চট্টগ্রামে পানিবদ্ধতা: ১৩৮০০ কোটি টাকা পানিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক: পানিবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রামের চার মেগা প্রকল্পই যেন পানিতে গেছে। প্রায় ১৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই পানিবদ্ধতা প্রকল্পে সমাধানতো আসেনি বরং সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। পাঁচ দিনের বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা; বেড়েছে সীমাহীন দুর্ভোগ।

শহরের পানি নিষ্কাশিত হয়ে ৫৭টি খালের মাধ্যমে কর্ণফুলী নদী ও হালদা নদী হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশছে। এর মধ্যে প্রধান ৩৬টি খালে সংস্কার, পুনরুদ্ধার, খনন, দেয়াল নির্মাণ, জোয়ার—ভাটা নিয়ন্ত্রণে রেগুলেটর স্থাপনের কাজ চলছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দুটি, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সিটি করপোরেশন একটি করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু গত ৮ বছরে বড় চারটি প্রকল্প নেয়া হলেও সুফল মিলছে না।

স্থানীয়রা জানান, চট্টগ্রাম শহরের পানিবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্পের শেষ নেই। একে একে তিনটি সংস্থার চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন চলছে এখন। সব মিলিয়ে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। তবু এবারের বর্ষায় মাত্র পাঁচদিনের বৃষ্টিতেই ডুবে যায় পুরো বন্দরনগরী। আবার বেশি সময় ধরে জমে থাকছে পানিও। সেই সঙ্গে দুর্ভোগের সময়ও বাড়ছে মানুষের। বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ।

পানিবদ্ধতা প্রকল্পের সুফল না মেলার কারণ:

চট্টগ্রাম শহরের পানিবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্পের বাস্তবায়ন সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও দীর্ঘসূত্রিতাই এর সুফল না মেলার কারণ। এছাড়া কাজের ধীরগতিও দুর্ভোগ লাঘব না হওয়ার কারণ বলে জানান চট্টগ্রাম কেন্দ্রের বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী এস এম শহিদুল আলম।

তিনি বলেন, আমরা কাজে সমন্বয়ের অভাব পরিলক্ষিত করেছি। এটা এবারের পানিবদ্ধতা আবার প্রমাণিত হলো। সমস্যা নিরসনে তিনটি সংস্থার ১৩ হাজার কোটি টাকার কাজ চলছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও সিটি করপোরেশন এটা করছে। সেই সঙ্গে সিটি করপোরেশন একটি খালের প্রস্তাবনা পাস করেছে। সেটাসহ হিসেব করলে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার কাজ চলছে। তবে আমরা সুফল পাচ্ছি না। সব প্রতিষ্ঠানে সমন্বয়ের ব্যাপারটা আমরা ঘটাতে না পারলে; পানিবদ্ধতা থেকে নিরসন সম্ভব না।

বর্ষা মৌসুমের আগেই তদারকি সংস্থাগুলো পরিকল্পনা না নেয়ায় এবার প্রবল দুর্যোগে পড়তে হয়েছে চট্টগ্রামকে এমনটা দাবি করে নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, আমরা আশা করবো অচিরেই সিটি করপোরেশন ও সিডিএ একসঙ্গে বসে কীভাবে জনদুর্ভোগ সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা যায় সে ধরনের একটি কর্মপন্থা নির্ধারণ করবেন।

তবে সমন্বয়ে কাজ চলছে দাবি করে খাল ও নালা—নর্দমা সঠিকভাবে পরিষ্কার না করায় পানিবদ্ধতাকে বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস।

তিনি বলেন, ৮০ থেকে ৯০ ভাগ বর্জ্য যাচ্ছে খালে। সরকার যেখান থেকে অনুমোদন দিচ্ছে সেখানে কিন্তু সমন্বয় হচ্ছে। তবে সমস্যা নিরসনে আমার কাজ আমাকে করতে হবে আর সিটি করপোরেশনের কাজগুলো তারা করবে।

নগরীর পানিবদ্ধতা নিরসনে সবচেয়ে বড় প্রকল্পের অগ্রগতি ৭৬.২৫ শতাংশ বলে জানিয়েছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিডিএ।