ইসলাম অবমাননার দায়ে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী, মসজিদের খতীব, চিকিৎসক, অধ্যাপকসহ বেশ কয়েকজনকে লিগ্যাল নোটিশ

শরীয়ত বহির্ভূত যাকাত সংগ্রহ: ‘বিদ্যানন্দ’র চেয়ারম্যানকে লিগ্যাল নোটিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার অবমাননা করায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী, মসজিদের খতীব, চিকিৎসক, অধ্যাপককে রোববার দৈনিক আল ইহসান ও মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার সম্পাদক মুহম্মদ মাহবুব আলমের পক্ষে পৃথক পৃথক লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশটি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট মাসুদুজ্জামান এবং এডভোকেট ওমর শরীফের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে প্রেরণ করা হয়েছে।

লিগ্যাল নোটিশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের মসজিদসমূহে জামাত বন্ধের আহবান জানানোর মাধ্যমে দ্বীনি অনুভূতিতে আঘাতের দায়ে ডিবিসি নিউজ টেলিভিশনের উপস্থাপিকা শারমিন চৌধুরী, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ, কাওরানবাজারের আম্বরশাহ শাহী জামে মসজিদের খতিব মাও. মাজহারুল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ আবুল কালাম, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ সহ অন্যান্য ১৭ জন চিকিৎসককে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

উক্ত লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়, গত ২ এপ্রিল প্রচারিত ডিবিসি নিউজ চ্যানেলের টক শো “রাজকাহন”-এর শিরোনাম ছিল ‘মক্কা মদিনায় জামাত নেই, বাংলাদেশে কেন?’ সেই টক শো-তে উপস্থাপিকা শারমিন চৌধুরী বারবারই দাবি করেছে যে, পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মসজিদুল হারাম শরীফ ও পবিত্র মদিনা শরীফ উনার মসজিদে নববী শরীফে জামাতে নামাজ আদায় বন্ধ হয়ে গেছে, সুতরাং বাংলাদেশেও মসজিদসমূহে জামাত বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি টকশোতে উপস্থিত ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ, কাওরানবাজারের আম্বরশাহ শাহী জামে মসজিদের খতিব মাও. মাজহারুল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ আবুল কালাম, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহও একই দাবী করে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, মক্কা শরীফের মসজিদুল হারাম শরীফ ও পবিত্র মদিনা শরীফ উনার মসজিদে নববী শরীফের বাইরের চত্বরে নামাজ পড়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। মূল মসজিদসমূহে জামায়াত কিংবা জুমার নামাজ কোনোটাই বন্ধ হয়নি। বিবিসি বাংলাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সঠিক সংবাদটি এসেছে।

নোটিশে বলা হয়, নামাজ সকল মুসলিমের ওপর বাধ্যতামূলক ইবাদত এবং মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামাজ আদায় করাও মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লিগ্যাল নোটিশে পবিত্র কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ থেকে বিভিন্ন উদ্ধৃতি দিয়ে নোটিশে বলা হয়, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্ধ ব্যক্তিকেও জামায়াত পরিত্যাগ করার অনুমতি দেননি। আরেক হাদীছ শরীফে এসেছে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জামায়াত পরিত্যাগকারীদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার মতো ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মসজিদে গিয়ে পবিত্র জুমার নামাজ আদায় করা সকল মুসলিমের ওপর ব্যক্তিগতভাবে বাধ্যতামূলক। তবে অসুস্থ ব্যক্তির জন্য জুমার নামাজ বাধ্যতামূলক নয়। পবিত্র ইসলামী শরীয়াতে অসুস্থ ব্যক্তিকে মসজিদে না আসার সুযোগ দিয়েছে, কিন্তু কিছু ব্যক্তির অসুস্থতার কারণে বাকি সব সুস্থ মুসলিমের জুমার নামাজ পরিত্যাগ করার কোনো সুযোগ নেই।
নোটিশদাতা বলেন, সাংবিধানিকভাবে যেহেতু বাংলাদেশের রাষ্ট্রদ্বীন ইসলাম, সুতরাং ইসলামী আক্বীদাসমূহ রাষ্ট্র দ্বারা সুরক্ষিত। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে মুসলিমদের নিজ দ্বীন পালনের অধিকারও রয়েছে। অথচ শারমিন চৌধুরীসহ টকশোতে উপস্থিত অন্যান্যরা মুসলিমদেরকে তাদের সাংবিধানিক অধিকার পালনে বাধা সৃষ্টি করতে চায়। পবিত্র মক্কা-মদিনা শরীফ উনাদের মসজিদ নিয়েও সে মিথ্যাচার করেছে। মসজিদে নামাজ বন্ধের পাঁয়তারা করার মাধ্যমে টকশোতে উপস্থিত সকলেই নোটিশদাতার দ্বীনি অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে।

নোটিশদাতা বলেন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোনো সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করাটা বাংলাদশে প্রচলিত দ-বিধির ২৯৫(ক) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ডিজিটাল মাধ্যমে এমন ধর্মীয় অবমাননামূলক তথ্য সম্প্রচার করাটা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এর ২৮ ধারার অধীনে অপরাধ।

নোটিশে বলা হয়, নোটিশ পাওয়ার ৭ কার্যদিবসের মধ্যে টকশোতে উপস্থিত উক্ত সকলকেই সুস্পষ্ট বিবৃতি দিয়ে তার উল্লেখিত মন্তব্যগুলো প্রত্যাহার করতে হবে এবং নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। ভবিষ্যতে দ্বীন ইসলাম নিয়ে অবমাননামূলক মন্তব্য আর করবে না- এমন প্রতিশ্রুতি দিতেও শারমিন চৌধুরীকে আহবান জানানো হয়েছে। অন্যথায় নোটিশদাতা আইনের আশ্রয় নেবেন বলে নোটিশে বলা হয়েছে।