গ্রীনিচের পরিবর্তে ক্বাবা শরীফ থেকে টাইম জোন নির্ধারণের দাবি

পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল হচ্ছে পবিত্র ক্বাবা শরীফ। যা নিয়ামত দ্বারা পূর্ণ এবং মানব ও জ্বিন জাতির জন্য পথ প্রদর্শক। পৃথিবীর বিস্তৃতিও ঘটেছে ক্বাবা শরীফ থেকে। তাই পৃথিবীর সকল ‘সময় অঞ্চল’ (ঞরসব তড়হব) এই ক্বাবা শরীফ থেকেই চর্তুপার্শ্বে নির্ধারণ হওয়া কর্তব্য। সেজন্য ‘গ্রিনিচ মিন টাইম’ (GMT)-এর পরিবর্তে ‘ক্বাবা শরীফ মিন টাইম’ (KMT) চালু করা মুসলিম বিশ্বের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে রাজারবাগ শরীফের পক্ষ থেকে মাজলিসু রুইয়াতিল হিলাল আয়োজিত “গ্রীনিচের পরিবর্তে ক্বাবা শরীফের উপর দিয়ে “প্রাইম মেরিডিয়ান স্থির ও বাস্তবায়ন করার যৌক্তিকতা ও প্রয়োজনীয়তা” শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, পবিত্র ক্বাবা শরীফ-এর উপর দিয়ে প্রাইম মেরিডিয়ান স্থির করলে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখার অবস্থান হয় সুবিধাজনক স্থানে। অপরদিকে গ্রীনিচের উপরে প্রাইম মেরিডিয়ান স্থির করা অযৌক্তিক এবং প্রচলিত আন্তর্জাতিক তারিখ রেখাও আঁকাবাঁকা। গ্রীনিচের উপর দিয়ে প্রাইম মেরিডিয়ান স্থির করায় আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা নিয়েও সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। প্রচলিত আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা হচ্ছে ১৮০ ডিগ্রী পূর্ব এবং ১৮০ ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমা রেখার সংযোগস্থলে। এই তারিখ রেখার পশ্চিমে রয়েছে উত্তর গোলার্ধে রাশিয়া এবং দক্ষিণ গোলার্ধে নিউজিল্যান্ড। এই তারিখ রেখা সরাসরি উত্তর গোলার্ধ থেকে দক্ষিণ গোলার্ধে নেমে যেতে পারেনি। যখনই জনবসতিপূর্ণ এলাকার উপরে এসেছে তখনি ঠেলে দেয়া হয়েছে পানির দিকে। ১৮০ ডিগ্রী দ্রাঘিমা রেখা বিচ্যুত সময় রেখার অংশগুলো হলো বেরিং প্রণালী, এলিউশিয়ান দ্বীপপুঞ্জের পশ্চিমাংশ, ফিজির পূর্বাংশ ইত্যাদি। এ সকল সমস্যার সমাধানের জন্য ১৯৯৫ সালের পহেলা জানুয়ারিতে কিরিবাতির প্রেসিডেন্ট টিবুরোর টিটো আর্ন্তজাতিক তারিখ রেখাকে কিরিবাতির পূর্বে সরিয়ে নেবার ঘোষণা দেয়।

এসব সমস্যার ফলে বর্তমান স্থানের পূর্বেও গ্রীনিচের আরও দু’টি স্থানের উপর দিয়ে প্রাইম মেরিডিয়ান স্থির করা হয়েছিল। এমনকি ফ্রান্স বহুদিন যাবৎ গ্রীনিচকে প্রাইম মেরিডিয়ান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি এবং প্যারিসকে প্রাইম মেরিডিয়ান ধরেই গণনা করতো। পরবর্তীতে গ্রীনিচকে মেনে নিয়ে ।GMT ব্যবহার শুরু করলেও পরবর্তীতে আবার ফ্রান্স চলে যায় CET (Central European Time) -এ। ফ্রান্সের উপর দিয়ে প্রাইম মেরিডিয়ান (০ ডিগ্রী) চলে গেলেও তারা গ্রীনিচ টাইম না ধরে ১৫ ডিগ্রী পূর্বে যে সময় অর্থাৎ Central European Time কে ধরে গণনা করছে।

এছাড়া ১৯৭২ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে GMT এর পরিবর্তে UTC ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু গ্রীনিচের উপর দিয়ে প্রাইম মেরিডিয়ান কল্পনা করায় তার সাপেক্ষে বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় সময় GMT এর পরিবর্তে UTC হলেও সময় অঞ্চলগুলোর বিভক্তি পূর্বের মতই রয়ে গেছে। তাই গ্রীনিচের উপর প্রাইম মেরিডিয়ান স্থির করার কোন যৌক্তিক কারণ নেই।

