কুরবানীর ৬ মাস আগেই ভারত থেকে গরু আসা শুরু হয়

পাহাড়ে উপজাতিদের মাদকের রাজ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক : কুরবানী ঈদের বাকি আর দুই দিন। নগর-গ্রাম সবখানেই পশুর হাটগুলোয় গরু-ছাগল আর মহিষে ভরা। সরকারের তরফে বলা হচ্ছে, ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধ আছে; তাই দেশের খামারিরা লাভবান হবেন। আসলেই কি তাই? কুরবানীর হাটে কি সব গরুই দেশি?

চট্টগ্রামের জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার চট্টগ্রামে ৬৩টি স্থায়ী এবং ১৪৬টি অস্থায়ী পশুর হাট বসেছে। এর মধ্যে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সাগরিকা বাজারসহ চট্টগ্রাম নগরে বসেছে ৯টি হাট।

এবার চট্টগ্রামে সম্ভাব্য কুরবানীর পশুর সংখ্যা ৭ লাখ ২০ হাজার। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ৭ হাজার ৫৭টি খামারের ৬ লাখ ১০ হাজার ২১৯টি পশু রয়েছে।

গত ৩১ জুলাইয়ের হিসাব অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ৪ লাখ ১৪ হাজার ৩৮৭টি গরু, ৪২ হাজার ২৮৪টি মহিষ, ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৪৮টি ছাগল ও ভেড়া রয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে ২ লাখের বেশি পশু চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সাগরিকা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারের বিভিন্ন প্রান্তে বেঁধে রাখা হয়েছে হাজার হাজার গরু। অধিকাংশ গরু ভারত থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। হাট পেরিয়ে সাগরিকা বাজারের আশপাশের অর্ধ মাইলজুড়ে সারি সারি গরু তুলেছেন ব্যাপারীরা। এসব গরুর অধিকাংশই উত্তরবঙ্গের রংপুর, রাজশাহী এবং কুষ্টিয়া যশোর থেকে আনা হয়েছে। এ ছাড়া কুমিল্লা ও সিলেট থেকেও কিছু গরু এসেছে চট্টগ্রামের বৃহৎ এ বাজারে।

ব্যাপারীদের সঙ্গে কথা বলার শুরুতে সবাই কাছে দাবি করেন, হাটে নিয়ে আসা গরুগুলোর সবই তাদের বাড়িতে লালন-পালন করা দেশি গরু। কিন্তু কিছুক্ষণ কথা বলার পরেই বেরিয়ে আসলো সত্য।

কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান সাগরিকা হাটে এসেছেন বাবার সঙ্গে গরু নিয়ে। তিনি জানান, পাঁচটি গরু নিয়ে সোমবার চট্টগ্রামে এসেছেন।এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাস ছয় আগে ভারত থেকে চোরাই পথে আসা এসব পশু তার বাবা অল্প দামে কিনে নেন। পূর্ব অভিজ্ঞতা আর ভালোভাবে খাওয়ানোর পর ৬ মাসেই গরুগুলো নাদুসনুদুস হয়েছে।

তাহলে বাজারে এসব গরুকে দেশি গরু হিসেবে বিক্রি করছেন কেন?

এমন প্রশ্নের জবাবে মাহমুদুল হাসান বলেন, চট্টগ্রামের মানুষ দেশি গরুর দাম বেশি দেয়। এ ছাড়া গত কয়েক মাসের লালন-পালনে আমাদের গরুগুলোকে দেখতে দেশি গরুর মতোই মনে হয়। তাই বেশী লাভের আশায় ভারত থেকে  গরু আনা হয়।

তিনি আরও বলেন, শুধু আমি নই, এ বাজারে আমাদের সঙ্গে এসেছেন এমন সব ব্যাপারীর কাছে থাকা প্রায় সব গরুই ভারত থেকে চোরাই পথে আসা। কেউ ছয় মাস বা কেউ এক বছর আগে গরুগুলো কিনেছেন।

কুমিল্লা থেকে আসা খামারি আসাদুজ্জামান জানান, সীমান্ত পেরিয়ে ভারত থেকে আসা গরু কম দামেই পাওয়া যায়। তাই অল্প দিন লালন-পালনেই ভালো দাম পাওয়া যায়। আমাদের কুমিল্লার মতোই দেশের বিভিন্ন সীমান্ত জেলাগুলোর খামারিরা ভারত থেকে আসা বাছুর বা ছোট গরু কিনেই কুরবানীর জন্য মোটাতাজা করেন।

পাঠকদের মনে হতে পারে শুধু উত্তরবঙ্গ থেকে বাজারে আসা গরুগুলোই ভারতীয় জাতের? কিন্তু তা না। চট্টগ্রামের বিভিন্ন খামারে মোটাতাজা করা গরুগুলোর একাংশও একইভাবে ভারত থেকে আসা; দালালদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা।

এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বলেন, দেশের খামারিরা যেসব পশু কুরবানীর জন্য প্রস্তুত করেছেন, তার সবই বিদেশি জাতের বিষয়টি সত্য নয়। তবে দেশি জাতের গরু হৃষ্টপুষ্ট কম দেখায়। তাই খামারিরা বিভিন্ন জাতের ভারতীয় গরুর সঙ্গে সংকর করে গরু হৃষ্টপুষ্ট করেন। আমাদের দেশি জাতের গরু যেহেতু বেশি বড় হয় না, সেহেতু আমাদের দেশি গরুর জাতকে উন্নত করতে সংকর করতে হয়।

তিনি আরও বলেন, যারা কুরবানী দিচ্ছেন, তাদের বলব- মোটাতাজা নয়, পাতলা গড়নের দেশি গরু কিনুন। দেশি গরুতে গোস্ত বেশি হয়, কিন্তু মোটাতাজা গরুতে পাবেন শুধু চর্বি আর পানি। এতে কুরবানীদাতাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হবে এবং আমাদের স্থানীয় খামারিরাও উপকৃত হবেন। তারাও দেশি গরু লালন-পালনে উৎসাহী হবেন।

সাগরিকা গবাদিপশু ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. অলিউল্লাহ জানান, এখন যারা বাজারে এসেছেন, তারা মূলত সবাই ব্যাপারী। চট্টগ্রামের স্থানীয় খামারিরা ঈদের দু-তিনদিন আগে বাজারে আসেন। ক্রেতারাও তাদের অপেক্ষায় আছেন। শুক্রবার সকাল থেকে দেশি গরু বাজারে উঠেছে।