গাড়ি বন্ধ, না খেয়ে মরার অবস্থা পরিবহন শ্রমিকদের

গাড়ি বন্ধ, না খেয়ে মরার অবস্থা পরিবহন শ্রমিকদের

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা : পরিবহন শ্রমিক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন পরিবার নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের মেড্ডা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। দুই যুগ ধরে যুক্ত আছেন এ সেক্টরে। বর্তমানে একটি বাসের কন্ডাক্টর হিসেবে কাজ করছেন। বাস চললে দৈনিক ৫০০-৬০০ টাকা উপার্জন করেন তিনি।

এ টাকায় পাঁচ সদস্যের সংসার চললেও এখন আর সেটি হচ্ছে না। গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় সংসার চালানো নিয়ে বিপাকে পড়েছেন আলাউদ্দিন। সরকারি ও মালিক সমিতির পক্ষ থেকে কিছু চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী দেয়া হলেও বাসা ভাড়া ও সাংসারিক খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় চলাচলকারী বাস-মিনিবাসগুলোতে চালক, কন্ডাক্টর ও সহযোগী মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার শ্রমিক কাজ করেন। কিন্তু লকডাউনের কারণে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আয় থেমে গেছে তাদের। একে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা।

লকডাউনের কারনে গত ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকলেও দ্বিতীয় দফায় বন্ধের মেয়াদ বাড়িয়ে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। এরপর ৩য় দফায় বন্ধ ঘোষণা করা হয় ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত। এর ফলে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রায় তিন হাজার পরিবহন শ্রমিক।

সরকারিভাবে এবং মালিক সমিতির কাছ থেকে চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু খাদ্যসামগ্রী পেলেও সেটি প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন শ্রমিকরা।

সম্প্রতি সরেজমিনে (৬ এপ্রিল) জেলা শহরের মেড্ডা বাসস্ট্যান্ড, ভাদুঘর পৌর বাস টার্মিনাল ও পৈরতলা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেছে সুনসান নীরবতা। বাস কাউন্টারগুলোও তালাবদ্ধ হয়ে আছে। অথচ এ বাসস্ট্যান্ডগুলো সারাক্ষণ মুখর থাকতো পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও যাত্রীদের পদচারণায়।

কিন্তু থমকে যাওয়া এ পরিস্থিতিতে উপার্জন না থাকায় সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে পরিবহন শ্রমিকদের। তাই পরিবার নিয়ে টিকে থাকতে এ মুহূর্তে তাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আর্থিক সহায়তা।

বাস কন্ডাক্টর আলাউদ্দিন বলেন, সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। কার কাছে টাকার জন্য হাত পাতব? সবারই তো এখন সমস্যা। কয়েকদিন আগে মালিক সমিতি থেকে যে ত্রাণ সহায়তা পেয়েছিলাম তা শেষের পথে। সামনের দিনগুলোতে কীভাবে চলব সেই দুশ্চিন্তায় আছি। আমরা শ্রমিকরা খুব কষ্টে আছি, খেয়ে-না খেয়ে ঘুরছি।

জসিম মিয়া নামে এক বাসচালক বলেন, লাকডাউনের কারণে উপার্জনের পথ বন্ধ। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের পরিবার নিয়ে চলার কোনো উপায় নেই। আমার মতো সব শ্রমিকের একই অবস্থা। সরকার ও মালিক সমিতি যদি আমাদের এ বিপদে পাশে না দাঁড়ায় আমাদের পরিবার নিয়ে পথে বসতে হবে।

ছুট্ট মিয়া নামে একজন বাস মালিক জানান, একটা বাসের সঙ্গে তিন-চারটা পরিবার জড়িত।  সবার অবস্থায় এখন খারাপ। গাড়ি না চলায় আমাদেরও উপার্জন বন্ধ। তবুও আমরা যতটুকু পারছি শ্রমিকদের সহযোগিতা করছি। লকডাউন স্বাভাবিক না হলে আমাদেরও পথে বসতে হবে।

এ ব্যাপারে জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ জাগো নিউজকে বলেন, পরিবহন বন্ধ থাকায় শ্রমিকদের বেশি কষ্ট হচ্ছে। তারা দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ। মালিক সমিতির পক্ষ থেকে আমরা শ্রমিকদের হাতখরচের জন্য কিছু টাকা দিচ্ছি। ত্রাণ সহায়তাও দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করছি কিছু ত্রাণের জন্য।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শামছুজ্জামান জানান, পরিবহন শ্রমিকদের ত্রাণ সহায়তা দেয়ার জন্য মালিক-সমিতির কাছে তালিকা চাওয়া হয়েছে। তালিকা পেলে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেয়া হবে।