জ্বর হলেই অ্যান্টিবায়োটিক নয়

স্বাস্থ ডেস্ক:জ্বর আমাদের শরীরের রোগ বোঝার আদি সিম্পটমের মধ্যে প্রথম সদস্য। এটা সহজেই বোঝা যায়। নিজের গায়ে হাত দিয়েই নিজে নির্ণয় করা যায়। রোগীর ভাষায়, গা একটু গরম হলেই জ্বর জ্বর ভাব, বেশি গরম হলে জ্বরে কাতর, আর মাঝে মাঝে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। মেডিকেল সায়েন্সে জ্বর মানেই কোনো ইনফেকশনের উপস্থিতি অথবা কোনো প্রদাহ। জ্বর হলো হাইপোথ্যালামাসের একটা গেম, যা তাপমাত্রার সেট পয়েন্ট নিয়ে মজা করে বানানো।
জ্বরের চিকিৎসা হিসেবে সারা দুনিয়া চিনে একটা ওষুধকে, তা হলো প্যারাসিটামল। আমাদের ভাষায় নাপা, আপা, এইচ ইত্যাদি। বলা হয়ে থাকে, ‘ঘরে যদি থাকে নাপা, আর নয় জ্বরে কাঁপা।’ প্যারাসিটামল শরীরের তাপমাত্রা কমাতে পারে হাইপোথ্যালামাসের সেট পয়েন্ট কমিয়ে। তা তো শুধু সিম্পটম রিলিভ। জ্বরের কারণ হিসেবে জীবাণু থেকেই যায়। তাই রোগ নির্মূলে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। তার ব্যবহার হতে হবে যেখানে প্রয়োজন সেখানে। যেমন ভাইরাল জ্বরে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার যথার্থতা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ছাড়া অন্য কেউ বলতে পারবে না। বলা হয়ে থাকে, ভাইরাল জ্বরে ওষুধ দিলেও সাত দিন, না দিলেও এক সপ্তাহ।
এ দেশে ডাক্তার নামধারী কিছু হাতুড়ে ব্যবসায়ী রোগ না বুঝেই অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে দেয়। মনে রাখতে হবে, অল্প জ্বর বড় রোগকে বোঝায়। এ জ্বর অল্প করে অনেক দিন থাকে। তাই রোগীও চিকিৎসার জন্য যায় না। যেমন যক্ষ্মা, ক্যান্সার, এইডস। এ ‘অল্প জ্বর’গুলো শরীরের সব সিস্টেমিক ডিজিজকে বোঝায়। তাই সিস্টেমিক রোগ ধরার জন্য ডাক্তাররা বেশি টেস্ট দেয়। অল্প জ্বরে বেশি টেস্ট করতে দিলেই রোগীর এবং তার সঙ্গে লোকজনের মাথায় বাজ পড়ে!
তখন তারা শরণাপন্ন হয় হাতুড়ে ডাক্তার নামধারী কোয়াক সম্প্রদায়ের কাছে। যারা রোগ কী, তা বোঝে না; কিন্তু জ্বর এলে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে এটা ঠিকই বোঝে। এতে কাজ হোক বা না হোক। ভাইরাল জ্বরে এ অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে তৈরি করে দিচ্ছে। এতে রোগীর উপকারের চেয়ে অপকার হয় বেশি। তাদের তাৎক্ষণিক কেরামতি দেখে রোগী মুগ্ধ।
কোয়াকদের সাপোর্ট দেওয়ার জন্য আছে কিছু চামচা। তারা নিজে তো অন্ধ, অন্ধ অনুকরণ করেই মজা পায়। জ্বর হলেই চোখ বন্ধ করে অ্যান্টিবায়োটিক ডাক্তারও দিতে পারে। কিন্তু তার শিক্ষা অন্ধকারে ঢিল ছুড়ে রোগী চিকিৎসার জন্য নয়। দেখা যাবে, সেই ঢিলেই মাথা ফেটে গেছে রোগীর। সেই দিন দূরে নয়, যেদিন আমাদের ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকগুলো আর কাজ করবে না। তখন জ্বর নিয়ে বিদেশ দৌড়াইলেও জ্বর ভালো হবে না।
সময় থাকতে যথার্থ চিকিৎসা নিন তার কাছ থেকে, যিনি জ্বরের মেকানিজম বোঝেন।