‘দেউলিয়া আইন’-এর সংশোধনীর খসড়া চূড়ান্ত

৩ জনের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা

নিউজ ডেস্ক: খেলাপি ঋণ আদায় বাড়াতে ‘অর্থঋণ আদালত আইন-২০০৩’ ও ‘দেউলিয়া আইন’-এর সংশোধনীর খসড়া চূড়ান্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এখন সংশোধনীর এই খসড়ার ওপর মতামতের জন্য তা অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। এরপর এটি ভেটিং’র জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ-এর মতে, শুধু ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন’ পরিবর্তন করে খেলাপি ঋণ আদায় বাড়ানো সম্ভব নয়। তাই ‘অর্থঋণ আদালত আইন-২০০৩’ সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে। এই আইনে খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত মামলার জন্য পৃথক আদালত প্রতিষ্ঠা এবং মামলার বিভিন্ন বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে দেউলিয়া আইনের কিছু সংশোধনীর সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত: ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা ও খেলাপি ঋণ আদায় বাড়াতে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই এ বিষয়ে জোরালো পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ প্রেক্ষিতে খেলাপি ঋণ আদায় বাড়ানোর কৌশল নির্ধারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন যুগ্ম-সচিবের নেতৃত্বে একটি টীম কাজ করছে।
জানা যায়, অর্থঋণ আদালত আইনের ৪৭ অনুচ্ছেদের ‘আপীল ও রিভিশন’-এর বিষয়ে কয়েকটি সংশোধনী আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই আইনের ৪১(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘মামলার কোন পক্ষ, কোন অর্থ ঋণ আদালতের আদেশ বা ডিক্রী দ্বারা সংক্ষুব্ধ হইলে, যদি ডিক্রীকৃত টাকার পরিমাণ ৫০ (পঞ্চাশ) লাখ টাকা অপেক্ষা অধিক হয়, তাহলে উপ-ধারা (২) এর বিধান সাপেক্ষে, ৩৪ [পরবর্তী ৬০ (ষাট) দিবসের] মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগে এবং যদি ডিক্রিকৃত টাকার পরিমাণ ৫০ (পঞ্চাশ) লাখ টাকা অথবা তদাপেক্ষা কম হয়, ৩৫ [তাহা হইলে পরবর্তী ৩০ (ত্রিশ) দিবসের মধ্যে জেলাজজ আদালতে আপীল করিতে পারিবেন।
উল্লেখিত ৪১(১) ধারা, একই অনুচ্ছেদের ধারা-২, অনুচ্ছেদ ৩-এর উপ-ধারা (২) ও ধারা ৬ সংশোধন করা হতে পারে বলে জানা যায়।
বিদ্যমান ধারা (৬) অনুযায়ী, ‘আপিল আদালত, আপিল গৃহীত হইবার পরবর্তী ৯০ (নব্বই) দিবসের মধ্যে উহা নিষ্পত্তি করিবে, এবং ৯০ (নব্বই) দিবসের মধ্যে আপীলটি নিষ্পত্তি করিতে ব্যর্থ হইলে, আদালত, লিখিতভাবে কারণ উল্লেখপূর্বক, উক্ত সময়সীমা অনধিক আরো ৩০ (ত্রিশ) দিবস বর্ধিত করিতে পারিবে ?’
প্রসঙ্গত: ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা ও আদায় বাড়াতে গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। কিন্তু এগুলো এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। এগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ ১০০ কোটি টাকা বা এর অধিক খেলাপী ঋণ কেসগুলো তদারকির জন্য প্রতিটি ব্যাংকে একটি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি কেন্দ্রীয় তদারকি সেল গঠন; বড় ঋণ খেলাপীদের হাল নাগাদ তালিকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশসহ নোটিশ বোর্ড কিংবা দৃশ্যমান স্থানে ঝুলিয়ে রাখা; উচ্চ আদালতে ব্যাংকের ঋণ সংশ্লিষ্ট রীট মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে পৃথক বেঞ্চ গঠন ইত্যাদি। অন্যান্যের মধ্যে খেলাপী ঋণ আদায়ে ঢালাওভাবে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ না করে ব্যাংকগুলোকে সুনির্দিষ্টভাবে শাখার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সেই মোতাবেক ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং প্রতি তিন মাস পরপর বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এছাড়া খেলাপী ঋণ আদায়ে সফলতার জন্য ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বিশেষ প্রণোদনা প্রদান এবং ক্ষেত্র বিশেষে ব্যর্থতার জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রবর্তন এবং এটি তাদের এসিআর-এ প্রতিফলনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বলা হয়।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ-এর মতে, দীর্ঘকাল ধরে যারা ঋণ খেলাপীর তালিকায় আছেন, এদের অধিকাংশই সমাজে প্রতিষ্ঠিত ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। এমতাবস্থায় ঋণ খেলাপীর তালিকা দৃশ্যমান হলে নিজের পরিচিতি ঢেকে রাখতে কিংবা বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে অনেকেই খেলাপী ঋণ পরিশোধে আগ্রহী হবেন। অন্যদিকে মামলা কিংবা উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে ব্যাংক খাতের হাজার হাজার কোটি টাকা খেলাপী ঋণ আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। ঋণ পরিশোধ প্রক্রিয়া বিলম্বিত করতে ঋণ খেলাপীরা প্রায়শই এ ধরনের সুযোগ নিতে চেষ্টা করেন। এমতাবস্থায় উচ্চ আদালতে ব্যাংকের ঋণ সংশ্লিষ্ট রীট মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে পৃথক বেঞ্চ গঠন করা যেতে পারে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকেই এ উদ্যোগ নেয়া হবে।