উৎপাদিত সবজি গর্তে ফেলছে কৃষক!

নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা: লকডাউন পরিস্থিতির কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শহরগুলোতে উৎপাদিত সবজিসহ অন্যান্য পণ্যের সরবরাহ কমেছে। এতে করে দাম বেড়ে সবজিসহ উৎপাদিত অন্যান্য পণ্য কিনতে নাগরিকদের নাভিশ্বাস উঠেছে।
অন্যদিকে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতে সমস্যায় পড়েছে কৃষক। লকডাউনের কারণে পণ্য পরিবহনের সমস্যাতো রয়েছেই, এরপরেও কষ্ট করে মোকামে নিয়ে আসা পণ্যেরও উপযুক্ত দাম পাচ্ছেন না তারা। এ অবস্থায় নিজেদের উৎপাদিত পণ্য জমির পাশেই গর্ত করে ফেলে দিতে বাধ্য হচ্ছে কৃষক।

নারায়নগঞ্জ নগরীর সবজি বিক্রেতা আনিস বলেন, শহরে সবজি কম আসছে। যে কারণে ভোরবেলা নগরীর একমাত্র পাইকারি বাজার দ্বিগুবাবুর বাজারে গিয়ে সবজি ও অন্যান্য সামগ্রী কিনতে হয়। তবে এটাও ঠিক এত কষ্ট করে সংগ্রহ করা সবজিও প্রতিদিন সব বিক্রি হয় না।

নারায়ণগঞ্জের নদী বেষ্টিত চরাঞ্চল বক্তাবলীতে-আলীরটেকে এ এলাকার সবচেয়ে বড় সবজির মোকাম। অন্য সময় মোকাম বেলা ১০টা পর্যন্ত চললেও, এখন সকাল ৮টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়। কৃষকরা দাম পায় না, পরিবহনে অসুবিধা। তাই মোকামে সবজি আনা কৃষকের সংখ্যা কমে গেছে।

মোকামের একটু পর থেকেই শুরু একরের পর একর সবজি জমির। জমিতে ফলেছে বেগুন, টমেটো, ভুট্টা, পোটল, ডাটাসহ নানা সবজি। এর কোনোটা পেকে পচে যাচ্ছে। কোনোটা পচে মিশে গেছে মাটির সঙ্গে। তরুণ কৃষক আসাদুল্লাহদের জমির পাশেই একটা গর্তে প্রচুর বেগুন পড়ে উঁচু হয়ে আছে। আসাদুল্লাহ বেগুন সরিয়ে দেখালো বেগুনের স্তুপের নিচে আছে টমেটো আর উস্তা।
তিনি বলেন, লকডাউনের শুরুতে বক্তাবলী-আলীরটেকের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ শহরের যোগাযোগ একেবারে বিচ্ছিন্ন করে দেয় প্রশাসন। তখন পচতে থাকে বিভিন্ন ধরনের সবজি। মণকে মণ টমেটো, উস্তা, বেগুন মাঠের পাশের গর্তে ফেলে দেন আসাদুল্লা ও তার পরিবার।

দেখা যায় বিভিন্ন সবজির জমির পাশেই এমন গর্ত। ভালো দাম না পাওয়ায় এবং বিক্রি করতে না পারায় এসব গর্তই হচ্ছে উৎপাদিত সবজির ঠিকানা।

স্থানীয় কৃষক আব্দুল আলি বলেন, যে বেগুন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জে মহল্লায় মহল্লায় বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়, সে বেগুন আমরা বিক্রি করছি ৫ থেকে ৭ টাকায়। তা-ও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। আগে প্রতিদিন তিনশ’- সাড়ে তিনশ’ বেপারী নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে বক্তাবলী আসতো সবজি কিনতে। ফেরি বন্ধ থাকায় ও চাহিদা কম থাকায় এখন পনের-বিশজন বেপারী আসছেন।
তিনি বলেন, চার লাখ টাকা খরচ করে সবজির আবাদ করেছিলাম। ধরেছিলাম খরচ উঠে পঞ্চাশ হাজার টাকা লাভ থাকবে। চার লাখ টাকার মধ্যে মাত্র পয়তাল্লিশ হাজার টাকা উঠেছে। বাকি টাকা উঠেনি। তিনি বক্তাবলীর ফেরি সার্ভিস সকাল ছয়টা থেকে দুই ঘণ্টার জন্য হলেও চালু করার দাবি জানান। বলেন, বেপারীরা আসতে পারলে হয়তো সবজি আবাদের চালানটা উঠে আসবে। তাহলে পরের আবাদে সবজির বীজ, সার, কিটনাশক কিনতে বা শ্রমিক খাটাতে কারও কাছে হাত পাততে হবে না।

বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলী কৃষকদের দাবিকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, আমার ইউনিয়নে বলতে গেলে প্রায় সবাই কৃষক। পণ্য শহরে নিতে না পারায় তারা খুব সমস্যায় আছে। আগে ট্রলারও বন্ধ ছিল। আমি উদ্যোগ নিয়ে সীমিত আকারে ট্রলার চালু করেছি। কিন্তু ট্রলারে মাল একবার উঠাতে ও পরে নামাতে খরচ বেশি পড়ে যায়। এছাড়া ভ্যানগাড়ি না আসলে-গেলে মাল পরিবহনে অসুবিধা। প্রশাসন যদি ফেরিটা দুই ঘণ্টার জন্য অন্তত খুলে দিতো, আমার এলাকার মানুষের জন্য অনেক উপকার হতো।