গীবত প্রসঙ্গে
মুফতি মুহম্মদ আবুল খায়ের: কারো দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করাকে গীবত বলে। এ গীবত প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَلَا يَغْتَبْ بَعْضْكُمُ بَعْضًا اَيْحِبُّ اَحَدْ كُمْ اَنْ يَاُ كُلَ لَحْمَ اَخِيهِ مَيْةً فَكَرِهْتُمُوُهُ.
অর্থ: তোমরা একে অপরের গীবত করো না। তোমরা কি তোমাদের মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ কর? তোমরা তো তা অপছন্দ কর।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, গীবত ব্যভিচার থেকেও খারাপ। নাঊযুবিল্লাহ!
কোনটা করলে গীবত হয়? আর কোনটা করলে গীবত হয় না? এর ব্যাখ্যায় উল্লিখিত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘কিমিয়ায়ে সায়াদাত,’ ‘ইহয়াউ উলুমুদ্দীন’ ইত্যাদি কিতাবে উল্লেখ করেছেন, “কয়েক প্রকার লোক রয়েছে যাদের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করলে গীবত হয় না। এছাড়া অন্যান্য লোকের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করলে গীবত হবে।” কারণ তা না হলে সে যুলুমের প্রতিকারই পাবে না।
১নং: “কোনো লোক যদি কাজী সাহেবের কাছে বিচারপ্রার্থী হয় আর বিচারের জন্য সত্য কথা বলতে গিয়ে যদি বিপরীত পক্ষের দোষত্রুটি বর্ণনা করে তাহলে সেটা গীবত হবেনা।” কারণ সত্য কথা না বললে বিচার শুদ্ধ হবে না।
২নং: কোনো লোক যদি মুফতী সাহেবের কাছে যায় ফতওয়ার জন্য, তখন সে ফতওয়ার জন্য যদি বিপরীত পক্ষের দোষ-ত্রুটি বলে, তাহলে সেটা গীবত হবে না। কারণ সত্য কথা না বললে ফতওয়া শুদ্ধ হবে না।
৩নং: যদি রাজা-বাদশাহ আমীর ওমরাহদের ইছলাহ বা সংশোধন করার জন্য তাদের দোষত্রুটিগুলো বর্ণনা করা হয় বা ধরিয়ে দেয়া হয় তাহলে সেটা গীবত হবে না।
৪নং: যারা ফাসিক। ফাসিক কাদেরকে বলা হয়? যে ব্যক্তি ফরয, ওয়াযিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদা তরক করে তাকে ফাসিক বলে। ফাসিকের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করলে সেটা গীবত হবে না।
৫নং: যখন কোনো লোক মশহুর হয় লুলা, ল্যাংড়া, বোবা-তোতলা, কানা-অন্ধ ইত্যাদি নামে। তখন তাকে যদি সেই মশহুর নাম লুলা-ল্যাংড়া, বোবা-অন্ধ প্রভৃতি নামে ডাকা হয় তাহলে সেটা গীবত হবে না।
৬নং: যদি কোনো ছেলের পক্ষ বা মেয়ের পক্ষ বিপরীত পক্ষের বাড়িতে গিয়ে তাদের প্রতিবেশীর কাছে যদি ঐ ছেলে বা মেয়ে সম্বন্ধে সংবাদ নেয়। আর প্রতিবেশী লোকেরা যদি সত্য কথা বলে অর্থাৎ সেই ছেলে বা মেয়ের দোষ-ত্রুটিগুলো বলে দেয়, তাহলে সেটা গীবত হবে না। কারণ এখানে একজনের জীবন নিয়ে প্রশ্ন।
৭নং: যারা উলামায়ে ‘সূ’ বা দুনিয়াদার আলিম যারা পবিত্র দ্বীনকে বিক্রি করে দুনিয়া অর্জন করে, তাদের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করলে সেটা গীবত হবে না।
সুতরাং যারা উলামায়ে ‘সূ’ বা দুনিয়াদার আলিম তাদের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করলে ও তাদের মন্দ নামে সম্বোধন করলেও গীবত এবং গুনাহ কোনোটাই হবে না। বরং ছওয়াব হবে। এ প্রসঙ্গে ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন,
“এক যামানা বদনামে উলামায়ে ‘সূ”
বেহতরায শস্ত সালে তোয়াত বেরিয়া”
অর্থ: কিছু সময় উলামায়ে ‘সূ’ বা দুনিয়াদার আলিমদের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা, ষাট বৎসর কবুল ইবাদত থেকে উত্তম।’ সুবহানাল্লাহ!
তার কারণ উলমায়ে ‘সূ’ বা গুমরাহ লোকের কাছে গিয়ে মানুষ গুমরাহ হয়ে যায়। যদি কেউ তার দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করে দেয় বা তার হাক্বীক্বত প্রকাশ করে দেয়, তাহলে হাজার হাজার লোকের ঈমান হিফাযত হয়ে যাবে। সুবহানাল্লাহ!
লেখক: খতীব, গবেষক, লেখক