কেন ইউরিন ইনফেকশন হয়?

স্বাস্থ্য ডেস্ক: অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও দূষণের কারণে ইউরিন ইনফেকশন এখন সাধারণ একটি সমস্যা। এর কারণ ও প্রতিকার জানতে আগে জেনে নেওয়া যাক কিডনির কাজ ও মূত্রতন্ত্র সম্পর্কে।

মানবদেহে প্রতিনিয়ত যে বর্জ্য তৈরি হয় তা ইস্তেঞ্জার (মল-মূত্র) মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। ছোট ইস্তেঞ্জা (প্রস্রাব) যা ইউরিন; এটি কিডনি দিয়ে রক্তকে ছেঁকে তৈরি হয়। মানুষের দুটো কিডনি প্রতি মিনিটে ১ লিটারেরও বেশি রক্ত ছেঁকে নিচ্ছে। এই ছাঁকনের মাধ্যমে রক্তের ক্ষতিকর বর্জ্য যথা ক্রিয়েটিনিন, ইউরিক এসিড, অ্যামোনিয়া ইত্যাদি শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। কোনও কারণে কিডনিতে ইনফেকশন হলে বা কিডনি রোগ হলে রক্তে ক্রিয়েটিনিন, ইউরিক এসিড এসব কিডনি ছাঁকতে পারে না।

ইউরিন ইনফেকশন কী?

মূত্রতন্ত্রের ৪টি অংশের যেকোনও অংশ যদি জীবাণু দিয়ে সংক্রমিত হয়, তবে সেটাকে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা ইউরিন ইনফেকশন বলে। এটি নারী-পুরুষ সবার হতে পারে। তবে নারীদের মধ্যে সংক্রমণের হার বেশি। কারণ তাদের মূত্রনালী পায়ুপথের খুব কাছাকাছি থাকে। তাই জীবাণু প্রবেশ করে ইনফেকশনের আশঙ্কা বাড়ায়।
ইউরিন ইনফেকশনের উপসর্গ:

১। অনেক সময় ইস্তেঞ্জার সময় মূথনালীতে জ্বালাপোড়া করবে কিংবা ব্যথা করবে।
২। কিডনিতে ইনফেকশন হলে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসবে।
৩। তলপেটে ব্যথা কিংবা ইস্তেঞ্জার সময় ব্যথা হবে।
৪। ইস্তেঞ্জার রঙ বদলে যাবে, অস্বাভাবিক দুর্গন্ধ পাওয়া যাবে।
৫। কিছুক্ষণ পরপর ইস্তেঞ্জার বেগ হবে এবং মনে হবে আবার হবে।

ইনফেকশনের কারণ:

১। কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে (বিশেষ করে শিশুদের) ইউরিন ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ে।
২। যারা অনেকক্ষণ ইস্তেঞ্জা আটকে রাখেন, তাদের ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বেড়ে গিয়ে ইউরিন ইনফেকশন হতে পারে।
৩। পানি কম পান করলে ইউরিন আউটপুট কম হয়। এক্ষেত্রেও ব্যাকটেরিয়া জমে ইনফেকশন হতে পারে।
৪। যাদের মূত্রপথে পাথর তৈরি হয় কিংবা প্রস্টেট গ্রন্থি বড় হয়, তাদেরও ইউরিন ইনফেকশনের ঝুঁকি বেশি।
৫। নিয়মিত গোসল, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখলেও এ রোগ হতে পারে।

প্রতিরোধ:

১। দিনে ৩-৪ লিটার পানি পান করতে হবে। বেশি পানি পান করলে প্রস্রাব বাড়বে। তাতে জীবাণু শরীর থেকে বেরিয়ে যাবে। ইনফেকশনের ঝুঁকি কমবে।
২। বেশিক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখা যাবে না।
৩। ঢিলেঢালা সুতির কাপড় পরতে হবে।
৪। যাদের বার বার ইনফেকশন হয়, তারা ডাক্তারের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে পারেন।
৫। প্রচুর ভিটামিন এ, ই, সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। টক ফল, আমড়া, পেয়ারা, শসা এবং প্রচুর শাকসবজি খেতে হবে।

ইউরিন ইনফেকশনের চিকিৎসা:
যেহেতু ইউরিনারি ইনফেকশন একটা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণজনিত রোগ, তাই এটি দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তার দেখাতে হবে। চিকিৎসায় দেরি করলে কিডনিতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে ইনফেকশন।