খেটে খাওয়া মানুষ এখন বড় অসহায়

নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনার অজুহাত দিয়ে সারাদেশে সৃষ্ঠ হওয়া লকডাউনে একপ্রকার অনাহারী জীবনযাপন করছে দেশের লাখ লাখ রিক্সাচালক। শুধু নিজেই নয় পাশাপাশি তাদের উপর নির্ভরশীল হাজার হাজার পরিবার খাদ্যসঙ্কটে ভুগছে। কিন্তু তাদের পাশে সরকার তো দুরের কথা স্থানীয় প্রশাসনও নেই।

স্থানীয় একজনের বর্ণনায় এই নিম্ন আয়ের মানুষদের হাহাকারের বিষয়টি স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। স্থানীয় এক ব্যক্তির ভাষ্যমতে, রিক্সায় করে যাচ্ছিলাম। তখন সমানতালে রিকশা চালাচ্ছিলেন বিজয় সরণির দিক থেকে আসা আরেক চালক। ২৪ কি ২৫ বছরের যুবক। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের সড়কবাতির আলোয় তার চেহারাটা স্পষ্ট। ক্ষুধার্ত হলে মানুষের চেহারা যেমন হয় তেমন।
যাত্রী নয়, খাবারের সন্ধানেই এদিকটায় চষে বেড়াচ্ছেন। সংসদদের বাসভবনের পাশের ফুটপাতের ওপর এক ঝুপড়ি ঘরে আলো জ্বলছে। ওই যুবক রিকশাচালকের নজর সেদিকে। ভেবেছিলেন, হয়তো কোনো খাবারের দোকান। এগিয়ে গিয়ে দেখে হতাশ। গামছা দিয়ে মুখ মুছে চলতে শুরু করলেন ধানমন্ডির দিকে। আমাদের গন্তব্য শ্যামলী।
আমাকে বহন করা রিকশার নির্লিপ্ত চালকের সঙ্গে আলাপ শুরু হলো এবার।

‘মামা, বাসা কই?’
‘মিরপুর, মামা।’
‘রাতে খাইছেন?’
‘না, মামা।’
‘কই খাবেন?’
‘বাসায় গিয়ে।’
‘বাসায় আর কে কে আছে?’
‘কেউ না, মামা। এখন আমি একাই। দুপুরে নিজেই রান্না কইরা খাইছি। বিকেল থেকে এখন পর্যন্ত চার-পাঁচটার বেশি খ্যাপ মারতে পারিনি। এবার আর বাড়িত টাকা পাঠান হবি না। আমিই ক্যামনে চলমু, সেটাই বুঝব্যার পারতেছি না।
খানিকক্ষণ চুপ। এরপর চালক নিজেই বললেন, বাসায় আমরা ছয়জন থাকতাম। সবাই পেট চালানোর ইনকাম করতে আসছি। না হলে এই শহরে আসতাম না। এখন বাসায় কেউ নাই। বাড়িত গেছে। আমিই না যায়া ভুল করছি। বাড়িত গেলে খাওয়ার কষ্ট করা লাগত না। আল্লাহ কোনো না কোনোভাবে দিন পার করাত।

স্থানীয় ওই ব্যক্তির অভিমত, ওই রাতে কি সে কোথাও খাবার পেয়েছিল? নাকি রাতভর উপোস থেকে পরদিন গ্রামের বাড়ির পথ ধরেছে? যান চলাচলও তো বন্ধ। ঢাকা শহরে নিশ্চয়ই ভাড়া বাসায় থাকে। এত রাতে বাসা ভাড়া কিংবা পেট চালানোর টাকা আয় করতে সে কি জনমানবহীন শহরে রিকশা নিয়ে ঘুরছে? নাকি রাতে সে বাসাতেই আছে! খেয়ে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে পেট বাঁচাতে আসা শহরে।