কাশ্মীর ইস্যু আবারো জাতিসংঘে, চীনকে নিয়ে ভারতের হতাশা বাড়ছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:  চীন ২০১৯ সাল থেকে অব্যাহতভাবে কাশ্মীর ইস্যু জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপন করে যাচ্ছে। গত সপ্তাহে, ৫ আগস্ট, চীন আবারো জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ‘অ্যানি আদার বিজনেস’ ক্যাটাগরিতে কাশ্মীর প্রশ্নে আলোচনা করার আহ্বান জানায়। ২০১৯ সালের আগস্টে ও ২০২০ সালের জানুয়ারির পর এবার তৃতীয়বারের মতো চীন কাজটি করল।

চীনাদের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ভারতের প্রতিক্রিয়া আরো কঠোর হওয়ায় মনে হচ্ছে, ভারত সরকার বেইজিংয়ের প্রতি ধৈর্য হারাচ্ছে।

কাশ্মীর ১৯৭১ সাল থেকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এজেন্ডায় ছিল না। ভারত ২০১৯ সালের আগস্টে অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার অবসান ঘটানোর পর চীন কাশ্মীর ইস্যুটি নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপন করে। চীন অব্যাহতভাবে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল ও রাজ্যটিকে দ্বিখণ্ডিত করে কেন্দ্র-শাসিত দুটি অংশে পরিণত করার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিল। ২০১৯ সালের আগস্টে চীন বলে যে ভারতীয় সিদ্ধান্ত অগ্রহণযোগ্য। চীনের সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করে ভারত বলেছিল যে সিদ্ধান্তটি তার নিজস্ব বিষয়। এতে বৈদেশিক সীমান্তে কোনো প্রভাব পড়বে না।

গত সপ্তাহে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভার পর জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি টুইট করেন, পাকিস্তানের আরেকটি চেষ্টা ভণ্ডুল হয়ে গেল! টুইটে চীনের নাম না থাকলেও ভারতীয় কর্মকর্তারা চীনকেই এ জন্য দায়ী করছেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা লক্ষ্য করছি যে জম্মু ও কাশ্মীরের ভারতীয় ভূখণ্ড নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছ চীন। ভারতের একান্তই নিজস্ব একটি বিষয়কে উত্থাপন করার চেষ্টা চীনের এবারই প্রথম নয়। তারা কাজটি আরো অনেকবার করেছে এবং প্রতিবারই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে সমর্থন পেয়েছে সামান্যই। আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে চীনা হস্তক্ষেপ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি এবং এ ধরনের নিষ্ফল প্রয়াস থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।

পরিচয় প্রকাশ না করে ভারতীয় কর্মকর্তারা বলেন যে চীনা চেষ্টা খণ্ডন করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স। তারা ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন যে চীনা পদক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ করতে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্ব গ্রহণ করেছে এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অন্যান্য দেশ তা অনুসরণ করছে।

চীনা মন্তব্যের প্রতি ভারতীয় প্রতিক্রিয়া ক্রমাগত ক্রুদ্ধ হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেছেন যে কাশ্মীর ইস্যুর প্রতি বেইজিং তীক্ষ্ণ নজর রাখছে এবং কাশ্মীরের স্থিতিবস্থা পরিবর্তনের যেকোনো একতরফা পরিবর্তন অন্যায় ও অবৈধ। ওই মুখপাত্র আরো বলেন, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে সংলাপ ও পরামর্শের মাধ্যমে ইস্যুটির শান্তিপূর্ণ সমাধান হওয়া উচিত। ওয়াং আরো বলেন যে চীন আন্তরিকভাবে আশা করে যে দুই পক্ষ সংলাপের মাধ্যমে যথার্থভাবে বিষয়টি সামাল দিতে পারবে, সম্পর্ক উন্নয়ন করবে এবং দুই দেশ ও অঞ্চলের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের নিরাপত্তা বিধান করবে যৌথভাবে।

অনেক ভদ্র ভাষা ব্যবহার করলেও ভারতের প্রতিক্রিয়া ছিল বেশ কঠোর। ভারত জানায়, চীনা পক্ষ এ ব্যাপারে কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট নয়। তারা অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারে না।

ভারতীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এতে চীনা আচরণে ভারতের হতাশার বিষয়টিই ফুটে ওঠছে। সাম্প্রতিক এক সাক্ষাতকারে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সুনির্দিষ্টভাবে বলেন যে আমাদের সম্পর্কের সীমান্ত ও ভবিষ্যত… আলাদা করা যাবে না। এর মাধ্যমে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে সীমান্তে অচলাবস্থা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে।

ভারত দুইয়ের মধ্যে আগেও সংযোগ স্থাপন করেছিল, কিন্তু এমনভাবে নয়।

সমমনা ইন্দো-প্যাসিফিক অংশীদারদের সাথেও কৌশলগত অংশীদারিত্ব জোরদার করছে ভারত। কয়েকটি কারণে তা হচ্ছে। এসবের মধ্যে রয়েছে মহামারীর বিস্তার, লাদাখে চীনা সামরিক উপস্থিতি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেইওর সাথে সংলাপ প্রশ্নে টুইটে জয়শঙ্কর বলেন যে তিনি অদূর ভবিষ্যতে কোয়াড ফরম্যাট নিয়ে আলোচনা করবেন।

এর এক দিন পর মন্ত্রী পম্পেইও, অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যারাইজ পেইন ও অন্যদের সাথে ভার্চুয়াল সভা করেন।

লাদাখ সঙ্ঘাত ও সেইসাথে আরো বিস্তৃত অর্থে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ব্যাপারে চীনের অপরিবর্তনীয় অবস্থানের ব্যাপারে নয়া দিল্লীর কর্মকর্তাদের মধ্যে যে হতাশা বাড়ছে, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে কমই। এমনকি বর্তমান সমস্যার যদি সমাধানও হয়, তবুও চীন-ভারত সম্পর্ক নিকট ভবিষ্যতে স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।