ওষুধ দিলে তো লাভ হয় না, আল্লাহ আমাদের বাঁচাচ্ছে -আদালত

হাইকোর্ট

ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা না কমায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। আদালত বলেছে, প্রতিদিনই নতুন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। ওষুধ দিলে তো লাভ হয় না। আল্লাহ আমাদের বাঁচাচ্ছে।’ বিচারক তারিক উল হাকিম ও বিচারক সোহরাওয়ারদীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব কথা বলে।

দুই সিটি করপোরেশনের কর্মীরা কখন কীভাবে কোন ওয়ার্ডে কী কাজ করছেন তা প্রতিবেদন আকারে আদালতকে জানাতে বলেছে হাইকোর্ট। এ ছাড়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কত, তা-ও প্রতিবেদন আকারে আদালতে জমা দিতে বলেছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি কী ধরনের পরিকল্পনা আছে, আজ তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। আগামী সোমবার প্রতিবেদন জমা দেয়ার এবং শুনানির নতুন দিন ঠিক করেছে আদালত।
শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাইনুল হাসান আদালতকে বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুই সিটি করপোরেশনকে টাকা দেওয়া হয়েছে।’তখন হাইকোর্ট এই আইন কর্মকর্তার কাছে জানতে চান, যে টাকা দেওয়া হয়েছে তা ঠিকমতো ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, তা দেখা হচ্ছে কি না?’

তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাইনুল জানান, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। উত্তর সিটি করপোরেশনকে ১ হাজার ৬২০ জন কর্মী এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে ২ হাজার ২৫০ জন কর্মী নিয়োগ দেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই তথ্য জানার পর আদালত এই আইন কর্মকর্তার কাছে জানতে চান, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কোনো মনিটরিং টিম (পর্যবেক্ষণ দল) করা হয়েছে কি না?’

তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে বলেন, হ্যাঁ, একটা মনিটরিং টিম করা হয়েছে।’আদালত তখন বলেন, মনিটরিং কী করছে? রিপোর্ট কোথায়?’
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাইনুল তখন আদালতকে জানান, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ওষুধ আনা হয়েছে। আদালত এই আইন কর্মকর্তার উদ্দেশে বলেন, তার মানে আপনারা স্বীকার করছেন, আগের ওষুধ অকার্যকর ছিল। আগের ওষুধ কখন থেকে কাজ করছে না, তা কবে জানলেন?’আদালতের এই প্রশ্নের সরাসরি কোন জবাব দেননি আইন কর্মকর্তা কাজী মাইনুল। আদালতকে তিনি জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন।

আদালত তখন বলে, আপনি অ্যাকটিভ হলে তো হবে না। মশা নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ দেওয়া হলো। তাঁরা কী কাজ করছে? সবাই রাজা বাদশা হয়ে গেছেন।’

মশা নিয়ন্ত্রণে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা প্রতিবেদন আকারে আদালতকে জানিয়েছে ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। মশা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা আদালতকে জানান প্রতিষ্ঠানটির একজন আইনজীবী। ১০ ধরনের অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরেন তিনি।
আদালত তখন এই আইনজীবীর উদ্দেশে বলে, ওষুধ এনেছেন কি না? নতুন জনবল কী কাজ করছে? কোন উন্নতি হয়েছে কি না?’এসব প্রশ্নের সরাসরি উত্তর পাননি আদালত। তখন আদালত ফের দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, ওষুধ মারার পর কার্যকর কী ফলাফল আসছে? আগের ওষুধে কি মশা মরছে। নাকি দক্ষিণের মশা উত্তরে যাচ্ছে। এটা টোটালি আপনাদের গাফিলতি। প্রতিদিনই নতুন করে মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে।’

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আইনজীবীর বক্তব্য শেষ হওয়ার পর উত্তর সিটি করপোরেশনের আইনজীবী তৌফিক ইনাম আদালতে বক্তব্য দেন। মশা নিয়ন্ত্রণে কী কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা প্রতিবেদন দিয়ে জানান এই আইনজীবী। আদালতকে তিনি বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। তবে আদালত উত্তর সিটি করপোরেশনের এই আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, ওষুধ দিয়ে তো কোনো লাভ হচ্ছে না। এই ওষুধ কী কাজ করছে?’তখন আইনজীবী তৌফিক এনাম আদালতকে জানান, সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমছে।
আদালত তখন বলে, উত্তর সিটি করপোরেশন তো আর সারা দেশে স্প্রে করছে না। ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমছে। এর কারণ প্রকৃতি।’
তখন উত্তর সিটি করপোরেশনের এই আইনজীবী আদালতকে জানান, ঢাকায়ও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশকৃত মশা মারার ওষুধ আনা হয়েছে।

আইনজীবীর কাছ থেকে এমন তথ্য জানার পর আদালত বলে, এই ওষুধ কি কাজ করছে?’উত্তর সিটি করপোরেশনের আইনজীবী আদালতকে বলেন, হ্যাঁ, এই ওষুধ কাজ করছে। ল্যাবরেটরির রিপোর্ট তা-ই বলছে।’

আদালত তখন বলে, এই ওষুধে কাজ হচ্ছে কি না, তা জানা যাবে হাসপাতালে গেলে। হাসপাতালে নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হলে বোঝা যাবে ওষুধ কাজ করছে না। উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় হাসপাতালের সংখ্যা কম। তার মানে এই নয় যে, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ডেঙ্গু রোগী বেশি।’ ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে আদালত বলে, আমরা এত কিছু দেখব না। হাসপাতালে নতুন ডেঙ্গু রোগী না এলে আমাদের কনসার্ন (উদ্বেগ) থাকবে না।’