শিক্ষকের নয় একজন ইসলাম কটূক্তিকারীর বিচার করেছি: সেলিম ওসমান

নিউজ নাইন২৪, না.গঞ্জ: শিক্ষকের লাঞ্ছিতের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর ও বন্দর) আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান বলেছেন, ‘আমি কোনো শিক্ষকের বিচার করি নাই। আমি একজন ইসলামের কটূক্তিকারীর বিচার করেছি। শ্যামল কান্তি ভক্ত ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেছেন। আমি সংসদ সদস্য হয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছি। এখানে আমার কোনো দোষ নেই।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে না.গঞ্জ ক্লাব লিমিটেডে তৃতীয় তলায় কনভেনশন হলে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘটনায় তার অবস্থান স্পষ্ট করে তিনি একথা বলেন।

সাংসদ সেলিম ওসমান দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, আল্লাহকে কটুক্তি করার প্রতিবাদে আমি একজনকে শাস্তি দিয়েছি। এজন্য যদি আমার ফাঁসিও হয়, আমার কোন আপত্তি নেই।”

তিনি বলেন, ‘আমি ওই শিক্ষকের লাঞ্ছিতের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করছি। এর জন্য আমি লজ্জিত হতে পারি কিন্তু আমি তার কাছে ক্ষমা চাইবো না। কারণ সে ইসলাম নিয়ে কটুক্তি করেছে। এ অপরাধ ক্ষমা করা যায় না।’

তিনি আরো বলেন, ক্ষমাও চাইবো না, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সংসদেও যাবো না। কোন চ্যাম্বারেও বসবোনা। আমি যদি অপরাধী হিসেবে প্রমাণিত হই আমি সমস্ত পদ থেকে পদত্যাগ করবো।

সংবাদ সম্মেলনে সেলিম ওসমান সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, সেদিন ঘটনা শুরু হয়েছিল সকাল ১০টার দিকে। আমি সেখানে গিয়েছি বিকেল চারটায়। গিয়ে দেখি চার থেকে পাঁচ হাজার লোক সেখানে জড়ো হয়েছে। গিয়ে আমি শুনেছি, ওই শিক্ষক একজন ছাত্রকে মেরেছিল। ছাত্র পরে অসুস্থ হয়ে যায়। শিক্ষক বাজার থেকে ওষুধ এনে ছাত্রকে খাওয়ান।
ওই ছাত্র আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে। এর মধ্যেই ওই শিক্ষক ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেছে বলে এলাকার লোকজন তাকে গণপিটুনি দিয়েছিল। পুলিশ শিক্ষককে একটি ঘরে নিরাপত্তা দিয়ে রাখে। আমি সেখানে যাওয়া মাত্র এলাকার লোক আমাকে বলেছে, ‘ওই শিক্ষককে আমাদের হাতে ছেড়ে দেন।’ কিন্তু আমি কোনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চাইনি।

সেলিম ওসমান আরো বলেন, আমি তখন শিক্ষকের কাছে যাই। তিনি ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তির কথা স্বীকার করেন। শিক্ষকের কাছে জানতে চাই, তোমার কী শাস্তি হবে? তিনি যেকোনো শাস্তি মাথা পেতে নেবেন বলে জানান। সংসদ সদস্যকে বলেন, আমার তিন মেয়ে আছে। তাদের বিয়ে হয়নি। সেলিম ওসমান বলেন এ সময় তার মনে হয়, তার নিজেরও তিন মেয়ে আছে।

সেলিম ওসমান বলেন, ওই শিক্ষক নিজেই কান ধরে ওঠবস করার প্রস্তাব দেন। এতে আমি রাজি হই। শিক্ষক স্বেচ্ছায় কান ধরে ওঠবস করেন। আমি যা করেছি একজন মানুষের জীবন রক্ষার জন্য।

সেলিম ওসমান দাবি করেন, ওই দিন তিনিই পুলিশকে বলে ঘটনাস্থল থেকে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। হাসপাতালে সব চিকিৎ​সার খরচ তিনিই বহন করছেন। শ্যামল কান্তি ভক্তের সঙ্গে তার ফোনে যোগাযোগ হচ্ছে। আজ সকালেও শিক্ষকের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। বলেছেন, উন্নত চিকিৎ​সার জন্য তিনি ভারতের ভেলোরে যেতে চান। তিনি তাকে সহায়তা করবেন।

সরকারি তদন্ত কমিটি শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে ‘ধর্মীয় অবমাননার’ অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে সত্যতা পায়নি । এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সেলিম ওসমান বলেন, তদন্ত কমিটির কেউ তো আমার সঙ্গে কথা বলেনি। শিক্ষামন্ত্রী তো আমার সঙ্গে কথা বলেননি।

তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রী তার মতো করে কথা বলেছেন। আমার কাছে যথেষ্ট প্রমাণ আছে ওই শিক্ষক কটূক্তি করেছেন। তিনি নিজে আমার কাছে অপরাধ স্বীকার করেছেন। তার পরিবার আমার কাছে লিখিত দিয়েছে।

সেলিম ওসমান আরো বলেন, কেউ কেউ বলেছে আমাকে নাকি গণধোলাই দেবে। উপস্থিত নেতা কর্মীদের উদ্দেশে তিনি প্রশ্ন করেন, ‘আমাকে যখন গণধোলাই দিতে আসবে তখন কি আপনারা চুড়ি পরে বসে থাকবেন?’ এ সময় হলভর্তি নেতা কর্মীরা সমস্বরে বলে ওঠেন, ‘না’।

সংবাদ সম্মেলনে সেলিম ওসমান নারায়ণগঞ্জে তার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সংসদ সদস্য হওয়ার পর তিনি শিক্ষা, চিকিৎ​সা ও শিল্পায়ন এই তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন। শিক্ষার উন্নয়নে বিভিন্ন ইউনিয়নে সাড়ে ২২ কোটি টাকা দিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে সেলিম ওসমানের বক্তব্যের ভিডিও: