চীনের প্রস্তাবেও সাড়া দিচ্ছে না মিয়ানমার

নিজস্ব প্রতিবেদক: রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরাতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে চীন নানা প্রস্তাব দিলেও কোনো প্রস্তাবেই সাড়া দিচ্ছে না মিয়ানমার। ফলে এ সংকট নিরসনে চীনের কোনো উদ্যোগ এখনো কাজে আসেনি। অনিশ্চয়তায় কাটেনি রোহিঙ্গা সংকট। যদিও মিয়ানমারও তেমনভাবে কোনো চাপ প্রদান করছেনা বলে জানা গেছে। কূটনৈতিক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

বাংলাদেশ সরকার বলছে, চীনের মধ্যস্থতায় মিয়ানমারের সাথে আলাপ চালিয়ে যাওয়ার পাশপাশি রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরাতে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিকভাবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ২০২০ সালেও মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাবে বাংলাদেশ। অন্যদিকে চীনের প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বারবরই মিথ্যা তথ্য ও নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার। চীনকে বিষয়টি অবহিত করে এর জবাবও চেয়েছে বাংলাদেশ।

এদিকে চলতি জানুয়ারি মাসে আবারও ত্রিপাক্ষিক ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা রয়েছে। এই বৈঠককে সামনে রেখে প্রত্যাবাসন ইস্যুতে চীন আরও কয়েকটি নতুন প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে কূটনৈতিক সূত্র।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে চীন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে এখন পর্যন্ত এক ডজনের বেশি প্রস্তাব দিয়েছে। এসব প্রস্তাব ছিল মূলত রোহিঙ্গাদের আস্থা অর্জন করা এবং কীভাবে নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা যায় এবং এই সংকট কীভাবে কাটানো যায়, সে বিষয়ে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ চীনের এসব প্রস্তাবে বরাবরের মতো ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে, তবে মিয়ানমারের সাড়া না পাওয়ায় এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। আমরা চীনের কাছে জানতে চেয়েছি, মিয়ানমারকে কেন রাজি করানো যাচ্ছে না? বেইজিংয়ের আহ্বানে আবারও ত্রিপাক্ষিক ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক হতে যাচ্ছে। দেখা যাক, নতুন কী প্রস্তাব তারা আনছে। এই কর্মকর্তা আরও বলেন, এর আগে দুইবারের প্রচেষ্টায় একজন রোহিঙ্গাকেও রাখাইনে ফেরত পাঠানো যায়নি। এর মূল কারণ, মিয়ানমারের প্রতি রোহিঙ্গাদের অনাস্থা। মিয়ানমারকে শুরুতে রোহিঙ্গাদের আস্থা অর্জন করতে হবে।

এদিকে রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মিয়ানমারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, মুখে ফেরত নেয়ার কথা বললেও মিয়ানমারের মধ্যে আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। চীনের প্রচেষ্টা বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় চীন যুক্ত হয়েছে। তারা মিয়ানমারের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এখনো কোনো প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। তবে আমরা আশাবাদী।

ড. মোমেন বলেন, চীনসহ সকল দেশ এক বাক্যে বলেছে, রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়া উচিৎ। কিন্তু মিয়ানমার মানছে না। এ বিষয়ে সবাই এখন একমত যে, রোহিঙ্গারা এখানে থাকলে সন্ত্রাসের জন্ম হবে, যা গোটা বিশ্বের জন্য হুমকি সৃষ্টি হবে। চীন মিয়ানমারে ব্যবসা করতে চায়। কিন্তু এ সংকট জিইয়ে রেখে তারা লাভবান হতে পারবে না।

সূত্র জানায়, মিয়ানমারকে দেয়া প্রস্তাবে চীন বলছে, কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে বসবাস করা রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিদের রাখাইনে নিয়ে যাওয়া হোক। সেখানে গিয়ে নিরাপত্তাসহ সার্বিকভাবে ইতিবাচক পরিবেশের উপস্থিতি দেখতে পেলে তারা নিজেদের পরিবারসহ রোহিঙ্গাদের জানাবে। তখন বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা আস্থা ফিরে পাবে এবং রাখাইনে মিয়ানমারে ফেরত যাবে। এ ধরনের আরও অনেক প্রস্তাবই চীন দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নেপিডো ইতিবাচক কোনো সাড়া দেয়নি। এর মধ্যে মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা কক্সবাজারে এসে রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলেছে, সেখানে চীনের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। সেখানেও নিজেদের অবস্থানে অনড় মিয়ানমার। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তারা বারবার বলছে, বিদেশি হিসেবেই রাখাইনে ফিরতে হবে রোহিঙ্গাদের। তবে নাগরিকত্ব নিয়ে ফেরার ব্যাপারে অনড় রোহিঙ্গারা।