ক্ষারীয় পানি শরীরের জন্য উপকারী নাকি অপকারী?

রাজধানীতে কমেছে পানির চাহিদা

অনলাইন ডেস্ক : অ্যালকালাইন বা ক্ষারীয় পানির বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে, কিন্তু তার মানে অবধারিতভাবে এটা বোঝায় না যে এটি প্রয়োজনীয় বা উপকারী। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নেসোচি ওকেকে-ইগবোকোয়ে বলেন, ‘ক্ষারীয় পানিতে অ্যাডেড মিনারেল বা সংযোজিত খনিজ থাকে যা পানির পিএইচ মাত্রা বৃদ্ধি করে। এসব অ্যাডেড মিনারেল ও কম্পাউন্ড পানিকে সচরাচরের তুলনায় অনেক কম অম্লীয় করে।’ ইন্টারন্যাশনাল ফুড ইনফরমেশন কাউন্সিল ফাউন্ডেশনের নিউট্রিশন কমিউনিকেশন্সের সিনিয়র পরিচালক ক্রিস সলিড বলেন, ‘ক্ষারীয় পানির বাণিজ্যিক প্রসারে বিজ্ঞাপনের ভাষা হলো, এটি শরীরকে কম অম্লীয় করে যা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।’

পিএইচ স্কেল কোনো তরল বা দ্রবণের অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব শূন্য থেকে ১৪ পর্যন্ত পরিমাপ করে। সাতের নিচে হলে অ্যাসিডিক বা অম্লীয় এবং সাতের উপরে হলে অ্যালকালাইন বা ক্ষারীয়, বলেন বাকযন্ত্র বিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসক জেমি কুফম্যান। মানব শরীর, বিশেষ করে ফুসফুস-লিভার-কিডনি, রক্তে স্বাভাবিক ও নিরপেক্ষ পিএইচ ৭.৪ নিয়ন্ত্রণ ও বজায় রাখে, বলেন টুরো কলেজ অব মেডিসিনের অ্যাসিস্ট্যান্টদ ক্লিনিক্যাল প্রফেসর নিকেত সোনপাল।

ডা. কুফম্যান বলেন, বিজ্ঞান এ দাবিকে সমর্থন করছে না যে ক্ষারীয় পানি পানে শরীরের পুরো পিএইচ ভারসাম্য পরিবর্তন হয়। পাকস্থলির হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ক্ষারীয় পানিকে রক্ত শোষণের পূর্বেই অকার্যকর করে দেয়, বলেন ডা. সলিড। প্রোটিন হজম করতে এবং খাদ্যবাহিত প্যাথোজেন বা রোগ সৃষ্টিকারী অণুজীব ধ্বংস করতে পাকস্থলির এই অম্ল ও নিম্ন পিএইচ প্রয়োজন, বলেন ডা. সোনপাল। তাই সুস্থ ও সম্পূর্ণ কর্মক্ষম শরীরের পিএইচ বাড়ানোর জন্য ক্ষারীয় পানি পানের প্রয়োজনীয়তা নেই। এছাড়া ডা. কুফম্যান উল্লেখ করেন যে, শরীর অতিরিক্ত অম্ল ও অতিরিক্ত ক্ষার গ্রহণ করে থাকলে তা মূত্রের মাধ্যমে বের করে দেয়। আপনি বরং লেবু পানি পান করতে পারেন, এতে রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা।

কিন্তু কুফম্যানের মতে, ‘অ্যাসিড রিফ্লাক্সে ভুক্তভোগীদের জন্য ক্ষারীয় পানি উপকারী হতে পারে।’ তার প্রকাশিত গবেষণায় পাওয়া যায়, পিএইচ ৮ এ পাকস্থলির এনজাইম পেপসিন ধ্বংস হয়। কান, নাক ও গলার প্রদাহের জন্য পেপসিন দায়ী, কিন্তু ক্ষারীয় পানি গলা ও খাদ্যনালির টিস্যু স্পর্শ করলে পেপসিন দূর হয়ে যায়। ডা. কুফম্যান বলেন, ‘ক্ষারীয় পানি পাকস্থলি ও খাদ্যনালীর এই এনজাইম দূরীকরণে সাহায্য করে এবং এটি রিফ্লাক্সের উপসর্গ উপশম করে।’

কিন্তু ডা. সোনপাল তার রিফ্লাক্স রোগীদের সাধারণ পানি পান করতে পরামর্শ দেন- কারণ, ক্ষারীয় পানি যে উপকার করে এ সম্পর্কে পর্যাপ্ত উপাত্ত নেই। তিনি যোগ করেন, ‘অন্যদিকে এ পানির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভোগারও সম্ভাবনা রয়েছে। গড় ব্যক্তির জন্য এটি খারাপ নয়, কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্তও নয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে, ক্ষারীয় পানি কিছু স্বাস্থ্য দুর্দশার লোকদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে, যেমন- কিডনি রোগ ও নানাপ্রকার বংশগত রেনাল টিউবুলার অ্যাসিডোসিস। কিছু ক্ষেত্রে অত্যধিক ক্ষারীয় পানি অ্যালক্যালোসিস (শারীরিক তরল ও টিস্যুতে অতিরিক্ত ক্ষার) সৃষ্টি করতে পারে- ফলে বমিবমি ভাব, বমি, মাংসপেশিতে খিঁচুনি বা সংকোচন এবং কনফিউশন হতে পারে।’

কৃত্রিম ক্ষারীয় পানি এবং প্রাকৃতিক ক্ষারীয় পানি পানের মধ্যে পার্থক্যও রয়েছে। কিছু কৃত্রিম ক্ষারীয় পানি তৈরিতে রাসায়নিক প্রক্রিয়ার সময় শরীরের জন্য দরকারি এমন মিনারেল বা খনিজ দূর হয়ে যেতে পারে এবং এতে কন্টামিন্যান্ট বা বিষাক্ত পদার্থও থাকতে পারে। ডা. কুফম্যান শুধুমাত্র প্রাকৃতিক ক্ষারীয় পানি পানের জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন।

ডা. ওকেকে-ইগবোকোয়ে বলেন, ‘ক্ষারীয় পানি নিয়ে এখনো পর্যন্ত সম্পন্ন গবেষণাগুলোতে যথেষ্ট শক্তিশালী প্রমাণ নেই যে ক্ষারীয় পানির উপকারিতাকে সমর্থন করবে।’ একটি সুস্থ, সচল শরীর রক্তে পিএইচের ভারসাম্য বজায় রাখতে যা করা প্রয়োজন তা করে। ডা. সলিড পুনর্ব্যক্ত করেন যে ক্ষারীয় পানি শরীরের অম্লীয় মাত্রাকে প্রভাবিত করে না- যা একটি ভালো দিক, কারণ শরীরে পিএইচের ভারসাম্য অর্জিত হয়। তিনি যোগ করেন, ‘আমাদের শরীরের পিএইচ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকে, যা এমনকি সবচেয়ে ব্যয়বহুল বোতলের পানিও বিঘ্নিত করতে পারে না।’ ডা. সলিডের মতে সারকথা হলো, ‘নিয়মিত পর্যাপ্ত সাধারণ পানি পান আপনাকে হাইড্রেটেড ও সুস্থ রাখবে- জনপ্রিয় ক্ষারীয় পানির বোতলের পেছনে অর্থব্যয় করার প্রয়োজন নেই।’

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট