ঋণখেলাপি ঋনের তালিকা তৈরির অগ্রগতি জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট

নিউজ ডেস্ক: গত ২০ বছরে ব্যাংকের ঋণখেলাপি ও অর্থপাচারকারীদের তালিকা প্রস্তুত এবং ব্যাংকিং খাতে কী পরিমাণ অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে তা নির্ণয়ে একটি শক্তিশালী কমিশন গঠনের অগ্রগতি জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন চেয়েছেন আদালত।

শুনানিতে খেলাপি ঋণ আদায় না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে হাইকোর্ট বলেছেন, দেশে বড় বড় রাঘববোয়াল আছেন, যারা ব্যাংক লুট করে ফেলল, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। আমরা দেখছি ব্যবস্থা না নিয়ে আর বেশি করে ঋণ নেয়ার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে।

বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার এ মন্তব্য করেন।

শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামান এবং রিটের পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বারবার সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হলেও বেসরকারি ব্যাংকগুলো তা কার্যকর করছে না।

ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা রোধে কমিশন গঠন এবং অর্থপাচারকারী ও ঋণখেলাপিদের তালিকা এক মাসের মধ্যে আদালতে দাখিলের জন্য ১৩ ফেব্রুয়ারি অর্থ সচিব, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরসহ ছয় বিবাদীকে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। কিন্তু ওই তালিকা দাখিল ও কমিশন গঠন না করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপিমুক্ত থাকার সময় তিন মাসের পরিবর্তে ছয় মাস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উল্লেখ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

তিনি বলেন, এ ধরনের সময়সীমা বাড়ানোর ফলে ঋণখেলাপিরা পার পেয়ে যাচ্ছেন।

এ পর্যায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামানের উদ্দেশে আদালত বলেন, সিআইবি রিপোর্টে যখন নাম আসছে না তখন ঋণখেলাপিরা অন্য ব্যাংক থেকে লোন নেয়ার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন। ঋণখেলাপিদের তালিকা চেয়েছি সেটা যাতে দাখিল করতে না হয় সেজন্য কি এই সময়সীমা বাড়ানো?

মনজিল মোরসেদ বলেন, ঋণখেলাপিদের তালিকা যাতে ছোট থাকে সেজন্যই এই পদক্ষেপ। ব্যাংকের আইনজীবী বলেন, এটা সত্য নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব ব্যাংকের কাছে ঋণখেলাপিদের তালিকা চেয়েছেন।

আদালত বলেন, এক মাসের মধ্যে আমরা কমিশন গঠন করতে বলেছিলাম। সেটার কি অবস্থা? আইনজীবী বলেন, এখনও আদেশ পাইনি।

আদালত বলেন, এভাবে উচ্চ আদালতের আদেশ লংঘন করবেন? আমরা যদি কাউকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রাখি সেটা কি শোভনীয় হবে? আপনি তো আদালতের আদেশ ঠিকভাবে পড়েননি। তাহলে কিভাবে ক্লায়েন্ট ডিফেন্ড করবেন। এরপর কমিশন গঠনের বিষয়ে কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে ১৫ দিনের মধ্যে তার অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ব্যাংকের আইনজীবীকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

প্রসঙ্গত, ২৩ জানুয়ারি ব্যাংকিং খাতে অর্থ আত্মসাৎ, ঋণ অনুমোদনে অনিয়ম, বিভিন্ন প্রাইভেট ও পাবলিক ব্যাংকে ঋণের ওপর সুদ মওকুফের বিষয় তদন্ত এবং তা বন্ধে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য কমিশন গঠন করার অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ পাঁচ সচিবকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। গভর্নর ছাড়া নোটিশপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এবং আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব।

মানবাধিকার সংগঠন এইচআরপিবি’র পক্ষে পাঠানো এ নোটিশে সাত দিনের মধ্যে ব্যাংকিং খাতে অনিয়মের বিষয় তদন্ত ও প্রতিরোধে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য ১৯৫৩ সালের ইনকোয়ারি কমিশন অ্যাক্টের অধীনে একটি কমিশন গঠনের অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু সেই নোটিশের কোনো সদুত্তর না পেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।