‘দিল্লির দাঙ্গায় মুসলিমবিরোধী ভূমিকায় ছিল পুলিশ’

‘দিল্লির দাঙ্গায় মুসলিমবিরোধী ভূমিকায় ছিল পুলিশ’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের কর্তৃক সংগঠিত মুসলিমবিরোধী দাঙ্গায় মুসলিমদের বাড়ি-ঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ এবং হত্যাকা-ে দেশটির পুলিশের সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। দিল্লির মুসলিমবিরোধী এই দাঙ্গায় ‘পুলিশ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন’ করেছে বলে অভিযোগ করেছে সংস্থাটি।

ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ থেকে শুরু হওয়া দিল্লির ওই মুসলিমবিরোধী দাঙ্গায় বহু মুসলিম শহীদ হন।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, প্রতিবাদকারীদের মারধর, আটককৃতদের নির্যাতন এবং হিন্দুদের সঙ্গে মুসলিমবিরোধী দাঙ্গায় সক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট ছিল পুলিশ। এই দাঙ্গায় মুসলিমরা ব্যাপক ভোগান্তি ও নিপীড়নের শিকার হয়েছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে দিল্লির মুসলিমবিরোধী দাঙ্গায় পুলিশের সংশ্লিষ্টতা ও নিষ্ঠুর অভিযান নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম। অ্যামনেস্টির তদন্তে বিবিসির প্রতিবেদনের উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও ওই সময় দাঙ্গায় পুলিশ সদস্যদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেছিল দিল্লি পুলিশ।

তদন্ত প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি বলছে, দাঙ্গার মূল টার্গেট ছিলেন মুসলিমরা। দাঙ্গা স্বতঃস্ফূর্তভাবে হয়েছিল বলে মনে হয় না। কারণ এতে হতাহতের সংখ্যা হিন্দুদের তুলনায় তিনগুণ বেশি হয়েছে মুসলিমদের। এছাড়াও মুসলিমদের ব্যবসা এবং সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন গত বছর পার্লামেন্টে পাস হওয়ার পর দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ-সহিংসতা শুরু হয়। সমালোচকরা নাগরিকত্ব সংশোধনী এই আইনকে মুসলিমবিরোধী বলে আখ্যা দিয়ে দেশটির সরকারের সমালোচনা করেছেন। দেশজুড়ে নাগরিকত্ব আইনবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হলেও দিল্লিতে তা মুসলিমবিরোধী দাঙ্গায় রূপ নেয়। আইনটির পক্ষে এবং বিপক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাতের মাধ্যমে দ্রুত তা মুসলিমবিরোধী দাঙ্গায় পরিণত হয়। প্রায় তিন দিন ধরে চলা তা-বে দিল্লিতে মুসলিমদের বাড়ি-ঘর দোকানপাট ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও মারধরের ঘটনা ঘটে।

ওই সময় ধারণকৃত সহিংসতার ফরেনসিক বিশ্লেষণে অ্যামনেস্টি দেখতে পায়, দাঙ্গার সমর্থনে মুসলিমদের বাড়ি-ঘর ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও মুসলিমদের মারধরে উত্তেজিত উগ্র হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীদের সহায়তা করেছে পুলিশ। মুসলিমদের বিরুদ্ধে এ ধরনের সহিংসতা চললেও নীরব ভূমিকা পালন করেছে তারা।

সেই সময় মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বলা হয়, দিল্লির দাঙ্গায় অন্তত তিনটি মসজিদে অগ্নিসংযোগ করেছে পুলিশ। সহিংসতা বন্ধের চেষ্টা না করে উন্মত্ত জনতার সঙ্গে যোগ দিয়ে জয় শ্রী রাম বলে স্লোগান দিচ্ছিল পুলিশ সদস্যরা। একই সঙ্গে এলোপাতাড়ি গুলি চালায় তারা।

দিল্লির উপকণ্ঠে ফারুকিয়া নামের একটি ছোট মসজিদের দেখাশুনা করেন মোহাম্মদ আব্বাস। তিনি ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছিলেন, দাঙ্গার দ্বিতীয় দিনে নামাজের পর একদল পুলিশ কর্মকর্তা মসজিদের ইমাম এবং তার ওপর হামলা চালায়। তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যরা তাকে দেশদ্রোহী বলে গালাগালি দিচ্ছিল। তার চোখের সামনেই ওই পুলিশ সদস্যরা মসজিদ ভাংচুর করেছে এবং আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বলে জানান তিনি। এরপরই সেখান থেকে মোহাম্মদ আব্বাসকে একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। সে সময় তার সারা শরীর রক্তাক্ত ছিল। তিনি বলেন, তারা আমাকে নির্দয়ভাবে পিটিয়েছে। আমার হাত ভেঙে গেছে।