তিস্তা-ধরলার বুকে একাধিক চর, বেড়েছে চাষাবাদ

লালমনিরহাট সংবাদদাতা: লালমনিরহাটের বুক ভেদ করে বয়ে চলা তিস্তা ও ধরলা নদীর বুকে জেগে উঠেছে একাধিক চর। সেই চরে গড়ে উঠেছে বসতি। চলছে নানান জাতের ফসলের চাষাবাদ। তিস্তার বুকে সবচেয়ে বেশি চর জেগে ওঠেছে জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায়। অপরদিকে ধরলার বুকে সবচেয়ে বেশি চর জেগে ওঠেছে লালমনিরহাট সদর উপজেলায়। এসব চরের বুকে মানুষের বসতির পাশাপাশি নানান জাতের ফসল চাষ শুরু হয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা নদীতে ছোট-বড় প্রায় ৪৬টি চর জেগে উঠেছে। এসব চরের মধ্যে ১৫টি চরে মানুষের বসতি গড়ে উঠেছে।

অপরদিকে ধরলা নদীতে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ও কুলাঘাটে পাঁচটি চর জেগে উঠেছে। এরমধ্যে দুটি চরে জনবসতি গড়ে উঠেছে। তাছাড়া রতœাই ও সানিয়াজান নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় এই দুই নদীর বুকে বোরো ধান চাষের ধুম পড়েছে। বোরো ধান চাষের ধুম পড়েছে ধরলা নদীর বুকেও।

পাটগ্রাম উপজেলার পৌর এলাকার নিউপূর্বপাড়া এলাকায় ধরলা নদীর বুকে জেগে ওঠা চরের প্রায় এক একর জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন স্থানীয় কৃষক জবেদ আলী। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর এই সময়ে ধরলায় পানির স্রোত থাকে না। জেগে ওঠে চরগুলো। এসব চরে অনেকেই বোরো ধান চাষ করে। বর্ষার পানি আসার আগেই ধান কেটে নেওয়া হয়। এতে কোনও সমস্যা হয় না।’

লালমনিরহাট সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, ‘সদর উপজেলার তিস্তা নদীর বুকে ৬টি চর জেগে উঠেছে। এসব চরে ভুট্টা, চিনা বাদাম, কলা, মরিচ, বিভিন্ন ধরনের সবজি, কুমড়া, শসা, তরমুজ ও ধানসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষাবাদ হচ্ছে। এসব চরের মধ্যে কোনওটিতে জনবসতিও গড়ে উঠেছে। ৬টি চরে মোট ৩ হাজার ৪শ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়ে থাকে। এসব চরে দুই ফসলি এবং এক ফসলি ফসল চাষ হয়। সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শও দিয়ে থাকেন।’

পাটগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল গাফ্ফার বলেন, দহগ্রামে প্রায় দেড়শ হেক্টর তিস্তার চরে চাষি জমি রয়েছে। এছাড়া ধরলা, সানিয়াজান ও সিঙ্গিমারী নদীর বুকে বোরো ধান, তামাক ও ভুট্টা চাষ হয়ে থাকে।

হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘হাতীবান্ধা উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ৬ হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে দুই ও এক ফসলি ফসল চাষ হয়ে থাকে। সেখানে আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে আধুনিক কৃষি তথ্য সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। এবার ভুট্টা ও সবজির বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।’

আদিতমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলীনুর রহমান বলেন, মহিষখোচা ইউনিয়নে তিস্তার বুকে ৭শ হেক্টর চর জেগে উঠেছে। এরমধ্যে আড়াইশ হেক্টর জমিতে ভুট্টাসহ বিভিন্ন সবজি চাষ হয়েছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, কালীগঞ্জের তিনটি ইউনিয়নে ১ হাজার ৮শ হেক্টর জমি তিস্তার বুকে চর জেগে উঠেছে। এসব চরের মধ্যে বসতিও গড়ে উঠেছে। ১ হাজার ৭শ হেক্টর জমিতে ধান, ভুট্টা, তামাক, চিনাবাদাম, সবজিসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে।

হাতীবান্ধা উপজেলার পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের তিস্তা নদীর বুকে জেগে ওঠা পারুলিয়া চরের বাসিন্দা আব্দুর রশীদ বলেন, ‘তিস্তা নদীর পানি কমে যাওয়ায় আমাদের পরিবারের প্রায় ৯ একরেরও বেশি চরের জমিতে ফসল চাষ হয়েছে। এরমধ্যে ভুট্টা, মরিচ, তামাক, বাদাম ও সবজি চাষ হয়েছে। কিন্তু সেখানে চলাচলের জন্য কোনও রাস্তা, বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। এতে চরম দুর্ভোগে উৎপাদিত ফসল নিয়ে মুল ভুখ- আসতে হয়।’

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ডিডি) বিধু ভূষণ রায় জানায়, ধরলা, সানিয়াজান, রতনাই ও তিস্তা নদীর বুকে জেগে ওঠা চরের জমির সঠিক পরিমাণ আমাদের নিকট নেই। তবে জেগে ওঠা চরের জমিতে মানুষের বসতি আছে এবং নানান জাতের ফসলও চাষ হয়ে থাকে। এরমধ্যে জেলার পাঁচটি উপজেলায় মোট সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর চরের জমিতে প্রতিবছর ভুট্টা, বাদাম, রসুন, পিঁয়াজ, মরিচ, কুমড়া, ধান ও সবজিসহ বিভিন্ন জাতীয় ফসল চাষ হয়ে থাকে। চমৎকার ফলনও পেয়ে থাকে কৃষকরা। কিন্তু সেখানে যোগাযোগের রাস্তা, যানবাহন ও বিদ্যুৎ সুবিধা নেই।’

সে আরও বলেছে, আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাবৃন্দ সংশ্লিষ্ট এলাকার আওতায় চরের জমিতে গিয়ে কৃষকদের মাঝেমধ্যে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকে। যদি নদী শাসনের মাধ্যমে চরের এসব ফসলি জমিতে পরিকল্পিত চাষাবাদ করার ব্যবস্থা করা যেত তাহলে লালমনিরহাট কৃষি অর্থনীতি আরও বেশি সমৃদ্ধ হয়ে উঠত। আমরা অনেক দিন থেকেই শুনছি লালমনিরহাটের বুক চিরে বয়ে যাওয়া নদী গুলোর বুকে জেগে ওঠা চরের জমিতে ফসলের জন্য নদী শাসন করা হবে। কিন্তু কবে হবে, তা আমরা জানি না।’