চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে নিহত ৬৩ জন

ঢাকা: পুরান ঢাকার ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র চকবাজারের পাঁচটি বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৬৩ জনের প্রাণ ঝরেছে। মৃতের এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানা গেছে। প্রাথমিকভাবে কয়েকজনের মরদেহ উদ্ধার হলেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আসতেই একের পর এক উদ্ধার হচ্ছে নিথর ঝলসানো দেহ।

অগ্নিকাণ্ডস্থলে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সাঁটানো এক বোর্ডে বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল পর্যন্ত ৬৩ মরদেহ উদ্ধারের তথ্য দেওয়া হয়। সেখানে আরও বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ বা আহত হয়ে ৪১ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক (অপারেশন, মেনটেন্যান্স) দিলীপ কুমার জানায়, এখন পর্যন্ত ৬৩ জনের মরদেহ মিলেছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। মরদেহগুলো ঢামেক হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে চকবাজারের নন্দ কুমার দত্ত রোডের শেষ মাথায় মসজিদের পাশে ৬৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের ওয়াহিদ ম্যানসনে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। এলাকাবাসী বলছে, ওই ভবনের কারখানা থেকে আগুন ছড়িয়েছে। কারও কারও মতে, বিকট শব্দে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর আগুন ছড়ায়। ওয়াহিদ ম্যানসনের নিচতলায় প্লাস্টিকের গোডাউন ছিল। ওপরে ছিল পারফিউমের গোডাউন।

এ আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি স্টেশনের ৩৭টি ইউনিট। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা রাত ৩টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন বলে জানায় ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুম। একটার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন।

সাড়ে ৩টার দিকে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান বলেন, এখানে আসার রাস্তাটির দু’পাশই সরু। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি সহজে ঢুকতে পারেনি। তবে শেষ পর্যন্ত কয়েকঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছি। ভবনে দাহ্য পদার্থ থাকার কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। মোট পাঁচটি ভবনে আগুন লেগে যায়। এখনো আমাদের কাজ চলছে। আমরা কাজ শেষে সার্চ করবো।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান বলেন, এখানে প্লাস্টিকের জিনিসপত্র বানায়। বডি স্প্রেও এখানে বানানো হয়। বডি স্প্রে তৈরির দাহ্য পদার্থে আগুন বেশি ছড়িয়েছে।

গ্যাস সিলিন্ডার নাকি ট্রান্সমিটার বিস্ফোরণ, নাকি বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত- এমন এক প্রশ্নের জবাবে ফায়ার সার্ভিসের ডিজি বলেন, ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকনের নির্দেশে একটি তদন্ত কমিটি গঠন হচ্ছে। তদন্ত করলেই বোঝা যাবে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় মেয়র সাঈদ খোকন সাংবাদিকদের বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে সব কিছু তুলে ধরা হবে। তবে ৪০-৪৫ জনের মতো ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ও বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন।