উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মুহুরী বিরোধ ঝুলিয়ে রেখেছে ভারত

নিজস্ব প্রতিবেদক: মুহুরী নদীর মধ্যস্রোতকে সীমানা ধরে এ নিয়ে সীমান্ত বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে বাংলাদেশ বারবার অনুরোধ করার পরও ভারত তা ঝুলিয়ে রেখেছে। ভারত সফরের সময় গত ৫ অক্টোবর নয়া দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সাথে বৈঠকের সময় সর্বশেষবারের মতো বিষয়টি উত্থাপন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ পক্ষ এই ইস্যুতে কোনো ধরনের সুস্পষ্ট জবাব পায়নি এবং ওই দিন বিকেলে সফরটি নিয়ে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে এর কোনো উল্লেখই ছিল না।

প্রধানমন্ত্রী ৯ অক্টোবর গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন যে মুহুরীর চর নিয়ে আমাদের এখনো কিছু কথা আছে। বিষয়টি আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে উত্থাপন করেছি। এর মাধ্যমে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে মুহুরী নদীর মধ্যস্রোতকে নিয়ে বিরোধ এখনো রয়ে গেছে। তিনি অবশ্য আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে কোনো ধরনের জটিলতা ছাড়াই বিরোধটির মীমাংসা হবে।

শেখ হাসিনা ২০১৫ সালে ঢাকায় ও ২০১৭ সালে নয়া দিল্লিতে মোদির সাথে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার সময়ও বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন।

আর মন্ত্রী পর্যায়ে গত আগস্টে দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের সভায় বাংলাদেশ সর্বশেষবারের মতো মুহুরীর মধ্যস্রোত নিয়ে বিরোধের কথা উল্লেখ করে। জবাবে ভারতের মন্ত্রীর কাছ থেকে বাংলাদেশ কেবল আশ্বাস’ই লাভ করে।

উভয় পক্ষের জরিপকারীরা মুহুরী নদীর মধ্যস্রোত নির্ধারণ করার চেষ্টা চালানোর প্রেক্ষাপটে মুহুরীর চর বিরোধটি সামনে আসে। ভারতে প্রধানমন্ত্রী মনমোহনের আমলে ২০১১ সালে দুই দেশ পুরো স্থল সীমান্ত নিরসনের জন্য প্রটোকল সই করার পরই বিরোধটি নিরসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল।

দুই দেশ ১৯৭৪ সালের স্থল সীমান্ত চুক্তি ও ২০১১ সালের প্রটোকলের আলোকে মুহুরীর চর ছাড়া বাকি সব সীমান্তবিষয়ক মতবিরোধ মিটিয়ে ফেলেছে। দুই পক্ষ ফেনীর বেলোনিয়া স্থল বন্দর থেকে ২০০ গজ দূরে কাঠের পিলার ব্যবহার করে বিরোধপূর্ণ মুহুরীর চর চিহ্নিত করে রেখেছে। অবশ্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ২০১৬ সালের পর থেকে নতুন জরিপ চালানোর তাগিদ দেয়ার কারণে বিরোধটির সমাধান এখনো হয়নি।

ভারতীয়রা দাবি করছে যে আঁকাবাঁকা নদীটি ২০১১ সালে যেমন অবস্থায় ছিল, তার আলোকে মধ্যস্রোত ধরে সীমান্তকে গ্রহণ করা উচিত বাংলাদেশের। আর বাংলাদেশ চায় ১৯৭৭-৭৮ সালের জরিপের আলোকে ইস্যুটির মীমাংসা। বাংলাদেশের অবস্থানের পক্ষে যুক্তি হলো এই যে মুহুরী নদীটি ১৯৭৭-৭৮ সালের পর ধারা বদলে বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে গেছে। আর এমনটা হওয়ার কারণ ভারতীয় এলাকায় শক্ত বাধ ও স্পার নির্মাণ। ফলে বাংলাদেশের ফেনীর বিশাল এলাকা নদীতে চলে গেছে।

দুই পক্ষই নদীর মধ্যস্রোতকে সীমান্ত বিবেচনা করার আন্তর্জাতি নীতি গ্রহণ করেছে। দুই দেশের গৃহীত সীমান্ত নির্দেশিকায় এ ধরনের বাধ ও স্পার নির্মাণ নিষিদ্ধ। কারণ এতে সীমান্ত নদীর প্রবাহ বদলে যায়।

দুই দেশ এখন পর্যন্ত স্থল সীমান্ত নিয়ে ১,১৭৪টি স্ট্রিম ম্যাচে সই করেছে। মুহুরীর দুই কিলোমিটার সীমান্তজুড়ে নতুন নতুন বিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় ২০১৬ সালের ৩০ জুলাই নির্ধারিত তারিখে স্ট্রিপ ম্যাচটিতে সই হয়নি।