চামড়া নিয়ে রিট, সাড়া নেই হাইকোর্টের

ঢাকা: কুরবানির পশুর চামড়ার নজিরবিহীন দরপতনের কারণ খুঁজতে বিচারিক তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। তবে ওই রিট নিয়ে হাইকোর্টের পৃথক দুটি বেঞ্চে শুনানির জন্য গেলে তাতে সাড়া দেয়নি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ। কুরবানিতে পশুর চামড়ার দরপতন রোধে নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে বিচারিক তদন্তের নির্দেশনা চাওয়া হয় রিটে।

রিটকারী আইনজীবী জানান, সিন্ডিকেট ও একশ্রেণির অসৎ ব্যবসায়ীর কারণে চামড়ার অস্বাভাবিক দরপতন হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। চামড়াজাত পণ্য দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি খাত, যার প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে কাঁচা চামড়া। এ অবস্থায় এ শিল্প হুমকির মুখে পড়েছে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রিটে।

রোববার সকালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মহিউদ্দিন হানিফ (ফরহাদ) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট আবেদন করেন। রিটে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্টকে বিবাদী করা হয়েছে।

রিট আবেদনে চামড়ার অপ্রত্যাশিত দরপতন রোধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না, দরপতনের কারণ খুঁজতে একটি জুডিশিয়াল (বিচারিক) তদন্ত করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, দরপতনের সঙ্গে দায়ীদের ব্যবসায়িক নিবন্ধন কেন বাতিল করা হবে না মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে এ রিট করা হয়েছে বলে জানান ব্যারিস্টার মহিউদ্দিন হানিফ (ফরহাদ)।

তিনি বলেন, রিটটি দুটি বেঞ্চে উপস্থাপন করা হলে আদালত শুনানির জন্য তা গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। তবে এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামীকাল অন্য একটি বেঞ্চে উপস্থাপন করা হবে।

‘সরকারের নজরদারি নেই, ব্যবসায়ীদের কারসাজি’ শিরোনামে খবর প্রকাশ করা হয় একটি পত্রিকায়। অপর একটি পত্রিকায় ‘গরিবের হকে সিন্ডিকেটের থাবা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রভাবশালী সংঘবদ্ধ চক্রের কারণে এবার ‘গরিবের হক’ কুরবানির পশুর চামড়ার বাজারে বড় ধস নেমেছে। বাড়তি মুনাফার লোভে ট্যানারি মালিকদের বেশির ভাগই সিন্ডিকেট করে কুরবানির পশুর চামড়া কিনছে না। অল্প যা বিক্রি হয়েছে তা সরকারের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে অনেক কমে, নামমাত্র মূল্যে। এতে চামড়া সংগ্রহকারীরা বিপাকে পড়েছে। চামড়া পচে যাচ্ছে। দুর্গন্ধে নিরুপায় হয়ে অনেকে সংগৃহীত চামড়া রাস্তায় বা নদীতে ফেলে দিচ্ছে। মাটির নিচেও পুঁতে ফেলছে অনেকে।

ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুরবানির পশুর যে চামড়া দুই-আড়াই হাজার টাকা বিক্রি হতো, এবার তা বিক্রি করতে হয়েছে ৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। ক্রেতার ঘাটতি থাকায় দাম নির্ধারণ ছাড়াই ট্যানারি মালিক এবং ব্যবসায়ীদের কাছে চামড়া দিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে রাজধানীর মসজিদ ও মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। কুরবানির চামড়ার এ দশা নিয়ে নগরবাসী, জনপ্রতিনিধি, মৌসুমী ব্যবসায়ী এবং মসজিদ-মাদরাসার নেতাদের মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ। চামড়ার ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় এতিম ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে।