এক ক্লিকে এইচএসসি ফলাফলের সমস্ত খবর

ডেস্ক: পাঠকদের সুবিধার্থে এইচএসসি ও সমমানের ফলাফল নিয়ে প্রকাশিত যাবতীয় খবরাখবর একত্র করে প্রকাশ করা হলো-

গড় পাসের হার ৭৪.৭০ শতাংশ:

চলতি ২০১৬ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৭৪.৭০ শতাংশ। সারাদেশে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৮ হাজার ২৭৬ জন শিক্ষার্থী। গত বছর গড় পাসের হার ছিল ৬৯ দশমিক ৬০ শতাংশ। এ বছর ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৭৩.৫৩ শতাংশ, কুমিল্লা বোর্ডে পাসের হার ৬৪.৪৯ শতাংশ, সিলেট বোর্ডে পাসের হার ৬৮.৫৯ শতাংশ, চট্টগ্রাম বোর্ডে পাসের হার ৬৪.৬০ শতাংশ, দিনাজপুর বোর্ডে পাসের হার ৭০.৬৪ শতাংশ, রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার ৭৫.৪০ শতাংশ, বরিশাল বোর্ডে পাসের হার ৭০.১৩ শতাংশ ও যশোর বোর্ডে পাসের হার ৮৩.৪২ শতাংশ। মাদরাসা বোর্ডে পাসের হার ৮৮.১৯ শতাংশ। মোট পাস করেছে ৮০ হাজার ৬০৩ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২,৪১৪ জন।

কারিগরি বোর্ডে পাসের হার ৮৪.৫৭ শতাংশ। মোট পাস ৮৬ হাজার ৪৬৯ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬,৫৮৭ জন। এবার ছেলেদের পাসের হার ৭৩.৯৩ শতাংশ, মেয়েদের পাসের হার ৭৫.৬০ শতাংশ। সিলেট বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১,৩৩০ জন, কুমিল্লা বোর্ডে ১,৯১২ জন, রাজশাহী বোর্ডে ৬,০৭৩ জন, চট্টগ্রাম বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২,২৫৩ জন, দিনাজপুর বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩,৮৯৯ জন, বরিশাল বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭৮৭ জন, যশোর বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪,৫৮৬ জন।

বিদেশে ৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ২৪৮ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। পাস করে ২৩২ জন। পাসের হার ৯৩.৫৫ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৩ জন। এ বছর মোট পাস করেছে ৮ লাখ ৯৯ হাজার ১৫০ জন। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪১ হাজার ৪৬৮ জন। এবার এইচএসসিতে কলেজ বোর্ডগুলোর ফলাফলে পাসের হার ৭২.৪৭ শতাংশ, মোট পাস করেছে ৭,২৯,৮০৩ জন ও জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৮,৯৫০ জন।

বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে গণভবনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে ফলের অনুলিপি হস্তান্তর করে। আজ দুপুর ১টায় সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ফলের বিস্তারিত তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী। দুপুর ২টা থেকে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং মোবাইল এসএমএস ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফল জানতে পারা যায়।

গত ৩ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সারাদেশে দুই হাজার ৪৫২টি কেন্দ্রে ১২ লাখ ১৮ হাজার ৬২৮ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে ছাত্র ৬ লাখ ৫৪ হাজার ১১৪ জন ও ছাত্রী ৫ লাখ ৬৪ হাজার ৫১৪ জন। ২০১৫ সালের তুলনায় এবার এক লাখ ৪৪ হাজার ৭৪৪ জন বেশি শিক্ষার্থী অংশ নেয়।

৮৪৮ কলেজে সবাই পাস, সবাই ফেল ২৫ প্রতিষ্ঠানে:

চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় শতভাগ পাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে। একই সঙ্গে একজনও পাস করেনি- এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও আগের তুলনায় কমেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে ফলাফল প্রকাশের পরে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।

নাহিদ বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর শতভাগ পাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে। এবার শতভাগ পাশ করেছে ৮৪৮টি প্রতিষ্ঠানে। গত বছর শতভাগ পাস ছিল ১ হাজার ১৩৩টি প্রতিষ্ঠানে।’ শতভাগ পাসের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমে যাওয়াকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী।

অন্যদিকে এবার দেশের ২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সবাই ফেল করেছে। গত বছর শূন্য পাস করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৩৫টি। গত বছরের তুলনায় এবার শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমে ২৫ টিতে নেমে এসেছে। প্রসঙ্গত, শুন্য পাসের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমে যাওয়াকে সবসময়ই ইতিবাচক হিসেবে দেখা হয়।

উল্লেখ্য, এবার সারা দেশে আটটি সাধারণ শিক্ষাবোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের গড় হার ৭৪ দশমিক ৭০। আটটি শিক্ষা বোর্ডের পাসের হার ৭২ দশমিক ৪৭। মাদ্রাসা বোর্ডে পাসের হার ৮৮ দশমিক ১৯ এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে এবার পাসের হার ৮৪ দশমিক ৫৭।

মাদ্রাসায় পাসের হার ৮৮.১৯ শতাংশ:

মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে এ বছর আলিম পরীক্ষায় অংশ নেয় ৮৯ হাজার ৬০৩ পরীক্ষার্থী। অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় বাড়লেও কমেছে পাসের হার। বৃহস্পতিবার চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক, আলিম ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ফল-সংক্রান্ত তথ্য দেন।

এ বছর আলিম পরীক্ষায় পাসের হার ৮৮ দশমিক ১৯ শতাংশ। গত বছর যা ছিল ৯০ দশমিক ১৯ শতাংশ। মাদ্রাসা বোর্ডে এ বছর জিপিএ ৫ পেয়েছে দুই হাজার ৪১৪ জন। গত বছর ওই সংখ্যা ছিল এক হাজার ৪৩৫ জন।