কিন্তু ক্বাবা শরীফ-এর উপর দিয়ে প্রাইম মেরিডিয়ান স্থির করলে ১৮০ ডিগ্রী দ্রাঘিমা বা আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা যাবে আলাস্কা এবং কানাডার মাঝামাঝি স্থান দিয়ে (বর্তমান ১৪০ ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমা রেখা বরাবর)। আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর দিয়ে নিচে নেমে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর দিয়ে দক্ষিণ গোলার্ধে চলে যাবে। সম্পূর্ণ তারিখ রেখাটি যাবে পানির উপর দিয়ে ফলে স্থলভাগের ডানে ও বামে তারিখ রেখা সরিয়ে দেয়ার কোন প্রয়োজন পড়বে না। তাছাড়া গ্রিনিচ মেরিডিয়ানকে মূল মধ্যরেখা (প্রাইম মেরিডিয়ান) হিসেবে বিবেচনা করা হয় ১৮৮৪ সালে। অথচ গ্রিনিচের পূর্বেও ব্রাসেলস, কোপেনহেগেন, আলেকজান্দ্রিয়া, জেরুজালেম, মাদ্রিদ, প্যারিস এ সকল এলাকাও প্রাইম মেরিডিয়ান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এখনো আবার গ্রিনিচ মেরিডিয়ানকে পরিবর্তন করে পবিত্র ক্বাবা শরীফ মূল মধ্যরেখা (প্রাইম মেরিডিয়ান) হিসেবে বিবেচনা করে সময় অঞ্চল নির্ধারণ করতে হবে। সুতরাং পুনরায় ক্বাবা শরীফ-এর উপর দিয়ে প্রাইম মেরিডিয়ান স্থির করা সহজেই সম্ভব। তখন আন্তর্জাতিক তারিখ রেখাসহ সকল বিষয়ের সহজ সমাধান পাওয়া যাবে। তাই গ্রীনিচের উপর প্রাইম মেরিডিয়ান স্থির করার কোন যৌক্তিক কারণ নেই।

বক্তারা বলেন, পবিত্র ক্বাবা শরীফ উনার গুরুত্ব প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক সূরা আলে ইমরান-এর ৯৬ নম্বর আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “প্রকৃতপক্ষে মানবজাতির জন্য প্রথম যে ঘর তৈরি করা হয়েছিল তা হচ্ছে ঐ বাক্কা বা কাবা শরীফ। যা নিয়ামত দ্বারা পূর্ণ এবং মানবজাতির জন্য পথ প্রদর্শক।” সুতরাং ক্বাবা শরীফ পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীনতম স্থান। প্রশ্ন হতে পারে ইহুদী, খ্রিস্টানরা কেন মুসলমানদের বিষয়টি মেনে নিবে। প্রকৃতপক্ষে ইহুদী খ্রিস্টানরাও ক্বাবা শরীফ-এর অবস্থান, মান-মর্যাদা, ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।

বক্তারা বলেন, হযরত নূহ আলাইহিস সালাম-এর মহা প্লাবনের পর হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এই পবিত্র কাবা শরীফ-এর পুনঃনির্মাণ করেন। হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম-এর দুই সন্তান হযরত ইসমাইল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইসহাক আলাইহিস সালামকেও আল্লাহ পাক নবী হিসেবে কবুল করেন। হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম-এর বংশধরদের মধ্য থেকে তাশরীফ নেন নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ইসহাক আলাইহিস সালাম এবং তাঁর বংশধরদের মধ্য থেকে আসেন হযরত মুসা আলাইহিস সালাম এবং পরে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম। সূতরাং ইহুদী এবং খ্রিস্টানসহ সকল আহলে কিতাবের কাছেই ক্বাবা শরীফ-এর অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে।

কুরআন মজীদ প্রথম নাযিল হয় মক্কা শরীফ-এ। মক্কা শরীফ-এ প্রথম ইসলামের প্রচার শুরু হয় এবং প্রথম ইসলাম কবুলকারী ছাহাবা আজমাইনগণও মক্কা শরীফ-এর অধিবাসী। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে ইসলাম পূর্বে-পশ্চিমে উত্তর-দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও ক্বাবা শরীফকে যেহেতু আসমান ও যমীনের কেন্দ্র বলা হয়েছে, সুতরাং মুসলমানদের উচিত ক্বাবা শরীফ-এর সময় সাপেক্ষে পৃথিবীর সকল দেশের বা সকল অঞ্চলের সময় নির্ধারণ করে কাবা শরীফ-এর প্রতি পরিপূর্ণ আদব প্রকাশ করা। মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মধ্যে রয়েছে সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ।” তাহলে জীবনের সকল বিষয়েই আল্লাহ পাক-এর হাবীব, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেই অনুসরণ করতে হবে।

সুতরাং ক্বাবা শরীফকে কেন্দ্র ধরে, তার উপর দিয়ে প্রাইম মেরিডিয়ান স্থির করে, তার সাপেক্ষে পৃথিবীর সকল ‘সময় অঞ্চল’ (TIME ZONE) ভাগ করলে এর মধ্যেই থাকবে রহমত, রবকত ও কল্যাণ। তাই গ্রীনিচের পরিবর্তে পবিত্র ক্বাবা শরীফ-এর উপর দিয়ে প্রাইম মেরিডিয়ান স্থির করাটাই যুক্তিসঙ্গত। তাই গ্রিনিচ মিন টাইম (GMT)-এর পরিবর্তে ক্বাবা শরীফ মিন টাইম (KMT) চালু করা মুসলিম বিশ্বের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এতে কুরআন শরীফ এবং হাদীছ শরীফ-এর স্পষ্ট অনুসরণ করা হবে। তখন এর মধ্যে থাকবে রহমত, বরকত ও সাকিনা।

সেমিনারে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, বিশিষ্ট চাঁদ ও মহাকাশ গবেষক, ফার্মাসিষ্ট এবিএম রুহুল হাসান। এছাড়া পবিত্র দ্বীন ইসলামের আলোকে গ্রিনিচ মিন টাইম (GMT)-এর পরিবর্তে ক্বাবা শরীফ মিন টাইম (KMT) চালু করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন, দৈনিক আল ইহসান ও মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক মুফতিয়ে আ’যম আল্লামা আবুল খায়ের মুহম্মদ আযীযুল্লাহ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন, মুহম্মদ আবু বকর সিদ্দীক হাসান।প্রেস বিজ্ঞপ্তি।