উত্তরা ইপিজেডে শত কোটি টাকার পণ্য রফতানি

নিউজ ডেস্ক: প্রতিষ্ঠার পর ২০১৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডের কারখানাগুলো থেকে রফতানি হয়েছে ৯৯ কোটি ৫৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা (৯৯৫.৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) সমমূল্যের নানা পণ্য। এই রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলকে ঘিরে আশেপাশের এলাকায় বিশাল অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এখানকার কারখানাগুলোর কাঁচামাল সরবরাহকে কেন্দ্র করে বড় বড় বাজার গড়ে উঠেছে।
বর্তমানে সেখানে ৩৮৭ বিদেশিসহ ৩৪ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। ইপিজেডের আশেপাশে স্থানীয়ভাবে গড়ে উঠেছে ছোটখাটো অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। স্থানীয় শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নে হাতে-কলমে শেখানো হচ্ছে পোশাক শিল্পসহ নানা ধরনের হাতের কাজ। সেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা ইপিজেডের বিভিন্ন কারখানায় কাজের সুযোগ পাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উত্তরা ইপিজেডে চশমা ও চশমার ফ্রেম, পুতুল (মডেল), উইগ, খেলনা, বাঁশের তৈরি কফিন, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ব্যাগ, বেল্ট, পরচুলা প্রভৃতি পণ্য তৈরি হয়। এখানে ১৮টি কারখানা চালু রয়েছে, যার মধ্যে দেশি ৯টি ও বিদেশি ৯টি। এছাড়া ৮টি কারখানা বাস্তবায়নাধীন। ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে উত্তরবঙ্গের ৮টি জেলার বেকার ছেলেমেয়েরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছেন। শুরুতেই হংকংভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানে চীনারা বিনিয়োগ করে। উত্তরা সোয়েটার ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে চীনাদের তত্ত্বাবধানে এবং বাংলাদেশের শ্রমিকরা উন্নতমানের সোয়েটার উৎপাদন করে দেশে-বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছে।
বর্তমানে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে হংকংভিত্তিক এভারগ্রিন প্রোডাক্ট ১০টি প্লট বরাদ্দ নিয়ে উৎপাদন করছে পরচুলা। সনিক বাংলাদেশ লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান মডেল (পুতুল) তৈরি করে জাপান, হংকং, মেকাও, চায়না, ফ্রান্স, ইউরোপ, কোরিয়াসহ বিদেশের বাজারে সুনাম কুড়িয়েছে। কারখানাটিতে পাঁচ হাজারেরও বেশি শ্রমিক কাজ করেন। উত্তরা ইপিজেডে তৈরি হচ্ছে উন্নতমানের বাঁশ-বেতের তৈরি কফিন, যা রফতানি করা হচ্ছে ইউরোপের বাজারে। ওয়েসিস ট্রান্সফর্মেশন লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান এই কফিন তৈরি করছে। বাঁশ, বেত, কলার ছোবড়া, কচুরিপানা ও পাটকাঠি দিয়ে তৈরি কফিন ইউরোপের বাজারে বিক্রি হচ্ছে। কফিন তৈরির কারণে এই অঞ্চলে বাঁশ ও বেতের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। পাশাপাশি বাঁশ বাগান থেকে বাঁশ ও কলার ছোবড়া, কচুরিপানা ও পাটকাঠি সংগ্রহের কাজ পেয়েছেন প্রত্যন্ত গ্রামের অনেক নারী ও পুরুষ। তারা দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে সেখানে কাজ করে পরিবার চালাচ্ছেন।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) সকালে ওই কারখানার শ্রমিক ছবি রানীর (৩০) সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে ওয়েসিস কারখানায় চাকরি নিই। ওই সময় সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরাতো অবস্থা। পেট ভরে একবেলা খেতে পেতাম না। এখন দশ হাজার টাকা বেতন পাই। সংসার এখন ভালোই চলছে।’ শুধু ছবি রানীই নয়, হাজার হাজার নারী-পুরুষ উত্তরা ইপিজেডের বিভিন্ন কারখানায় কাজ করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। এভারগ্রিনের পরচুলা কারখানার শ্রমিক রেবেকা সুলতানা বলেন, ‘২০১০ সাল থেকে ইপিজেডের পরচুলা কারখানায় চাকরি করে ভালোই আছি। আমাদের এখানে ইপিজেড না হলে পরের বাসায় ঝিয়ের কাজ করে সংসার চালাতে হতো। মেয়েদের ভাগ্যে জুটতো না নতুন জামা ও লেখাপড়া।’
বাংলাদেশ ইপিজেড কর্তৃপক্ষ (বেপজা) জানায়, উত্তরা ইপিজেডে বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এখানে উদ্যোক্তাদের জন্য শিল্প প্লট ও কারখানা ভবনের ভাড়া ৫০ ভাগ কমানো হয়েছে।
উত্তরা ইপিজেডের ব্যবস্থাপক (জেনারেল ম্যানেজার) এস এম আখতার আলম মোস্তাফি বলেন, ‘এখানে বিনিয়োগকারীদের শত ভাগ নিরাপত্তাসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। তবে এই ইপিজেডে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত, ইপিজেড থেকে ৩৮ কিলোমিটার দূরে ভারতের হলদিবাড়ির সঙ্গে চিলাহাটি স্থলবন্দর চালু, সরাসরি রেল যোগাযোগ এবং নীলফামারী সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিকমানের করা হলে উত্তরা ইপিজেডে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করেন শিল্প উদ্যোক্তা ও ইপিজেড কর্তৃপক্ষ।