কথিত উন্নয়নের নামে মসজিদ ভাঙ্গা যাবে না : ওলামালীগ

কথিত উন্নয়নের নামে মসজিদ ভাঙ্গা যাবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘সৌন্দর্য বর্ধন তথা উন্নয়নের নামে’ ৭৭টি মসজিদ ভাঙার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ। রোববার (২৬ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এসব দাবি জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মাওলানা মুহম্মদ আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী।

বক্তারা বলেন, সুরা নূরের ৩৬ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন “যেসব পবিত্র ঘরসমূহে সকাল সন্ধ্যায় মহান আল্লাহ তায়ালা উনার পবিত্র নাম স্মরণ ও তাসবীহ তাহলীল পাঠ করা হয় সে সব পবিত্র ঘর সমূহকে উত্তমরূপে সংরক্ষণ করো।” অর্থাৎ পবিত্র মসজিদ ভাঙ্গা বা স্থানান্তর করা যাবেনা। বরং উত্তমভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহ্ আনহু হতে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা পবিত্র মসজিদ ভেঙ্গে রাস্তা হিসেবে (অন্য কোন কাজে) ব্যবহার করো না। বরং উত্তমভাবে সংরক্ষণ করো।

বক্তারা বলেন, কথিত উন্নয়নের নামে ১৯৮৯ সালে নুর মুহাম্মদ মিয়ার দানকৃত ১৯৯৫ সালে রেজিস্ট্রি মূলে ওয়াকফকৃত ৬ শতক ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত হাতিরঝিলের আলোচিত ভাসমান বায়তুল মাহফুজ মসজিদটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। ফেনীর মহিপালে ফ্লাইওভারের জন্য মহাপবিত্র মসজিদ ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। কয়েক বছর আগে রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় কামাল পাশা সরণির উন্নয়নের নামে ৫টি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ও একটি মাদরাসার অনেকাংশ ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি নদী তীরের আরো ৭৭টি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বক্তারা বলেন, মসজিদ ভাঙ্গা বা স্থানান্তরের নির্দেশ দিলেও ২০১৭ সালে মিরপুর-২-এর ২২/১৯ বড়বাগ ঠিকানার ‘নাজারেথ নভিসিয়েট ও এসএল লুইজেন সিস্টারস নামক একটি গির্জা না ভেঙ্গে ৩ রাস্তার মোড় করে সংযুক্ত করা হয়েছে। হাতিরঝিল রাস্তা বানাতে গৌরাঙ্গ মন্দির না ভেঙ্গে রাস্তা বানানো হয়েছে। হিন্দু বাউলদের বাড়িঘর বাচাতে নরসিংদীর শহর রাস্তার বাধের কাজ ৯ বছর আটকে রাখা হয়েছে। সিলেটে গির্জার দেয়াল বাচাতে রাস্তার উন্নয়ন বন্ধ রাখা হয়েছে। চট্টগ্রামের পুটিয়ার ইন্দ্রপুর মহাসড়কের নির্মাণ কালে ১টি মন্দির ও শ্মশান ও হিন্দুদের কয়েকটি ঘর সরানোর প্রয়োজন থাকলেও সেতুমন্ত্রী আশ্বাস ১টি মন্দির ও শ্মশান, হিন্দুদের বাড়িঘর অক্ষত রেখে রাস্তা ঘুরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গীর্জা, মন্দির এমনকি হিন্দুদের বাড়িঘর অক্ষত রাখলেও সরকারিভাবে কেন মসজিদ ভাঙ্গা বা স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে কেন?

সংবিধানের ২(ক) অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রত্যেক মুসলমানকে ইসলামী আদর্শে উজ্জিবিত থাকার অধিকার বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র নিশ্চিত করে। অথচ সে সুবিধা থেকে দেশের মুসলমানগণ বঞ্চিত হচ্ছে। যে কারণে মাদক, সন্ত্রাস, বাবা-মাকে হত্যা, দুর্ঘটনা, দুর্নীতি, খাদ্যে ভেজাল ইত্যাদি বিভিন্ন রকম অপ্রীতিকর ঘটনা সমাজে মারাত্মক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই শিক্ষা সিলেবাসে এবং সমাজের সর্বস্তরে ইসলামী চেতনার প্রতিফলনে রাষ্ট্র ও সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

বক্তারা বলেন, ‘ধর্ম শিক্ষা থেকে দূরে সরে আসায় শিশুও নারী নির্যাতন, হত্যা বেড়েছে। এজন্য নীতি নৈতিকতা এবং ধর্মীয় অনুশাসনের অভাব। কারণ দেশের শিক্ষাব্যবস্থাসহ কোন ক্ষেত্রেই ইসলামী শিক্ষা নেই। ইসলামী মূল্যবোধ তুলে দেয়া হয়েছে। ‘সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস’ এটাও বর্তমান সংবিধান নেই। এতে মুসলমানরা ইসলামী আক্বীদা বিশ্বাস থেকে দূরে সরে গেছে। খোদাভীতি ভ‚লতে বসেছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবার মধ্যে ইসলামী মূল্যবোধের অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে। পরকীয়ার মতো অপরাধে লিপ্ত হয়ে মা-বাবা কর্তৃক শিশু হত্যার মতো অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটাচ্ছে। মাদক, সন্ত্রাস, বাবা-মাকে হত্যা, দুর্ঘটনা, দুর্নীতি, খাদ্যে ভেজাল ইত্যাদি বিভিন্ন রকম অপ্রীতিকর ঘটনা সমাজে মারাত্মক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই শিক্ষা সিলেবাসে এবং সমাজের সর্বস্তরে ইসলামী চেতনার প্রতিফলনে রাষ্ট্র ও সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

সমাবেশ ও মানবন্ধনে সমন্বয় করেন বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মাওলানা মুহম্মদ আখতার হুসাইন বুখারী। আরও বক্তব্য রাখেন- সম্মিলিত ইসলামী গবেষণা পরিষদের সভাপতি আলহাজ্জ হাফেজ মাওলানা মুহম্মদ আব্দুস সাত্তার, সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল জলিল, মাওলানা মুহম্মদ শওকত আলী শেখ ছিলিমপুরী প্রমুখ।