কমছে ডালের আবাদ, বাড়ছে আমদানি

কমছে ডালের আবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক: মসুর, ছোলা বা ডাবলি নাম যা-ই হোক, ডাল মানেই যেন আমদানিনির্ভরতা। সময় যতই গড়াচ্ছে ডালের চাহিদা বাড়ছে হু হু করে। কিন্তু জমি কমে যাওয়ায় উৎপাদন বাড়ছে না কাঙ্খিত হারে। তানজানিয়া, মোজাম্বিক, মিয়ানমার থেকে দেশে মুগ ডাল আমদানি করা হয়। রোজা আসলে প্রতিবছর বিশ্ববাজারে ছোলার দাম বেড়ে যায়। এই সুযোগে মিয়ানমার ও অস্ট্রেলিয়াও ছোলার ডালের দাম বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে, মসুর ডালের চাহিদা পূরণে চেয়ে থাকতে হয় নেপাল, চীন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি দেশের দিকে।

দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলার পাশাপাশি জনগণের সুষম খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে ডাল গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। কিন্তু কৃষকরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ায় প্রতিবছরই কমছে ডালের আবাদ। বাংলাদেশে বর্তমানে ডালের মোট চাহিদা ২৫ লাখ মেট্রিক টন হলেও বছরে উৎপাদন কমতে কমতে এসে ঠেকেছে মাত্র ৯ লাখ মেট্রিক টনে। ফলে প্রতিবছর ১৫ থেকে ১৬ লাখ মেট্রিক টন ডাল আমদানি করতে হয়।

বাংলাদেশের বৃহত্তর ফরিদপুর ও বরিশাল অঞ্চল ডাল উৎপাদনের অন্যতম এলাকা। দেশের মোট উৎপাদনের ৬০% মুগ, ৩০% খেসারি, ১৫% মসুর ও ৫০% ফেলন ডাল এই অঞ্চল থেকেই আসে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে ইতোমধ্যেই সাতটি ডালের ৪২টি উন্নত জাত ও ৪১টি উন্নত চাষাবাদ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হলেও এ অঞ্চলের কৃষকদের নিকট এখনো সেগুলো পৌছাতে পারেনি সরকার। ফলে এখনো সনাতন পদ্ধতিতে ডাল চাষাবাদ করেন কৃষকরা।

ডাল গবেষণা ও উন্নয়ন কাযর্ক্রম পরিচালনার জন্য ‘মসুর, মাসকলাই ও মুগ ডালের পাইলট প্রকল্প’র অর্থায়নে ১৫ একর জমিতে ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মাদারীপুর উপকেন্দ্রটি। পরে এটিকে আঞ্চলিক ডাল গবেষণা কেন্দ্রে উন্নীত করা হয়। পরে এখানে আরও ৩০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করে ডালের নতুন জাত উদ্ভাবন ও উন্নত চাষাবাদ প্রযুক্তি বিস্তার করা হয়।

জানা গেছে, তিনটি উচ্চ ফলনশীল জাত ও ১৫টি উপযুক্ত ডাল উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হবে। ডালের ৫০০টি জার্মপ্লাজম সংগ্রহ ও ১৫০ মেট্রিক টন উন্নত মানের বীজ সংগ্রহ করা হবে।

উদ্ভাবিত জাত ও প্রযুক্তিগুলোর ফরিদপুর ও বরিশাল অঞ্চলের ১১টি জেলার ৫০টি উপজেলায় মাঠ পর্যায়ে উপযোগিতা যাচাই করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ১৩ হাজার ৫০০ জন কৃষক, ৬০০ জন বিজ্ঞানী, ৬০০ জন সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, এনজিওকর্মী ও ২৮ হাজার কৃষকদের নিয়ে মাঠ দিবস ও কৃষক সমাবেশ আয়োজন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় একটি ল্যাবরেটরি ভবন, ৩০ একর জমি, ১১ হাজার ৬০৮ বর্গমিটার অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে আঞ্চলিক ডাল গবেষণা কেন্দ্রের সক্ষমতা বাড়ানো হবে।

এছাড়া, মাদারীপুরে আঞ্চলিক ডাল গবেষণা কেন্দ্রের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও বৃহত্তর বরিশাল, ফরিদপুর অঞ্চলে ডালের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই)। প্রকল্পে মোট ব্যয় করা হবে ১৭৬ কোটি টাকা। তিন বিভাগের ১৩টি জেলার ৫২টি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

বিএআরআই সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ডালের উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি উদ্ভাবিত উন্নত জাত ও প্রযুক্তিগুলোর বিস্তার ঘটবে। অনাবাদি ও একফসলি জমিতে ডাল আবাদের আওতায় আনার মাধ্যমে এর আমদানিনির্ভরতা কমানো যাবে।

বিএআরআইয়ের (সিড মনিটরিং) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার জানায়, উচ্চমূল্যের ফসলের কারণে ডাল উৎপাদন কমছে। কৃষকেরা সবজি চাষ করে বেশি লাভবান হচ্ছেন, সেই তুলনায় ডাল চাষে লাভও কম, আয়ও কম। বর্তমানে প্রতি হেক্টরে দুই টন মুগ-খেসারি উৎপাদিত হচ্ছে, যেখানে আগে ছয় থেকে সাতশ’ কেজি হতো।