উপজাতি সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বে অতিষ্ঠ লাখো মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক: পার্ব্যত্য এলাকায় উপজাতিদের রয়েছে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী সংগঠন। যেগুলো প্রত্যেকেই যার যার লোক দিয়ে পাহাড়ের বাসিন্দা বিশেষ করে বাঙালিদের থেকে চাঁদাবাজি করে থাকে। চাঁদা না দেয়ায় তাদের হাতে খুন হয়েছেন বহু ব্যবসায়ী ও নিরীহ মানুষ। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লক্ষ লক্ষ মানুষ উপজাতি এসসকল সংগঠনের অত্যাচার, নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন।

উপজাতীয় এইসকল সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর দুষ্কর্মের প্রধান অন্তরায় হচ্ছে স্থানীয় বাঙালি সোর্স। এ অবস্থায় ওই অঞ্চলের শান্তি-সম্প্রীতি রক্ষায় নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নমনীয়তার সুযোগে উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের অপকর্মের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এসকল সন্ত্রাসী সংগঠনের উৎপত্তি অনুসন্ধনে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে শান্তি চুক্তির পর জন্ম নেয় পার্বত্য শান্তি চুক্তিবিরোধী জোট ইউপিডিএফ। শান্তি চুক্তির পক্ষের জোট জেএসএসের এক সময় এখানে অবস্থান থাকলেও, পরে তারা এলাকা থেকে বিতাড়িত হয়। সীমান্তবর্তী বাঙালি জনগোষ্ঠী তাদের সঙ্গে সব সময় বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করলেও তারা সব সময় বাঙালিবিরোধী আচরণ করেছে।

জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে প্রবীণ ব্যবসায়ী এজাহার মিয়া কোম্পানিকে অপহরণ করে ইউপিডিএফ। নানুপুরের আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ ওসমান গনি বাবু (বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান) দেন-দরবার করে ছাড়িয়ে আনেন প্রায় একমাস অতিক্রম হবার পর। চাঁদা আদায়ের সুবিধার্তে বার্মাছড়ি বাজার মধ্যছড়ি থেকে স্থানান্তর করে। ওই সময়ে ফটিকছড়ি-গহিরার প্রায় ১৫ ব্যবসায়ীকে একযোগে অপহরণ করে। মুক্তিপণ দিয়ে তিনদিন পর তাদের ছাড়া হয়। ২০০৫ সালের পর থেকে পার্বত্য এলাকায় বাঙালিদের ক্রয় করা গাছ বাগান, বাঁশ বাগান, কলা বাগান, হলুদ বাগান, আদা-রসুন বাগান ছেড়ে দিতে বাধ্য করছে।

২০১৪ সালে সেনা বাহিনীর সোর্স হয়ে কাজ করার অপরাধে খিরাম এলাকায় ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয় ব্যবসায়ী ইউসুফকে। ২০১৩-১৪ সালে অন্তর্কোন্দলের দায়ে কাঞ্চননগরের সরকারি ঢেভায় ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করা হয় দুই চাকমা জেএসএস কর্মীকে। ২০১৩ সালে দাঁতমারা এলাকায় হত্যা করা হয় অপর জেএসএস কর্মীকে।

২০১৩ সালে খিরামের বিএনপি নেতা আহমদ ছাপাকে অপহরণ করে মিলন চাকমা বাহিনী। একমাস আটক রাখার পর চার লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়ে তাকে ছাড়া হয়। ২০১৫ সালে সর্তা বনবিটের কর্মচারী এজাহার মিয়া, হোসেন বলি ও আইয়ুব বলীকে গামরীতলা থেকে অপহরণ করা হয়। এক সপ্তাহ পরে তাদের ১৬ লাখ টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে ছাড়া হয়। ২০১৫ সালে পাইন্দং এলাকার এক প্রবাসীর শিশু সন্তানকে অপহরণ করে ৮ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করা হয়।

২০১৪-১৫ সালের শুষ্ক মৌসুমে ধুরুং বনবিট, সর্তা বনবিট, নারায়ণহাট বনবিট, দাঁতমারা বনবিট, কর্ণফূলী চা বাগান, কাঞ্চন নগর রাবার বাগান, রাঙ্গামাটিয়া রাবার বাগানের লাখ লাখ টাকার মূল্যবান গাছ কেটে উজাড় করেছে। ২০১৫ সালে দাঁতমারার বালুখালী এলাকায় আজিজ সওদাগরের প্রায় কয়েক লাখ আগর গাছ কেটে ফেলে চাঁদা না দেয়ায়।

