ঝিনাইদহে মতবিরোধ নিরসনে বাহাস: সুন্নিদের কাছে কওমিদের পরাজয়

মুহম্মদ আসাদুজ্জামান সবুজ, যশোর: জেলার কালিগঞ্জ থানাধীন ঝনঝনিয়া গ্রামে বিভিন্ন দলমতের অনুসারি মুসল্লিদের মধ্যে মতবিরোধ নিরসনে এক বাহাস মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। গত সোমবার (১৬ মে) বঙ্গবন্ধু স্কুল মাঠে উপভারত উমহাদেশে সুন্নীদের প্রখ্যাত ফুরফুরা সিলসিলা ও দেওবন্দ কওমি আলেমদের মাঝে এ বাহাস অনুষ্ঠিত হয়।
বাহাসে ১ম পক্ষ কওমিপন্থী আলেমদের পক্ষে নেতৃত্ব দেন- মুফতি হাবিবুর রহমান, মুফতি আব্দুর রাজ্জাক ও আরো অনেকে। বাহাসের ২য় পক্ষ ফুরফুরা সিলসিলার নেতৃত্বে ছিলেন- মুফতি মুহম্মদ শাহ আলম ফুরফুরাশরিফ -ঢাকা ও পক্ষে ছিলেন আরো অনেকে। বাহাসের বিষয়বস্তু ছিলো যথাক্রমে-  ১) মিলাদ শরীফ-কিয়াম শরীফ, ২) নামাযের পর মুনাজাত করা, ৩) হুযুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূর না মাটি এবং আকীদা বিষয়ক মোট ৮৪টি বিষয়।
বাহাসের শর্ত ছিলো একপক্ষ প্রশ্ন করবে অপর পক্ষ উত্তর দিবে তারপর তারা প্রশ্ন করবে, উত্তর না দিলে প্রশ্ন করতে পারবে না।
ফুরফুরার আলেমগণ কওমিদের প্রতিটি প্রশ্নের জবাব যখন কোরআন, হাদীছ, তাফসীর, ইজমা, ক্বিয়াস থেকে দলিল দিয়ে খন্ডন করছিলেন তখন শর্তভঙ্গ করে কওমিরা বারবার ভিন্ন প্রশ্নে দিকে ঘুরে যাওয়ার কৌশল অবলম্বন করেন। এতে উপস্থিত মুসল্লিরা বিক্ষুদ্ধ হন। কিন্তু যখনই ১ম পক্ষ কওমিদেরকে প্রশ্ন করা হচ্ছে তারা বারবার প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছে এবং নিয়ম ভঙ্গ করে সুন্নী আলেমদের প্রতি পাল্টা প্রশ্ন করতে দেখা যায়।
এতে আয়োজক কমিটি কওমিদের ছল-চাতুরিতে ক্ষুদ্ধ হয়ে এক পর্যায়ে বলেন, “আপনারা (কওমিরা) সঠিক উত্তর দিয়ে তারপর প্রশ্ন করুণ।”
সম্মিলিত মুনাজাত প্রসঙ্গে ফুরফুরার আলেম মুফতি শাহ আলম কওমিদের কিতাব থেকেই উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন যে, “আপনাদের বিগত কওমি আলেমরা ইতিপূর্বে সম্মিলিত মুনাজাত করেছে ও করতে নির্দেশ দিয়েছে এবং বলেছেন যারা মুনাজাত করেনা এরা গুমরাহ। তাহলে আপনারা সম্মিলিত মুনাজাত করেন না কেনো??  জবাবে কওমি পন্থি আলেমরা বলেন, “বাপ যা করেছে তা কি ছেলেদের করতে হবে? ” মানে তারা তাদের মুরব্বিদের মানে না, যদিও একই কিতাব এখনো তাদের মাদরাসায় পড়ানো হয়।
এদিকে কওমিদের এমন ছলচাতুরির ফলে আয়োজক কমিটি ভড়কে যায় কারণ কওমিদের বিরুদ্ধে টানটান উত্তেজনা। এসময় ঝিনাইদহ T.N.O মনোয়ার হোসেন মুল্লার উপস্থিতিতে বলা হয়, এটা ইসলামি উচ্চ পর্যায়ের বিষয়। পরবর্তীতে একটা মিমাংশা করা হবে। অর্থাৎ T.N.O ও আয়োজক কমিটি চাইনি এখানে একটা গন্ডগোল হোক। কারণ জনগণ কওমিদের উপর ক্ষ্যাপে গিয়েছিলো। যে কোনো মূহুর্তে একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারতো। এ প্রেক্ষিতে T.N.O কিছু বক্তব্য দিয়ে সবাইকে শান্ত করে। বক্তব্যের শেষে বলেন : “মৌলভি সাহেবদের উচিৎ হবে, মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে বলা, কারণ মৌলভি সাহেবরা বলে অনেক কাজ হয়।” 
সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সন্ত্রাসবাদ হচ্ছে ইহুদি, খ্রিষ্টানদের তৈরি। শুধু ইসলামকে ধংব্স করার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। ইসলামে সন্ত্রাসবাদের কোনো অস্তিত্ব নেই।”
তারপর টি,এন,ও সকলের সুস্থতা কামনা করে বাহাস মাহফিল এখানে সমাপ্ত করার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ করে। টি,এন,ও যাবার পর কওমিদের প্রধান মুফতি দ্রুত স্টেজ ত্যাগ করে। এসময় জনগনের ভিতর টান টান উত্তেজনা বিরাজ করে ও কওমিদের বিরুদ্ধে বলতে থাকে। পরিস্থিতি খারাপ দেখে পুলিশ সকলকে সরিয়ে দেয়। চারিদিকে কওমিদের বিরুদ্ধে কানা-কানি শুরু হয়ে যায়।
স্থানীয় একজন মুসল্লির কাছে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, কওমিদের ছল-চাতুরি এখন সবাই বুঝতে পেরেছে। ওরা (কওমি) আসলে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে, শুধু ইসলামকে কাটছাট করার জন্য। এদের উপর আল্লাহর গজব পড়বে।”
এদিকে স্থানীয় মুহম্মদ আসাদ নামে একজন বলেন, কওমিরা বারবার প্রশ্ন করেছে কিন্তু নিজেরা কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি। ওরা নিজেদের পূর্ববর্তী আলেমদেরকে মানেনা তাহলে এদের গোড়াই গলদ আছে। এদিকে কওমি কিছু ছাত্র সাধারণ জনগণের কাছে স্বিকার করেছে, ” আমাদের হুজুররা এতো কিতাব আনলো কিন্তু কোনো দলিল দিতে পারলো না, এটা আমাদের কাছেও খুব খারাপ লেগেছে।” এরপর কওমি ছাত্র-শিক্ষকরা ট্রাক ভরে স্থান ত্যাগ করে। তারপর ফুরফুরা আলেমদের সাথে সাধারণ জনগণ মুসাফা করে, তারা স্থান ত্যাগ করে।