‘ডালডায় মাত্রাতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাট’

‘ডালডায় মাত্রাতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাট’

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার পারশিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েল (পিএইচও) এর নমুনার ৯২ শতাংশে ২ শতাংশের চেয়ে বেশি ট্রান্সফ্যাট (ট্রান্স ফ্যাটি এসিড) পাওয়া গেছে। প্রতি ১০০ গ্রাম পিএইচও নমুনায় সর্বোচ্চ ২০.৯ গ্রাম পর্যন্ত ট্রান্সফ্যাট এর উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে, যা ডব্লিউএইচও এর সুপারিশকৃত মাত্রার তুলনায় ১০ গুণেরও বেশি। ঢাকার শীর্ষস্থানীয় পিএইচও ব্র্যান্ডসমূহের নমুনা বিশ্লেষণ করে এই ফলাফল পেয়েছেন গবেষকরা। শনিবার গবেষণা ফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পিএইচও বাংলাদেশে ডালডা বা বনস্পতি ঘি নামে অধিক পরিচিত। বাসা বাড়িতে ব্যবহার না হলেও পিএইচও বেকারি ও বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করা খাবারে ব্যবহৃত হয়। গবেষণার আওতায় ঢাকার বিভিন্ন মার্কেটের খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে বেকারি এবং রেস্তোরাঁয় খাবার তৈরিতে সচরাচর ব্যবহার হয় এমন চারটি শীর্ষস্থানীয় পিএইচও ব্র্যান্ডের তালিকা তৈরি করা হয়। এই তালিকার ভিত্তিতে পাইকারি বাজার (হোলসেলার) এবং পিএইচও উৎপাদনকারী কারখানা থেকে ব্র্যান্ডগুলোর মোট ২৪টি নমুনা সংগ্রহ করে পর্তুগালের ন্যাশনাল হেলথ ইনস্টিটিউট ফুড কেমিস্ট্রি ল্যাবরেটরির সহায়তায় সেগুলো বিশ্লেষণ করা হয়। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন গ্যাস ক্রোমাটোগ্রাফি ব্যবহার করে ট্রান্সফ্যাটি এসিড বা টিএফএ মাত্রা নির্ণয় করা হয়।

গবেষকরা জানান, পিএইচও নমুনা বিশ্লেষণ করে প্রতি ১০০ গ্রাম নমুনায় গড়ে ১১ গ্রাম ট্রান্সফ্যাট পাওয়া গেছে। এছাড়া, একই ব্র্যান্ডের পিএইচও নমুনার মধ্যে ট্রান্সফ্যাটের উপস্থিতির ব্যাপক তারতম্য লক্ষ করা গেছে। যেমন, একটি পিএইচও ব্র্যান্ডের ৭টি নমুনায় ০.৬৯ গ্রাম থেকে শুরু করে ১৪.৫ গ্রাম পর্যন্ত ট্রান্সফ্যাট পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে পিএইচও বা ডালডা সাধারণত ভাজা পোড়া স্ন্যাক্স ও বেকারিপণ্য তৈরি এবং হোটেল-রেস্তোরাঁ ও সড়কসংলগ্ন দোকানে খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের খাবারে ক্ষতিকর ট্রান্সফ্যাট উপাদানের উপস্থিতি সম্পর্কে তেমন কোনও তথ্য-উপাত্ত না থাকার কারণেই এই গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব ধরনের ফ্যাট, তেল এবং খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা মোট ফ্যাটের ২ শতাংশ নির্ধারণ এবং তা কার্যকর করার দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি সহায়ক পদক্ষেপ হিসেবে মোড়কজাত খাবারের পুষ্টিতথ্য তালিকায় ট্রান্সফ্যাটের সীমা উল্লেখ বাধ্যতামূলক করা, উপকরণ তালিকায় পিএইচও এর মাত্রা উল্লেখ বাধ্যতামূলক করা, ফ্রন্ট অব প্যাকেজ লেবেলস বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়।

যা খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্সফ্যাটের উপস্থিতি নির্দেশ করবে এবং ‘ট্রান্সফ্যাট-মুক্ত’ বা ‘স্বল্পমাত্রার ট্রান্সফ্যাট’ এ জাতীয় স্বাস্থ্যবার্তা ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সহায়তা করবে। এ ধরনের পদক্ষেপে খাদ্যপণ্যের উপাদান সম্পর্কে ভোক্তাদের সচেতনতাও বৃদ্ধি পায় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।