ডিম বিক্রিতে খামারি আমিরুলের বছরে আয় ২০ লাখ টাকা

ডিম বিক্রিতে খামারি আমিরুলের বছরে আয় ২০ লাখ টাকা

কিশোরগঞ্জ সংবাদাদাতা: কিশোরগঞ্জ তাড়াইল উপজেলার তাড়াইল-সাচাইল ইউনিয়নের দড়িজাহাঙ্গীরপুর গ্রামের বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম। প্রায় ২৫ বছর আগে পরিবারের হাল ধরতে তার বাবা গড়ে তুলেছিলেন একটি ছোট হাঁসের খামার। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সেই খামারের আয় থেকেই পরিবারে সচ্ছলতা ফিরে আসে।

তার বাবা এখন বৃদ্ধ। সেই খামারটি এখনো টিকিয়ে রেখেছেন তার ছেলে আমিরুল ইসলাম। তার বাবা খামারটি শুরু করার প্রায় চার বছর পর আমিরুলের জন্ম হয়। পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যার মধ্যেও তার বাবা হাঁসের খামারটি বন্ধ করেননি।

বর্তমানে খামারের পুরো দায়িত্ব আমিরুলের কাঁধে। আর সেই দায়িত্বের ওপর ভর করে খামারটি নিয়ে অনেক স্বপ্ন বুনছেন তিনি। তার বাবার সময়ে শুধু হাঁস পালন ও বিক্রি করা হতো। সেখান থেকে যেমন আয় হতো, ব্যয়ও ছিল প্রচুর। কিন্তু আমিরুলের ভাবনাটা একটু ভিন্ন। তিনি হাঁস পালনে দুটি পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন। হাঁসের পাশাপাশি ডিম বিক্রি করা।
প্রথমে ৩০ টাকা দরে একদিন বয়সের ৩০০টি হাঁস নিয়ে যাত্রা শুরু করেন এই খামারি। এক পর্যায়ে অপেক্ষাকৃত বড় জাতের হাঁস কিনে ডিমের ব্যবসার দিকে নজর দেন। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে অপেক্ষাকৃত বড় জাতের যেসব হাঁসের বাচ্চা ফোটানো হয়, আশ্বিন মাসে সেগুলো ৫০০-৫২০ টাকায় কিনে এনে লালন-পালন করেন। কার্তিক মাস থেকে হাঁসের পাড়া ডিম বিক্রি শুরু হয়। বৈশাখ মাস পর্যন্ত ডিম বিক্রি করে প্রথম বছরেই ভালো লাভ করেন তিনি। এতে আর পেছনে তাকাতে হয়নি আমিরুলকে।

বৈশাখ মাসের পর হাঁসগুলো ডিম পাড়া ছাড়লে একটু কম দামে ৪০০-৪৫০ টাকা করে বিক্রি করেন। তাতেও বহু টাকা লাভ হয় তার। বর্তমানে ডিম বিক্রিতেই বছরে তার আয় প্রায় ২০ লাখ টাকা। পুরো খামারটি তার নিজস্ব জায়গার উপর তৈরি। খামারের ভেতরে একটি পুকুরও রয়েছে। যেখানে হাঁসগুলো আপন মনে সাঁতার কাটতে পারে। পুকুরটি ঘিরে চারপাশে বিভিন্ন ফলফলাদির গাছ ও হাঁসের নিরাপত্তায় নেট লাগানো হয়েছে।

প্রতিবেশী মর্তুজ আলী বলেন, বাবার দেখানো পথে হাঁটছেন আমিরুল। আর সেই পথেই তার সাফল্য দেখা দিয়েছে। অনেক বছর আগে আমাদের এলাকায় তার বাবাই প্রথম হাঁসের খামার গড়ে তোলেন। আর তাদের দেখানো পথে এলাকায় আরও ৫টি খামার গড়ে উঠেছে। তারাও আজ সফলতা পেয়েছেন। তবে এলাকার সবচেয়ে বড় খামারটি আমিরুলেরই।
বর্তমানে তার খামারে ৭০০টি হাঁস রয়েছে। এর মধ্যে প্রতিদিন ডিম পাড়ে ৫০০টি। প্রতি শতক ডিম ১১০০ টাকা (৪৪ টাকা প্রতি হালি) দরে খামার থেকেই কিনে নিচ্ছেন পাইকাররা। গড়ে প্রতিদিন ৫০০ ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৫০০ টাকায়। ওই ডিম বিক্রি থেকে তার প্রতি মাসে উপার্জন এখন ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। তিনি এখন স্বাবলম্বী। পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখে আছেন।

আরেক খামারি নজরুল মিয়া। তিনি জানান, এলাকায় তার খামারটি অনেক বড়। তার দেখাদেখি এলাকায় অনেক বেকার যুবক স্বাবলম্বী হচ্ছেন। গত কয়েক বছরে এলাকায় আরও পাঁচজন হাঁসের খামার দিয়েছে। যেখানে আরও প্রায় ৪ হাজার হাঁস পালা হচ্ছে। হাঁস লালন-পালনে কোনো কিছুর পরামর্শ নিতে হলে আমিরুলের কাছে যান। তারা এখন হাঁসের একদিনের বাচ্চা কিনে বড় করে বিক্রি করছেন।

খামারি আমিরুল রাইজিংবিডিকে বলেন, হাঁস পালনে আমি দেশীয় পদ্ধতি বেছে নিয়েছি। খাবারে-দেশি শামুক, ধান, গমের পাশাপাশি অন্য খাবারও দিচ্ছি। সঠিকভাবে শ্রম দিলে হাঁস পালনে বিদেশি টাকার চেয়েও বেশি উপার্জন করা সম্ভব। অনেকেই এখন আমাকে দেখে হাঁস পালনের পরামর্শ নিতে আসছেন। প্রাণিসম্পদ বিভাগ কর্তৃপক্ষ নিয়মিত এসব খামার পরিদর্শন, বিনামূল্যে ভ্যাকসিন সরবরাহ, নিয়মিত পরামর্শ ও সহযোগিতা দিলে খামারিরা আরও উপকৃত হতো।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন বলেন, ওই এলাকায় কয়েকটি হাঁসের খামার হয়েছে। সেখানে খামারিরা হাঁস ও ডিম বিক্রি করে অনেক বেশি লাভবান। আমি খামারগুলো পরিদর্শন করেছি। তবে আমিরুলের খামারটি বেশ বড় ও পরিপাটি। তার পরিবার দীর্ঘ দিন ধরেই এ ব্যবসায় যুক্ত। প্রায় সময়ই খামারিরা বিভিন্ন পরামর্শ নিতে আসেন। তাই আমরাও চেষ্টা করছি ভবিষ্যতে এ প্রকল্পে সরকারিভাবে ঋণের মাধ্যমে তাদের উৎসাহিত করার।

আমিরুলের খামার নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন। আগামী ৬ মাসের মধ্যে তিনি খামারে হাঁসের পরিমাণ ১ হাজার বানাবেন। হাঁস পালন ও ডিম বিক্রি একটি লাভজনক প্রকল্প। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ খাতকে একটি সম্ভাবনাময় খাতে রূপ দেওয়া সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।