাশি স্বল্প পরিসরে কেউ কিছু শুরু করলে সেটা থেকে রিটার্ন আসতে কয়েক বছর লেগে যায়। সেই পর্যন্ত এই উদ্যোক্তাদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। যারা একটু বেশি টাকা নিয়ে শুরু করেন তারা হয়ত টিকে যাচ্ছে।