দেশীয় আনারস থেকে তৈরী হচ্ছে চিপস

দেশীয় আনারস থেকে তৈরী হচ্ছে চিপস

নিজস্ব প্রতিবেদক: মৌসুমি ফল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের গর্বিত তালিকায় নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ। দেশীয় মৌসুমি ফলের মধ্যে পাহাড়ের হানিকুইন জাতের সুমিষ্ট জাতের আনারস অন্যতম। সুস্বাদু এই আনারস গ্রীষ্ম মৌসুমে পরিমাণে এতটাই বেশি উৎপাদিত হতো যে এর চাহিদাই কমে যেত। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ধীরে ধীরে সেই পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গেছে।

আনারস চাষিদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, দ্রুত এই পচনশীল ফল কোনও উপায়ে সংরক্ষণ বা রূপান্তরিত করে সারা বছরই বাজারজাত করা যায় কি না, তার পথ বের করা। চাষিদের এতদিনের দাবি এবার একটু ভিন্নভাবে পূরণ হতে চলেছে।
রাঙামাটিতে প্রতি বছর আনারসের ব্যাপক উৎপাদন হলেও চাষিরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সংরক্ষণের কোনও ব্যবস্থা না থাকায় আনারস মৌসুমে ফলের দাম পান না চাষিরা। এই পরিস্থিতি নিরসনে পাহাড়ের উৎপাদিত আনারস প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে চিপস উৎপাদন প্রকল্প হাতে নিয়েছে কৃষি বিভাগ। ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে আনারস দিয়ে রাসায়নিকমুক্ত চিপস তৈরি শুরু হয়েছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত আনারসের ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠা এই কারখানাটি স্বপ্ন দেখাচ্ছে ফল চাষিসহ স্থানীয় উদ্যোক্তাদের।

রাঙামাটি নানিয়ারচর হর্টিকালচার সেন্টারের সিনিয়র উদ্যানতত্ত্ববিদ (উপ-পরিচালক) শফিকুল ইসলাম বলেন, এই এলাকায় প্রচুর আনারস উৎপাদিত হয়। এই উৎপাদনের বিষয়টি মাথায় রেখে কৃষি বিভাগ ২০১৩-১৪ সালে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত আনারস দিয়ে চিপস তৈরির উদ্যোগ নেয়। নানিয়ারচরে গড়ে উঠা চিপস কারখানাটির কাজ শেষ হয় গত বছর। আনারসের ফ্লেভারে সম্পূর্ণ রাসায়নিকমুক্ত এই চিপসটি স্থানীয় চাষি ও উদ্যোক্তাদের মধ্যেও সাড়া ফেলেছে। এটি পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে। আগামী মৌসুমে এই আনারসের চিপস বাজারজাত করা সম্ভব হবে আশা করছি।

নানিয়ারচর বগাছড়ির স্থানীয় আনারস চাষি হোসেন আলী বলেন, মৌসুমে প্রচুর আনারস উৎপাদন হওয়ায় চাষিরা ঠিকমতো দামও পান না অনেক সময়। তাই কারখানাটি পুরো দমে চালু হলে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাবেন আশা করি। আরেক চাষি আব্দুল মোতালেব কারখানাটি দ্রুত চালুর দাবি জানিয়ে বলেন, এই এলাকার আনারস চাষিদের বহুদিনের দাবি ছিল আনারস প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে চিপস উৎপাদনের। কিন্তু এখন তাদের কী পরিমাণ অনারস দরকার এবং কী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কৃষদের কাছ থেকে তা সংগ্রহ করা হবে তা যেন কৃষদের জানিয়ে দেওয়া হয়।

রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর প্রেসিডেন্ট বেলায়েত হোসেন বলেন, পার্বত্য এলাকায় মৌসুমী ফলের ব্যাপক উৎপাদন হলেও প্রক্রিয়াজাত করতে না পারায় অনেক সময় কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। আমরা দীর্ঘদিন ধরে সরকারের কাছে সুযোগ চাচ্ছিলাম এসব ফল থেকে প্রক্রিয়াজাত খাবার উৎপাদনের। ফলের ওপর নির্ভর করে কেউ স্থানীয়ভাবে কারখানা তৈরি করলেও চেম্বার তাদের সহযোগিতা করবে।’

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক জানায়, রাঙামাটির নানিয়ারচর সংলগ্ন পাহাড়গুলো হানিকুইন জাতের আনারনের জন্য বিখ্যাত। দেশে উৎপাদিত এ জাতের আনারসের সিংহভাগ এখানেই চাষ করা হয়। জেলায় প্রতি বছর ৬০ হাজার মেট্রিক টন আনারস উৎপাদন হয়। আর পাহাড়ের উৎপাদিত আনারস প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে চিপস উৎপাদনের ফলে স্থানীয় চাষিরা উপকৃত হবেন। পাহাড়ের জন্য এটি একটি মাইলফলক। এই চিপস বাজারে জনপ্রিয়তা পেলে বিদেশেও রফতানি করা সম্ভব হবে।