উপসচিবেরা পাবেন সুদবিহীন গাড়ির ঋণ

প্রথম আলো ফাইল ছবি

গাড়ি কেনার জন্য ৩০ লাখ টাকা বিনা সুদের ঋণ পেতে গেলে উপসচিব (ডিএস) হতেই হবে সরকারি কর্মচারীদের। পদমর্যাদার দিক থেকে সমান হলেও বিসিএস ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মচারী অর্থাৎ উপপ্রধানেরা এ ঋণ পাবেন না। এমনকি একই পদমর্যাদার শিক্ষা বা কৃষি ক্যাডারের কর্মচারীরাও পাবেন না এ ঋণ সুবিধা।

সচিবালয়ে সোমবার বিসিএস ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ কথা জানিয়েছেন। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে সংগঠনটির নবনির্বাচিত কমিটির সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে গাড়িসুবিধা দাবি করা হলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এটা অসম্ভব। গাড়িসুবিধা পেতে হলে ডিএস হতেই হবে। ডিএস পদমর্যাদার অন্যদের এ সুবিধা দেওয়া যাবে না।’

উপসচিব থেকে শুরু করে তারও উচ্চ পদের সরকারি চাকরিজীবীদের গাড়ি কেনার জন্য সরকার এককালীন ৩০ লাখ টাকা করে ঋণ দেওয়ার প্রজ্ঞাপন জারি করে গত সেপ্টেম্বরে। ‘বিশেষ অগ্রিম’ নামের এই ঋণের বিপরীতে তাঁদের কোনো সুদ পরিশোধ করতে হবে না। আবার সেই টাকা দিয়ে কেনা গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ, তেলের খরচ ও চালকের বেতন বাবদ সরকার মাসে আরও ৫০ হাজার টাকা করে দেবে।

উচ্চ পদের সরকারি চাকরিজীবীদের ‘প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা’ বলা হয়। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব, সচিব ও জ্যেষ্ঠ সচিব এবং তাঁদের সমমর্যাদার কর্মকর্তারা। গত বছরের জুনে উপসচিবদেরও অন্তত গাড়ি ব্যবহারের দিক থেকে প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঘোষণা করে সরকার।

এরপর গত ২৫ আগস্ট ‘প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিম এবং গাড়িসেবা নগদায়ন নীতিমালা, ২০১৭ (সংশোধিত) ’ নামে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়েছে, ঋণ পেতে হলে সরকারি কর্মকর্তাকে আগে সার্বক্ষণিক গাড়ি ব্যবহারের প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হতে হবে। চাকরিজীবনে একবারই এই ঋণ পাবেন যোগ্য কর্মচারীরা।

ঋণের অর্থ সর্বোচ্চ ১২০টি সমান কিস্তিতে অর্থাৎ ১০ বছরের মধ্যে আদায়যোগ্য। ৩০ লাখ টাকা ঋণের বিপরীতে মাসিক কিস্তি দাঁড়ায় ২৫ হাজার টাকা। ঋণ নেওয়ার পর প্রতি মাসের বেতন থেকে সরকার কিস্তির টাকা কেটে রাখবে। চাকরির মেয়াদকালে সব টাকা আদায় না হলে সরকার তা কেটে রাখবে কর্মকর্তাদের গ্র্যাচুইটি বা পেনশনের টাকা থেকে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে প্রশাসনে দেড় হাজারের বেশি উপসচিব রয়েছেন। তাঁরা সরকারের পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তা। গত ডিসেম্বর থেকেই তাঁরা ঋণ নেওয়া শুরু করেছেন। আর ইকোনমিক ক্যাডারে আছেন ৫০০ জনেরও বেশি।

ইকোনমিক ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী জাহাঙ্গীর আলম গতকাল রাতে বলেন, ‘সরকারের দেওয়া অনেক সুবিধাই প্রশাসন ক্যাডারের মতোই আমরা পাচ্ছি। কিন্তু গাড়ি ঋণ পাচ্ছি না। অবশ্য প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত হয়ে গেলে আলাদা দাবি আর করতে হবে না।’

ইকোনমিক ক্যাডার থাকছে না
এদিকে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে ইকোনমিক ক্যাডার একীভূত হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার বলে জানা গেছে। দুই অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যেকার সমঝোতা চুক্তির ভিত্তিতেই এটি হচ্ছে। ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশনের দাবি ও সচিব কমিটির সম্মতি শেষে একীভূত হওয়ার ফাইলটি অনুমোদনের জন্য এখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রয়েছে।

কাজী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ফাইলটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আছে নয় মাস ধরে। অর্থমন্ত্রীর কাছে আমরা এ বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য জানতে চেয়েছি। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন তিনি এর খোঁজ নেবেন।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সাল থেকেই ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তারা বিভিন্ন দাবি জানিয়ে এলেও তা পূরণ হচ্ছিল না। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসার পর প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে ইকোনমিক ক্যাডারের একীভূতকরণের বিষয়টি গতি পায়। ২০১০ সালে পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকারের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়। যদিও ওই কমিটির সুপারিশ কখনো আলোর মুখ দেখেনি।

একীভূত হলে ইকোনমিক ক্যাডারের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে বর্তমানে যে জট লেগেছে, তা আর থাকবে না। বর্তমানে এই ক্যাডার থেকে শুরুর দিকের পদবির নাম ‘সহকারী প্রধান’ এবং প্রশাসন ক্যাডারে শুরুর দিকে পদবির নাম ‘সহকারী সচিব’। একীভূত হলে সহকারী প্রধান পদবিটিই আর থাকবে না। তাঁরা তৃণমূল পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হতে পারবেন, জেলা প্রশাসকও (ডিসি) হতে পারবেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগে বিরোধিতা করলেও প্রশাসন ক্যাডার এখন ইকোনমিক ক্যাডারকে একীভূত করার ব্যাপারে উৎসাহী।