কিশোর তারিকের বিস্ময়কর উদ্ভাবন- ‘মন দিয়ে যন্ত্র নিয়ন্ত্রণ!

চট্টগ্রাম : মনে করুন, আপনি অসুস্থ্য। বিছানায় শুয়ে আছেন, আপনার পাশে কেউ নেই। সিলিং ফ্যানটা চালানো দরকার। হয়তো মনে মনে ভাবছেন যদি এমনি এমনি ফ্যানটা ঘুরতো! হ্যা। এমনই একটি যন্ত্র আবিস্কার করেছেন ৯ম শ্রেণীর স্কুল ছাত্র তারিক আমিন চৌধুরী।
এরকম একটি মাইন্ড কন্ট্রোল্ড মেশিন (মন নিয়ন্ত্রক যন্ত্র) আবিষ্কার করে তাক লাগিয়েছেন চট্টগ্রামের তারিক। নগরীর সেন্ট প্ল্যাসিডস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৯ম শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সে। গত বছরের জুলাই মাসের শুরুতে এ যন্ত্রটি বানানোর জন্য কাজ শুরু করে সে। সেপ্টেম্বরের শেষে এসে পরিপূর্ণতা পায় তারিকের কাজ।

tarik_2_963053944কিভাবে কাজ করে এটি:এর জন্য লাগবে একটা ‘মাইন্ড ওয়েব’ নামের ডিভাইস। হেডফোনের মতো দেখতে সেই ডিভাইস মাথায় পরে নিলে যে চিন্তুা করবেন সেই চিন্তার তথ্য সংগ্রহ করবে মস্তিষ্ক থেকে। তবে ডিভাইসটিই মূল জিনিস না। সেই ডিভাইসের সঙ্গে বিভিন্ন সংযোগের সম্পর্ক নিশ্চিত করতে লাগবে নিয়ন্ত্রক যন্ত্র। যে নিয়ন্ত্রক যন্ত্রে ব্লটুথ কিংবা ওয়াইফাই’র মাধ্যমে মাইন্ড ওয়েব ডিভাইসে সংগৃহীত তথ্য যাবে। এর ফলে মনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে অনেক কিছুই।
এ যন্ত্রের ব্যবহার দেখিয়ে ইতিমধ্যেই এই কিশোর জিতেছে চট্টগ্রাম বিসিএসআইআর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা-২০১৫’র প্রথম পুরস্কার। যন্ত্রটি প্রদর্শন করা হয়েছে ঢাকা বিসিএসআইআর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহে। এছাড়া জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহে হয়েছে তৃতীয়।

কীভাবে এরকম একটি নিয়ন্ত্রক যন্ত্র তৈরির কথা মাথায় আসলো এমন প্রশ্নে কিশোর তারিকের বক্তব্য, ‘ধরুন আমি এমন একটা জিনিস বানাবো, যার ওপরে কেউ বানাতে পারবে না-আমি যখন এরকম একটা উচ্চ পর্যায়ের চিন্তা করতে যাবো, সে চিন্তা অবশ্যই মন দিয়েই করবো। এখন যদি ভাবি মন দিয়েই কিছু একটা বানানো যায়। তার ওপর আর কি থাকতে পারে? সেই ভাবনা থেকেই এরকম একটি নিয়ন্ত্রক যন্ত্র তৈরির করার জন্য লেগে থাকি। অবশেষে আল্লহর রহমতে সফল হই।’
এ যন্ত্রের দ্বারা কী কী করা সম্ভব? তারিক আমিন চৌধুরী জানান, ‘যতটুকু কাজ করেছি তার মাধ্যমে এ যন্ত্রের দ্বারা ঘরের বাতি, সিলিং ফ্যান নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। আরও পরিপূর্ণ রূপ দেয়া গেলে এ যন্ত্রের সাহায্যে মনের মাধ্যমে যেকোন যন্ত্রে পাসওয়ার্ড দেওয়া সম্ভব। যা ব্যাংকের বা ঘরের লকারের জন্য খুব কাজ দেবে। এছাড়াও মনের মাধ্যমে আরও অনেক কিছু করা সম্ভব হবে পরিপূর্ণভাবে যন্ত্রটি বানানো গেলে।’

তারিক আমিন বড় হয়েছেন চট্টগ্রাম শহরেই। তার মস্তিষ্কটা যেন বিজ্ঞানের কারখানা! সমবয়সী অন্য বন্ধুরা যখন পড়ালেখার ফাঁকে খেলাধূলা নিয়ে মাঠে সময় কাটায় কিংবা টিভি চ্যানেলের নামনে আটকে থাকে, তখন তারিকের মন পড়ে থাকে বিজ্ঞান চর্চায়। কেউ বিজ্ঞান নিয়ে কথা বলছে- সেখানেও ক্লাসরুমে শিক্ষকের লেকচার শোনার মতই মনোযোগী ছাত্র তারিক। এ যন্ত্রটি তৈরির আগে গত বছরের শুরুতে দুই বন্ধুকে নিয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি রোবট উদ্ভাবন করেছিল তারিক। সেসময় এ যন্ত্রটি নিয়ে বেশ হইচই হয়েছিল।
তারিকের কথা, ‘তুমি চাইলে এটা তৈরি করতে পারবে-এরকম কিছু আমি শুনতে চাই না; তুমি এটা তৈরি করেছো-যার ওপর আর কিছু হতে পারে না-এটাই শুনতে চাই আমি।’ বয়সটা এখনও ১৫’র ঘরে। তবে এই ছোট বয়সেই বড় একটা স্বপ্ন মনে গেঁথে ফেলেছেন আষ্টেপৃষ্টে। হতে চান একজন বিজ্ঞানী।
এ বয়সেই যে কিশোর মন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার যন্ত্র তৈরি করতে পারে, ভবিষ্যতে তো বাংলাদেশ তাকে নিয়ে আরও বড় স্বপ্ন দেখার কথা মনে জুড়িয়ে নিতেই পারে!!