কিশোরগঞ্জে পুলিশের হাতে ১৪১ কিশোর অপরাধীর তালিকা

নিউজ ডেস্ক: মাদক ও কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে কিশোরগঞ্জ শহরে বিশেষ ভূমিকায় কাজ করছে ‘পুলিশের হোন্ড পার্টি’। গত দেড় মাস ধরে শহরের অলিতে-গলিতে যে কোনো সময়ই এই হোন্ডা পার্টিকে অভিযান চালাতে দেখা গেছে। বিশেষ করে উঠতি বয়সী ছেলেরা যে অলি-গলিতে আড্ডায় বসে সেই স্থানগুলোকে চিহ্নিত করে অভিযান চালাচ্ছে এ দলটি। এতে শহরের সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ‘পুলিশের হোন্ডা পার্টি’। অপরাধ দমনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চলছে পুলিশের এই কার্যক্রম।

পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ শহরের ১৪১ কিশোর গ্যাংয়ের একটি তালিকা তৈরি করেছে তারা। ওই তালিকায় নিয়মিত মামলার আসামি রয়েছে ৩১ জন। অভিযানে এদেরকেই টার্গেট করছে পুলিশ। হোন্ডা পার্টির এসব অভিযানে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে অর্ধশতাধিক কিশোরকে বিভিন্ন অপরাধে আটক করে মুচলেকা নিয়ে তাদের পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও শতাধিক কিশোরের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুরো জেলাতেই এই অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছেন কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ। এজন্য অভিভাবক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সকলে সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, মাদক ও কিশোর অপরাধ দমনে পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অভিভাবক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা চাই। শহরের বিভিন্ন জায়গাতে ‘পুলিশের হোন্ডা পার্টি’ নিয়মিতই অভিযান চালাচ্ছে। এছাড়া কোনো কিশোরকে আটক করার পর সঙ্গে সঙ্গে অভিভাবকের কাছে মুচলেকা দিয়ে হস্তান্তর করা হচ্ছে। অপরাধী হিসেবে নয়, প্রথম অবস্থায় সর্তক করার জন্য ধরা হচ্ছে। তবে কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। অভিভাবকদের সচেতন করা হচ্ছে কিশোরদের সব বিষয়ে যেন তারা খোঁজ-খবর রাখেন।

তিনি আরও বলেন, এমন অনেক কিশোর আছে যাদেরকে আটক করার পরে অভিভাবকদের জানানো হয় নিয়ে যাওয়ার জন্য কিন্তু অভিভাবক তাদের নিতে চায় না। বলে ওরে কারাগারে পাঠান, তার কারণে আমরা অতিষ্ঠ।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, বর্তমানে মাদক এবং কিশোর গ্যাং প্রত্যেকটা এলাকার জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর কারণে চুরি, ছিনতাই, মারামারিসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত হয়। তাই মাদক ও কিশোর গ্যাং নির্মূলে কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ সর্বদা তৎপর রয়েছে।

সন্ধ্যার পর কিশোরদের মোটরবাইক দিয়ে মহড়া এবং দলগতভাবে আড্ডা দেওয়া বন্ধে করতে পুরো শহরে পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এদিকে পুলিশের এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন সমাজ কর্মী, শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকরা।

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করেন কবি ও লোকজ সংস্কৃতি গবেষক জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, পুলিশ কিশোর অপরাধ দমনে যে উদ্যোগ নিয়েছে তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। তবে মনিটরিং প্রয়োজন। এছাড়া কোমলমতি শিশু ও অভিভাবকরা যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকেও পুলিশের খেয়াল রাখা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছরে কিশোরগঞ্জ শহরে একটি প্রধান ও বড় সমস্যা হিসেবে কিশোরগ গ্যাং এবং কিশোরদের মাদকাসক্তি স্কুলগামী মেয়েদেরকে উত্ত্যক্ত ইত্যাদি নানা সমস্যা একটি বড় সমস্যা হিসেবে পরিণত হয়েছে। শহরবাসী এদের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। বিভিন্ন সময় এ ব্যাপারে অনেক লেখালেখি হয়েছে। কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার নালিশ জানানো হয়েছে। আসলে কাজের কাজ তেমন কিছু হয়নি। নতুন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি একটি অভিনব ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তা হলো, পুলিশের বিশেষ একটি টিম সন্ধ্যার পরে শহরে টহলের ব্যবস্থা করেছে। কিশোর গ্যাং ও মাদকসেবিদের ধাওয়া দিচ্ছে। যারা চরিত্রগতভাবে বখাটে হয়ে গেছে তাদেরকে ধরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠাচ্ছে। এতে করে কিশোরগঞ্জে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে।

গুরুদয়াল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী শরীফ আহমেদ বলেন, মাসখানেক আগেও সন্ধ্যার পরে কিশোরগঞ্জ শহরের অলিতে-গলিতে বের হতে আমাদের মাঝে ভয় কাজ করতো। পুলিশের হোন্ডা পার্টির নিয়মিত এ অভিযানের কারণে শহরে কিশোর অপরাধ ও কিশোর গ্যাংয়ের আধিপত্য অনেকটাই কমে এসেছে। এখন রাতের ৮টা ১০টাও বের হলে আমাদের মধ্যে একটা সস্তি থাকে কিছু হবে না। পুলিশের যে হোন্ডা পার্টি আছে তারা নিয়মিতই শহরে টহল দিচ্ছে।

অভিভাবক দারুল ইসলাম  বলেন, পুলিশের এ উদ্যোগে আমরা খুশি। আমরা পুলিশকে সহযোগিতা করতে চাই। তাছাড়া আমাদেরকেও পারিবারিকভাবেও সচেতন হতে হবে।

কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোস্তাক সরকার বলেন, কিশোরগঞ্জ শহরে কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে প্রায় দেড় মাস যাবৎ মোটরসাইকেলে করে পুলিশের এ হোন্ডা পার্টির বিশেষ অভিযান চলছে। এ সময় দুটি ছিনতাইয়ের মামলা ও মোটরযান আইনে শতাধিক মামলা হয়। এ ছাড়া অভিযানে আটকদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মুচলেকা নিয়ে অভিভাবকের জিম্মায় দেয়া হয়েছে।