চাঁদপুরে বেড়েছে ইলিশের সরবরাহ, দাম চড়া

চাঁদপুর সংবাদদাতা: চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাটে বেড়েছে ইলিশের সরবরাহ। অধিকাংশ মাছ আসছে সাগর মোহনা অঞ্চল থেকে। সাগর মোহনায় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়লেও চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় খুব একটা ইলিশের দেখা মিলছে না। গত এক মাসের তুলনায় ঘাটে ইলিশের আমদানি বাড়ায় কর্মব্যস্ততা বেড়েছে মৎস্য ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের। প্রতিদিন কমপক্ষে দেড় হাজার মণ ইলিশ আমদানি হচ্ছে। এর আগে ৪০০ থেকে ৬০০ মণ ইলিশ আসতো ঘাটে।

শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, আগের তুলানায় ইলিশের সরবরাহ বাড়ায় চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাটে বিক্রেতাদের হাঁকডাকে মুখরিত। প্রতিটি আড়তের সামনে ইলিশের স্তূপ। পাশেই বরফ ভেঙে প্যাকেটজাত করা হচ্ছে ইলিশ। দক্ষিণাঞ্চল ও সাগর মোহনার প্রচুর ইলিশ মাছঘাটে আসছে। ইলিশের আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম কিছুটা কমেছে। তবে দাম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। কেউ বলছেন দাম কমেছে, আবার কেউ বলছেন দাম বেড়েছে।

স্থানীয় ক্রেতা মহসিন মিয়া বলেন, চাঁদপুরের সবচেয়ে বড় মাছঘাট চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাট। এখানে এসে দেখলাম মাছের দাম গত বারের চেয়ে অনেক বেশি। অনেকে বলছেন চাঁদপুর ইলিশে সয়লাব। আসলে কথাটা সত্য নয়। মাছ আছে, কিন্তু দাম অনেক দেশি। চাঁদপুরের লোকাল মাছ এখানে সীমিত। বরিশাল, ভোলা ও হাতিয়া থেকে আসা ইলিশে সয়লাব। আমি এখানে ঘুরে ঘুরে মাছ দেখেছি। কিন্তু এখনো মাছ কিনতে পারিনি। আমার আয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মাছ কিনতে পারিনি। চাঁদপুরের লোকাল মাছের দাম এখনো বেশি, এক কেজি মাছ ১৫০০-১৬০০ টাকা।

আরেক ক্রেতা মাইনুল ইসলাম বলেন, আমি এখানে প্রায়ই মাছ কিনতে আসি। গত পরশু আমি এখান থেকে মাছ কিনেছি। বর্তমানে মাছের দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দাম কমেছে। আমি বাজেট অনুযায়ী আজও কিছু মাছ কিনব।

মাছ ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন বলেন, গত এক সপ্তাহ আগে ১ কেজি থেকে ১১০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম ১৪০০-১৫০০ টাকা ছিল। আর এখন একই ওজনের মাছ দেড়শ থেকে দুইশ টাকা কমেছে। অগামী ৭ অক্টোবর থেকে ইলিশ ধরা বন্ধ। আশা করি এর ভেতরে আমদানি বেশি হলে মাছের দাম আরও কমবে।

আরেক ব্যবসায়ী মনসুর আহমেদ মাহিন বলেন, মাছের আমদানি মোটামুটি বেড়েছে। ভোলা, বরিশাল, চট্টগ্রাম থেকে আসা ছোট ছোট ইলিশ মাছের আমাদামি বেড়েছে। বড় মাছ যে পরিমাণ বেড়েছে তার তুলানায় চাহিদা ও দাম বেশি। এগুলো চাঁদপুরের মাছ। পূজা উপলক্ষে ভারতের বর্ডার খুলে দেওয়ায় ভারতীয়রা চাঁদপুরের ইলিশ মাছ সংগ্রহ করছেন। যার কারণে এর দাম বেড়েছে।

আড়তদার মাসুদ রানা বলেন, বৃষ্টি ও নদীতে পানি বাড়ার কারণে গত দুই-তিন মাসের চেয়ে এখন মাছের সরবরাহ একটু বেশি। গত চার-পাঁচ দিন দামটা একটু কম ছিল। কিন্তু এখন দাম একটু বেড়ে গেছে। সাগরের ছোট মাছ একটু বেশি। স্রোতের সঙ্গে লোকাল মাছ আসার সর্ম্পক রয়েছে। নদীতে স্রোত যত বেশি হবে, মাছ তত বেশি ধরা পড়বে। যারা মাছ কিনবেন, নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আগে কিনলে লাভ করবেন। অভিযানের পরে তেমন মাছ ধরা পড়বে না।

চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী শবেবরাত সরকার বলেন, ইলিশের আমদানি খুব কম, ক্রেতা বেশি। যার কারণে মাছের দাম কমছে না। আজকে ঘাটে প্রায় ৮০০ থেকে ১ হাজার মণ ইলিশ আমদানি হয়েছে। তবে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩-৪ হাজার মণ ইলিশের প্রায়োজন।

তিনি আরও বলেন, আজকের বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ ১৩০০-১৪০০ টাকা, দেড় কেজি ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ১৬০০ টাকা, ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি মণ ২৮০০০ টাকা এবং ৬০০, ৭০০ ও ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি মণ ৩২০০০ টাকা পাইকারি বিক্রি করা হচ্ছে।

চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সভাপতি আব্দুল বারী জমাদার মানিক বলেন, চাঁদপুর মাছ ঘাটে ইলিশের আমদানি অনেকটাই বেড়েছে। আগামী ৭ অক্টোবর মা ইলিশ রক্ষায় অভিযান শুরু হবে। অভিযান শুরুর আগ পর্যন্ত ইলিশের সরবরাহ এমন থাকলে দাম কিছুটা কমতে পারে। দাম এখন সাধারণ ক্রেতাদের নাগালে আছে বলেও তিনি জানান।