এ বছর আলিম পরীক্ষায় পাস করেছে ৭৯ হাজার ২০ জন। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৭৪ হাজার ৪৬১ জন। গত বছরের তুলনায় এ বছর চার হাজার ৫৫৯ জন বেশি পাস করেছে। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যাও ছিল বেশি। গত বছর ৮২ হাজার ৫৫৮ পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এ বছর সাত হাজার ৪৫ জন বেশি পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছে।

একাদশে ভর্তিতে আরও ৩ দিন:

নির্ধারিত সময়ের মধ্যেও যারা একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারেননি তাদের কলেজে ভর্তি হতে আরও তিন দিন সময় দিয়েছে সরকার।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, এখনও অনেকে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারেনি, তারা ভর্তি হতে বোর্ডে আবেদন করেছে। এ কারণে আগামী ২১ থেকে ২৩ অগাস্ট ভর্তি হতে সময় দেয়া হল। “নানা কারণে তারা নির্ধারিত সময়ে ভর্তি হতে পারেনি। অনেকে আর্থিক কারণে, কোনো ছাত্রীর বিয়ে হয়ে যাওয়ায়, কেউ বিদেশে গিয়ে আবার দেশে এসেছে…।” নাহিদ বলেন, ওই তিন দিন যে কোনো বোর্ডের আওতায় আসন খালি থাকা সাপেক্ষে যে কোনো কলেজে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারবে।

ঢাকার কলেজগুলোতে ৪৩ হাজারের বেশি আসন ফাঁকা থাকার তথ্য জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “সারা দেশে ৭ লাখ আসন ফাঁকা আছে, ভর্তি হওয়ার কোনো অসুবিধা নেই।”

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি গত ১৬ জুন একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির মেধাতালিকা প্রকাশ করে। নির্বাচিত তালিকা থেকে গত ১৮ থেকে ২২ জুন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। আসন খালি থাকা সাপেক্ষে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি হয় ২৫ থেকে ২৭ জুন।

গত ১০ জুলাই সব কলেজে একযোগে একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হলেও ১০ থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত বিলম্ব ফি দিয়ে ভর্তির সুযোগ দেয়া হয় মাধ্যমিক উত্তীর্ণদের।

সিলেটে ৫ বছরের মধ্যে খারাপ ফল:

সিলেট শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসিতে এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে খারাপ ফল এসছে এ বোর্ডে। বোর্ডে এবার পাশের হার ৬৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ । গত বছর এই হার ছিল ৭৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ । গত বছর ১ হাজার ৩৫৬ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। এবার পেয়েছেন ১ হাজার ৩৩০ জন। এবার মোট ৬৩ হাজার ৯৫৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছেন ৪৩ হাজার ৮৭০ জন। বৃহস্পতিবার দুপুরে বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে ফল প্রকাশ করেন বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শামসুল ইসলাম। ইংরেজি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে বেশি শিক্ষার্থী ফেল করায় এবার ফল খারাপ হয়েছে বলে মনে করেন বোর্ড কর্মকর্তারা।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শামসুল বলেন, “গতবছর ইংরেজি বিষয়ে ৮৫ দশমিক ৮২ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করলেও এবার পাস করেছেন ৭৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে গতবছর ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করলেও এবার পাস করেছেন ৯৩ শতাংশ। এ দু’টি বিষয় আবশ্যিক হওয়ায় ফলাফলে প্রভাব পড়েছে।”

তবে ফল বেশি খারাপ হয়েছে এমনটা মানতে নারাজ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাসমুল ইসলাম। তার মতে, সার্বিক ফলাফল ভালই হয়েছে। “দেশের অন্যান্য বোর্ডের ফলাফল বিশ্লেষন করলে ফল বেশি খারাপ হয়েছে বলা যাবেনা,” বলেন তিনি। সিলেট বোর্ডের অধীনে চার জেলায় পাসের হার- সিলেটে ৭৩ দশমিক ৩০, হবিগঞ্জে ৬৭ দশমিক ২০, মৌলভীবাজারে ৬০ দশমিক ৬২ ও সুনামগঞ্জে ৬৯ দশমিক ২০ শতাংশ।

পাঁচ বছরে খারাপ ফল:

বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে খারাপ ফল করেছে সিলেট শিক্ষা বোর্ড। ২০১২ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৮৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এছাড়া ২০১৩ সালে ৭৯ দশমিক ১৩ শতাংশ, ২০১৪ সালে ৭৯ দশমিক ১৬ শতাংশ এবং ২০১৫ সালে ৭৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ ছিল পাসের হার।

এগিয়ে ছেলেরা:

গত বছর মেয়েরা ভাল ফল করলেও এবার ছেলেরা বেশি পাস করেছেন। ২৯ হাজার ৫৫৩ জন ছেলে পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছেন ২০ হাজার ৭৭৯ জন। অন্যদিকে ৩৪ হাজার ৪০৬ জন মেয়ে পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ২৩ হাজার ৯১ জন।

বিজ্ঞান বিভাগের ভাল ফল:

বোর্ডে এবার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সবচেয়ে বেশি করেছে ৮৭ দশমিক ২৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। এছাড়া ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ৭৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ, মানবিক বিভাগে ৬২ দশমিক ৬১ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। সিলেট বোর্ডে এবার এক হাজার ৩৩০ জন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকেই পেয়েছেন এক হাজার ৭৬ জন। বোর্ডের এবারের একমাত্র সাফল্য- কেউ পাস করেননি এমন কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। পরীক্ষায় অংশ নেয়া ২৪৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পাঁচটির শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছেন।