ইসলাম নিয়ে অবমাননাকর বই প্রকাশের দায়ে দিব্য প্রকাশ ও চারদিক প্রকাশনীকে লিগ্যাল নোটিশ

ইসলাম নিয়ে অবমাননাকর বই প্রকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের দায়ে দিব্য প্রকাশ ও চারদিক প্রকাশনীকে দুইটি পৃথক লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। বিশ্ববার্তা নামক অনলাইন পত্রিকার সম্পাদক মুহম্মদ আরিফুর রহমানের পক্ষে বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট শেখ ওমর শরীফ রেজিস্টার্ড ডাকযোগে লিগ্যাল নোটিশটি পাঠান।

লিগ্যাল নোটিশসমূহে বলা হয়, “চারদিক” ও “দিব্য প্রকাশ” প্রকাশনী থেকে ব্রিটিশ লেখক ই. এইচ. গমব্রিখ রচিত “A Little History of the World” বইয়ের বাংলা অনুবাদ যথাক্রমে “অ্যা লিটল হিস্ট্রি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড” ও “পৃথিবীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস” নামে প্রকাশিত হয়েছে। চারদিক প্রকাশনীর বইটির অনুবাদক সৌরভ দাস এবং দিব্য প্রকাশের বইটির অনুবাদক আসমা সুলতানা ও কাজী মাহবুব হাসান। অনুবাদগ্রন্থ দুটিতে পবিত্র দ্বীন ইসলাম এবং মহানবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামকে অত্যন্ত অবমাননাকরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। বই দুটির বিংশ অধ্যায়ের প্রায় পুরোটাই অত্যন্ত অসম্মানজনক ভাষায় রচিত; ভুল, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্যে ভরপুর। পবিত্র দ্বীন ইসলামের মহান নবীকে চরম অভদ্রভাবে কেবল “মুহম্মদ” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসলামে ব্যবহৃত “আল্লাহ” শব্দটি বাংলায় ব্যাপকভাবে প্রচলিত থাকা সত্ত্বেও “আল্লাহ”-কে “ঈশ্বর” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে। দিব্য প্রকাশের অনুবাদগ্রন্থে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামের পবিত্র নবুওয়তপ্রাপ্তিকে একটি জেগে দেখা স্বপ্ন ও কাল্পনিক ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। চারদিক প্রকাশনীর অনুবাদে বলা হয়েছে, “কেউ যদি তাকে নবী হিসেবে মানতে অস্বীকার করে তাহলে তাকে হত্যা করাটাও মুহাম্মদের নিকট কোন অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতো না।” অথচ ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, কেবল নবী হিসেবে অস্বীকার করলেই মহানবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম কাউকে হত্যার নির্দেশ দেননি। বরং মদীনা সনদের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম মদীনায় বসবাসরত অমুসলিমদেরকেও রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা দিয়েছিলেন, অথচ মদীনার ওইসব অমুসলিম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামকে নবী হিসেবে স্বীকার করেনি।

এছাড়াও বই দুইটির আরো কিছু বিকৃত, ভুল ও অসম্মানজনক তথ্য খণ্ডন করে লিগ্যাল নোটিশ দুটিতে বলা হয়, অনুবাদগ্রন্থ দুটির এসব তথ্য ও বর্ণনার দায় নোটিশগ্রহীতাদের ওপরই বর্তাবে। কেননা নোটিশগ্রহীতারা ইচ্ছাকৃতভাবেই অস্ট্রিয়ান বংশোদ্ভূত ইহুদি ই. এইচ. গমব্রিখ-এর মতো ইসলামবিদ্বেষী লেখকের বইকে অনুবাদের জন্য বেছে নিয়েছেন। অনুবাদের ক্ষেত্রে সম্মানজনক শব্দ ব্যবহারের পূর্ণ সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নোটিশগ্রহীতারা সেটি করেননি, বরং তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামকে বিভিন্ন অবমাননাকর শব্দে উপস্থাপন করেছেন। মূল লেখকের ভুল, বিকৃত ও বিভ্রান্তিকর তথ্যগুলো টীকা কিংবা ফুটনোট আকারে নোটিশগ্রহীতারা সংশোধন ও ব্যাখ্যা করতে পারতেন এবং সৎ অনুবাদের ক্ষেত্রে এটি তাদের দায়িত্বও ছিল। কিন্তু এসব কিছুই না করে নোটিশগ্রহীতারা অনুবাদগ্রন্থ দুটিতে অসম্মানজনক ভাষায় বহু ভুল, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করেছেন।

নোটিশে দুটিতে বলা হয়, বাংলাদেশের দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর ২৯৫(ক) ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মানুসারীদের কোনো শ্রেণীর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত ও হিংসাকৃতভাবে লিখিত বা উচ্চারিত কথা দ্বারা সে শ্রেণীর ধর্মকে বা ধর্মীয় বিশ্বাসকে অপমানিত করে বা অপমানিত করার চেষ্টা করে, তবে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অনুবাদগ্রন্থ দুটিতে নোটিশগ্রহীতারা পবিত্র দ্বীন ইসলাম এবং মহানবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামকে নিয়ে অত্যন্ত অসম্মানজনক ভাষায় বহু ভুল, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করে নোটিশদাতার দ্বীনি অনুভূতিতে আঘাত হেনেছেন।

নোটিশে বলা হয়, নোটিশ পাওয়ার ৭ কার্যদিবসের মধ্যে নোটিশগ্রহীতাগণ অনুবাদগ্রন্থ দুটি বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নিতে হবে এবং বই দুটিতে অসম্মানজনক ভাষায় বহু ভুল, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশনের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। অন্যথায় নোটিশদাতা আইনের আশ্রয় নেবেন বলে নোটিশসমূহে বলা হয়েছে।