খুলনায় ৯ দফা দাবিতে ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট সড়ক ও রেলপথ অবরোধ

খুলনার ৯ পাটকলে মঙ্গলবার থেকে ধর্মঘট

নিউজ ডেস্ক:আগুন জ্বালিয়ে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ খুলনায় ৯ দফা দাবিতে ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট পালনের দ্বিতীয় দিনে চার ঘণ্টার সড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন খুলনা ও যশোরের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের শ্রমিকরা। বুধবার (৩ এপ্রিল) সকাল ৮টা থেকে খুলনা-যশোর মহাসড়কের বিভিন্ন সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন শ্রমিকরা।এই কর্মসূচি দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলবে।

এর আগে মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) সকাল ৬টা থেকে শ্রমিকদের রেল ও সড়কপথ অবরোধ শুরু হয়ে দুপুর ১টা ২০ মিনিট পর্যন্ত চলার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এ অবরোধের ফলে খুলনা-যশোর মহাসড়ক, নতুন রাস্তা মোড় থেকে সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড সড়ক,বিআইডিসি সড়কে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। রেল চলাচলও ভোর থেকে বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল, টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও সমাবেশ করছেন। এ অবরোধের কারণে মহাসড়কের যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

বকেয়া মজুরি পরিশোধ এবং মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ৯ দফা দাবিতে বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগ ও সিবিএ- নন সিবিএ ঐক্য পরিষদের ডাকে খুলনার ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, স্টার, ইস্টার্ন, আলিম এবং যশোরের জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিলের শ্রমিকরা এ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছেন।

শ্রমিক নেতা খলিলুর রহমান জানান,‘মঙ্গলবার রাতে খুলনা ও যশোর অঞ্চলের সকল পাটকল শ্রমিক নেতাদের বৈঠকে কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। বিজেএমসি থেকে শ্রমিকদের ৯ দফার ১টি মেনে নেওয়ার নির্দেশনা আসলেও বাকি ৮ দফা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত না আসায় কর্মসূচি অব্যহত রাখা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন,‘সরকার ঘোষিত জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন-২০১৫ সুপারিশ বাস্তবায়ন, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক কর্মচারীদের পি. এফ. গ্র্যাচুইটি ও মৃত শ্রমিকের বিমার বকেয়া প্রদান, টার্মিনেশন, বরখাস্ত শ্রমিকদের কাজে পুনঃবহাল, শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগ ও স্থায়ী করা, পাট মৌসুমে পাটক্রয়ের অর্থ বরাদ্দ, উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মিলগুলোকে পর্যায়ক্রমে বিএমআরই করাসহ ৯ দফা বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছিলো। কিন্তু আমাদের দাবিগুলো এখনও বাস্তবায়ন না হওয়ায় সাধারণ শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে রাজপথে আবার নামতে বাধ্য হয়েছি।’

পাটকল শ্রমিক নেতা সোহরাব হোসেন জানান,‘শ্রমিকরা ৮ থেকে ১০ সপ্তাহের মজুরি ও কর্মচারীরা ২ থেকে ৪ সপ্তাহের বেতন না পাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তারা তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ, ঘর ভাড়া দিতে পারছেন না। এ অবস্থায় বাধ্য হয়েই আন্দোলনে নেমেছি।’

স্টার জুট মিলের শ্রমিক সুফিয়া বেগম বলেন,‘আমরা না খেয়ে রাজপথে থাকলেও সরকার আমাদের দিকে নজর দিচ্ছে না।’

এদিকে পাটকল শ্রমিকদের অবরোধের কারণে বুধবার ভোর ৬টা থেকে খুলনা রেলস্টেশন থেকে কোনও ট্রেন ছাড়েনি। ফলে যাত্রীরা স্টেশনেই অবস্থান নিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। খুলনা স্টেশন ও প্লাটফর্মে সব বয়সী যাত্রীরা অবস্থান করছেন।

খুলনা স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার বলেন,‘সকাল ৬টা থেকে ট্রেন ছাড়া সম্ভব হয়নি। সকাল ৬টার কমিউটার, সাড়ে ৬টার কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস,সোয়া ৭টার রূপসা এক্সপ্রেস, ৮টা ৪০ এ চিত্রা এক্সপ্রেস, ৯ টা ১০ এ রকেট ছাড়া সম্ভব হয়নি। ১২টা পর্যন্ত কোনও ট্রেনই ছাড়া সম্ভব হবে না।’