২০১৪-১৫ সালে ফটিকছড়ির রাঙ্গামাটিয়া, গোপালঘাটা, কাঞ্চনপুর, মানিকপুর, পাইন্দং, দাতমারা এলাকায় গণহারে শতাদিক বাঙালির ঘরে ডাকাতি করে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা।

ইউপিডিএফ সন্ত্রসীদের আক্রমণের সর্বশেষ শিকার ফটিকছড়ির ব্র্যাক কর্ণফুলী চা বাগানের দুই ম্যানেজার শাহ নেওয়াজ ও ইলিয়াছ। ব্র্যাক কর্ণফুলী চা বাগান কর্তৃপক্ষ জানান, জাফরাবাদ, দুইধ্যাখোলা, ট্যাকবাড়িয়া, সরকারি ঢেবা, রক্তছড়ি, মানিকপুর এলাকার শত শত একর চা বাগানের ইজারাকৃত জমিতে কাজ করতে দিচ্ছে না ইউপিডিএফ। তারা জমিগুলো তাদের দাবি করে। কিন্তু কোনো সমঝোতায় বসে না। উল্টো চাঁদা দাবি করে বসে। এ জন্য জাফরাবাদ এলাকায় প্রায় ৫ হাজার চা গাছ মরে যাচ্ছে।

ভুক্তভোগীরা জানান, সীমান্তবর্তী এই সব এলাকার কৃষি জমিতে চাষ করতে, ফসল তুলতে, পাহাড়ি টিলাতে গাছ রোপ, কর্তন করতে ইউপিডিএফকে মোট অংকের চাঁদা দিতে হয়। নয়তো তারা শ্রমিকদের মারধর করে ধরে নিয়ে যায়। মুক্তিপণ আদায় করে।

বাঁশ ব্যবসায়ী শামসুল আলম (৪২) বলেন, পাহাড়ি এলাকায় ব্যবসা করতে হলে প্রথমে ইউপিডিএফকে ১০-৫০ হাজার টাকা দিয়ে পাস নিতে হবে। আবার ঘাটে ঘাটে ইউপিডিএফ ও জেএসএসের নামে চাঁদাও দিতে হয়। এভাবে দুই হাজার টাকার বাঁশের চালি ফটিকছড়ি পৌঁছাতে লাগে তিন হাজার টাকা চাঁদা।

গাছ ব্যবসায়ী সেলিম উল্লাহ (৪৫) বলেন, পাহাড়ি এলাকায় গাছ বাগান কাটতে হলে বাগান অনুপাতে দিতে হয় চাঁদা। আবার গাছ ও লাকড়ি গাড়ি প্রতি চাঁদা। এক সিজনের জন্য পাস পারমিট নিতেও হয়। ব্যতিক্রম হলে অপহরণ করে নির্যাতন করে। মুক্তিপণ নেয়।

জিপ গাড়ির মালিক রাশেদুল আলম (৩৩) বলেন, জিপ, ট্রাক, ট্রলি গাড়ি পার্বত্য এলাকায় ডুকলেই পাস নিতে হয়। না হয় ড্রাইভারকে আটক করে বেদম পিটুনি দেয়। গাড়ি নষ্ট করে দেয়।

কাঞ্চনপুরের কৃষক শিমুল মহাজন শম্ভু (৪৭) বলেন, আমাদের বাপ-দাদার জোত সম্পত্তিগুলো বিগত ২-৩ বছর যাবৎ পরিষদ নামধারী উপজাতিরা দখল করছে। আমাদের তারা কৃষি কাজ করতে দিচ্ছে না। চাষাবাদ করলে চাঁদা দাবি করে।

এদিকে এক শ্রেণির বাঙালিরা টাকার বিনিময়ে ইউপিডিএফের সোর্স হিসেবে কাজ করে। তাদের কারণে বাঙালিরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কোনো উদ্যোগ নিতে পারে না। এই সোর্সগুলো চিহ্নিত করে বিচারের ব্যবস্থা করা দরকার।