ঋণের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও অতিক্রম সরকারের

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদায়ী অর্থবছরে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ গ্রহণ করল ৮৫ হাজার কোটি টাকা, যা কি না সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৩ হাজার কোটি টাকা বেশি। সংশোধিত বাজেটে ব্যাংক থেকে ঋণগ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮২ হাজার কোটি টাকা, যা মূল বাজেটের প্রায় দ্বিগুণ। মূল বাজেটে ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা। সরকারি ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৩০ জুনভিত্তিক পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিদায়ী অর্থবছরের সরকার ব্যাংকঋণের মধ্যে প্রায় ৭৯ হাজার কোটি টাকাই নেয়া হয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে। বাকি ৬ হাজার কোটি টাকা নেয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে। ব্যাংকঋণের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণই বেশি। অর্থাৎ ১০ বছর, ১৫ বছর ও ২০ বছর মেয়াদি বন্ডের মাধ্যমে ঋণ নেয়া হয়েছে বেশি পরিমাণ।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকার বাজেট ঘাটতি অর্থায়নের জন্য ৮৪ হাজার কোটি টাকার ব্যাংকঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেখানে বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে ছিল প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু সরকারের কাঙ্ক্ষিত হারে রাজস্ব আদায় না হওয়ায় ব্যয় ঠিক রাখতে শেষ মুহূর্তে ব্যাংক খাত থেকেই অতিরিক্ত ঋণ নিতে হয়। বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ব্যাংকঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৪৭ হাজার কোটি টাকা থেকে ৮২ হাজার কোটি টাকা করা হয়। কিন্তু এতেও কুলাতে না পেরে শেষ মুহূর্তে তা বেড়ে ৮৫ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছে।

ব্যাংকারদের মতে, এতে দেশের অর্থনীতির জন্য মোটেও ভালো ফল বয়ে আনছে না। কারণ, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করলে নতুন নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপন হয়। সৃষ্টি হয় বর্ধিত হারে কর্মসংস্থান। এতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে। বাড়ে অর্থনৈতিক লেনদেন। আর অর্থনৈতিক লেনদেনের বেশির ভাগই হয় ব্যাংকিং খাতের মাধ্যমে। এতে ব্যাংকেরও ব্যবসা বাড়ে, বাড়ে শাখা প্রশাখা। সামগ্রিকভাবেই অর্থনৈতিক চাকা সচল হয়। কিন্তু যেভাবে ব্যাংক খাত থেকে বাড়তি ঋণ ছেঁকে নেয়া হচ্ছে তাতে বেসরকারি খাতের ঋণ দেয়ার মতো অর্থ ব্যাংকের কাছে থাকবে না। আর চলমান পরিস্থিতিতে বেশির ভাগ ব্যাংকই বেসরকারি খাতে ঋণ দিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। এর অন্যতম কারণ হলো ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করার একটি অলিখিত সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। ব্যাংক থেকে রাঘববোয়ালরা ঋণ নিয়ে আর ফেরত দিচ্ছেন না। তাদের বিরুদ্ধে শক্ত কোনো অবস্থান গ্রহণ না করে বরং বিভিন্ন নীতিসহায়তা দিয়ে ছাড় দেয়া হচ্ছে। এতে যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করতেন তারাও আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ব্যাংকঋণের সুদহার ৯ শতাংশ বেঁধে দেয়া হয়েছে। এই ৯ শতাংশ সুদে উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ দিয়ে ফেরত পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর সরকারের দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ দিলে ১০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ পাওয়া যায়। একই সাথে ব্যাংকগুলোর যেকোনো সঙ্কট মেটাতে সরকারি বিল ও বন্ড বন্ধক রেখে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ধার নেয়া যাবে। এ কারণে এখন বেশির ভাগ ব্যাংক বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করার পরিবর্তে সরকারের ঋণ দিতেই বেশি উৎসাহী হয়ে পড়েছে।