ছয় সুখবরে পুঁজিবাজারে সুদিনের হাতছানি

ঢাকা: ছয় ধরনের সুখবরে সুদিনের হাতছানি দিচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার। সুখবরগুলো হচ্ছে, বাজার থেকে চলে যাওয়া প্রাতিষ্ঠানিক ও বৃহৎ ব্যক্তি, প্রবাসী ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের প্রবেশ, চলতি বছরে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট চালু, সর্বস্তরে ব্যাংকের সুদের হার কম থাকা, স্টক এক্সচেঞ্জগুলোতে বিদেশী কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের আগমন এবং নেগেটিভ ইক্যুইটিতে থাকা ৬ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গড়ে উঠা। এর ফলে ২০১০ সালের পর আস্থাসংকট ও তারল্য সংকটে থাকা বাজারে সূচক-লেনদেন ও বেশিরভাগ শেয়ারের দাম বাড়ছে। একই সাথে যোগ হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের হারনো মূলধন।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সর্বশেষ তথ্যমতে, পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ১২ কার্যদিবস ডিএসইতে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় লেনদেন হয়েছে। এই সময়ে ডিএসইতে নতুন করে বিনিয়োগকারীদের হারানো মূলধন যোগ হয়েছে ৭ হাজার ১৭৩ কোটি ১৭ লাখ ১৪ হাজার টাকা। এই সমেয় ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১৪০ পয়েন্ট।

অন্যদিকে ৩-৪’শ কোটি টাকায় আটকে থাকা ডিএসই’র লেনদেনে বেড়ে ৬শ কোটি টাকার কোটায় দাঁড়িয়েছে। দেশের অপর চট্টগ্রাম পুঁজিবাজার (সিএসই) একই ইতিবাচক অবস্থা বিরাজ করছে।

ডিএসইর সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘২০১০ সালের পর একের পর এক দরপতনের ফলে লাখ, লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সর্বশেষ ডিএসইর সূচক যখন চার হাজার পয়েন্টে ছিল, তখন গুলশান ও শেলাকিয়া জঙ্গি হামলায় ভয় পেয়ে, প্যানিকড হয়ে কম পুঁজি বিনিয়োগকারীরা বাজার ছেড়েছেন।

তবে এই সময় কম দামে ভালো শেয়ার কিনতে পারায় নতুন করে প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় বিনিয়োগকারীরা বাজারে প্রবেশ করেছেন। এছাড়াও বিদেশী ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিও বিনিয়োগ গত তিন-চার বছরের তুলনায় বেড়েছে বলে মনে করেন তিনি।

ইউসিবিএল ক্যাপিটালের প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা (সিইও) রহমত পাশা বলেন, ‘পুঁজিবাজারে প্রধান সমস্যা হচ্ছে আস্থার সংকট। এই সংকট দূর করতে সরকার ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট চালু করছে। স্টক এক্সচেঞ্জগুলো বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মধ্য থেকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করছে।এসবের পাশাপাশি মহাধসের পর নেগেটিভ ইক্যুইটিতে পড়ে থাকা ৬ হাজার কোটির বোঝা কমানোর বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে।’ ডিএসইর সাবেক পরিচালক আহমেদ রশিদ লালী বলেন ‘নেগেটিভ ইক্যুইটি সমস্যা সমাধানে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো সরকারের কাছে সাবসিডিয়ারি কিংবা ভতুর্কি চায়নি। বাজারে আস্থা ও তারল্য সঙ্কট দূর করতে এই ইক্যুইটি নামক তলোয়ারের যত দ্রুত সম্ভব সমাধান করতে হবে।’

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান উপরের কারণগুলোর সঙ্গে সহমত পোষণ করে বলেন, ‘সঞ্চয়পত্রসহ সার্বিকভাবে ব্যাংকগুলোতে আমানতের সুদ হার কমেছে। এর ফলে ভাল লাভের প্রত্যাশায় বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারমুখী হচ্ছেন। এই সময় বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট দূর করতে ডিএসই ও সিএসইকে আরো কিছু সংস্কার করতে হবে।’

অধ্যাপক মিজান আরো বলেন, ‘বাজারকে তার নিজের নিয়মে চলতে দিতে হয়। সেই নিয়ম না মানায় যেমনভাবে ২০১০ সালে ধস হয়েছে, তেমনিভাবে সরকারের উচ্চ মহল ও বিনিয়োগকারীদের চাপে ধস-পরবর্তী ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে ট্রিগার সেল করতে দেয়া হয়নি। এর ফলে এই নেগেটিভ ইক্যুইটির জন্ম হয়েছে। নয়তো বাজারের ভবিষৎ আরো ভাল হতো।’

এই জন্য অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ডস অনুসারে পুঁজিবাজার পরিচালনার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে ব্রোকারেজ হাউজ এবং মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর প্রভিশনিং করতে হবে। এর ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্যাপিটাল শর্টেজ হবে। এতে গত ৫ বছর ধরে যে প্রফিট আসছে, সেটা কমে যাবে। এর ফলে সরকারপক্ষ থেকে ট্যাক্স মুওকুফ পাবে। প্রতিষ্ঠানগুলোর লেনদেনে নতুন করে সক্ষমতা বাড়বে।

তাই পুঁজিবাজারের স্বার্থে সরকারকে দেয়া মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের ৬ হাজার কোটি টাকার তহবিলসহ প্রস্তাবগুলোকে মেনে নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এর আগে গত মঙ্গলবার বাজারের আস্থা সংকট দূর করতে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সমিতি বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকারস অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) অর্থমন্ত্রীর কাছে চারটি লিখিত প্রস্তাব পেশ করে। এগুলো হচ্ছে- নেগেটিভ ইক্যুইটিতে থাকা মার্চেন্ট ব্যাংকের জন্য ছয় হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন, প্রতিটি ব্যাংককে অতিরিক্ত ২০০ কোটি টাকা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার ক্ষমতা দেওয়া, পাঁচ থেকে ছয় হাজার কোটি টাকার বন্ড ছাড়া এবং মূল কোম্পানিকে সহযোগী কোম্পানির দায় বহনের সুযোগ দেয়া।