ইটভাটা নয়, বায়ু দূষণের জন্য দায়ী ‘উন্নয়ন ধোঁয়া’

নিজস্ব প্রতিবেদক: ক্যাপস-এর পরিচালক অধ্যাপক কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, এত দিন আমরা মনে করতাম, ইটভাটা হছে ঢাকার বায়ুদূষণের ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ উৎস। কিন্তু বায়ুদূষণকারী উপাদানগুলো বিশ্লেষণ করে এখন মনে হছে, রাজধানীতে বিপুল পরিমাণে গাড়ি থেকে বের হওয়া কালো ধোঁয়া, শিল্পকারখানার ধোঁয়া ও সীমান্ত পেরিয়ে আসা দূষিত বায়ু ঢাকা শহরের বাতাসকে বিষিয়ে তুলছে।

ক্যাপস-এর পর্যবেক্ষণে ঢাকা শহরের দূষণের উৎস সম্পর্কে একটি নতুন ধারণা দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে এত দিন বলা হতো, ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উৎস ইটভাটা। এরপরেই পর্যায়ক্রমে নির্মাণকাজের ধুলা, যানবাহনের ধোঁয়া ও শিল্পকারখানা থেকে বের হওয়া দূষিত বায়ুর ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু নতুন পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ঢাকার বাতাসে অতি সূক্ষ্ম বস্তুকতা পিএম-২.৫ এর পরিমাণ বেশি। এটি সাধারণ জীবাশ্ম পোড়ানো জ্বালানি থেকে আসে। অর্থাৎ যানবাহন, শিল্পকারখানা ও জৈব বস্তু পোড়ালে যে ধোঁয়া বের হয়, তা থেকে আসে।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বায়ুদূষণ গবেষক আবদুস সালাম বলেন, ইটভাটাগুলো শুধু নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রায় ১০০ দিন চালু থাকে। কিন্তু ঢাকার বায়ু বছরে ৩০০ দিন খারাপ বা অস্বাস্থ্যকর থেকে খুবই অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় থাকছে। ফলে বোঝা যাছে, যানবাহনের ধোঁয়াসহ অন্য উৎসগুলো দূষণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে।

ক্যাপস-এর গবেষণায় ঢাকা শহরের জনবিন্যাস ও ভূমির ব্যবহারের দিক থেকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথমত, সংবেদনশীল এলাকা, মানে যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত ও হাসপাতাল রয়েছে। এমন ২০টি এলাকায় বাতাসের মান যা থাকা উচিত, তার চেয়ে সাড়ে চার গুণ বেশি দূষণকারী পদার্থ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষিত এলাকা হছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানকার বাতাসে পিএম-২.৫ এর পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে ৩৮৪ মাইক্রোগ্রাম। এরপর যথাক্রমে রয়েছে ধানমন্ডি বালক বিদ্যালয়ে ৩৬৬ মাইক্রোগ্রাম, সচিবালয়ে ৩৫০ মাইক্রোগ্রাম। তুলনামূলকভাবে বায়ুর মান ভালো পাওয়া গেছে শাহবাগ ও উত্তরা এলাকায়।

২০টি আবাসিক এলাকার বায়ুতেও সাড়ে ৪ গুণ বেশি দূষণকারী সূক্ষ্ম বস্তুকতা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা পুরান ঢাকার লালবাগের শ্রীনাথ স্ট্রিটের বায়ু। সেখানে বাতাসে সূক্ষ্ম বস্তুকতা পাওয়া গেছে ৫০৭ মাইক্রোগ্রাম। এরপরেই রয়েছে যথাক্রমে ফার্মগেটের কাছে মণিপুরিপাড়া, যাত্রাবাড়ীর ধলপুরের বাতাস। তুলনামূলকভাবে বায়ুর মান ভালো পাওয়া গেছে ঢাকা সেনানিবাস-সংলগ্ন মানিকদী ও গুলশান এলাকায়।

বাণিজ্যিক এলাকার মধ্যে রামপুরার উলন এলাকার বায়ুতে পাওয়া গেছে ৪৪৯ মাইক্রোগ্রাম। এরপরেই রয়েছে যথাক্রমে পুরান ঢাকার ইসলামপুর, পল্টন। তুলনামূলক ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলামোটর ও উত্তরার জসীমউদ্দীন রোডের বায়ুর মান। তবে সামগ্রিকভাবে ১৫টি বাণিজ্যিক এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ দশমিক ৭ গুণ বেশি সূক্ষ্ম বস্তুকতার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

২০টি মিশ্র এলাকার মধ্যে ফার্মগেট পুলিশ ফাঁড়ির সামনে সবচেয়ে বেশি দূষিত সূক্ষ্ম বস্তুকতা (প্রতি ঘন মিটারে ৩৬৯ মাইক্রোগ্রাম) পাওয়া গেছে। এরপরেই রয়েছে বংশাল ও নয়াপল্টন এলাকায়। তুলনামূলক বায়ুর মান পাওয়া গেছে নিউমার্কেট ও বড় মগবাজার এলাকায়। পাঁচটি শিল্প এলাকার বায়ুর মান স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ গুণের বেশি দূষিত সূক্ষ্ম বস্তুকতা পাওয়া গেছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা যাত্রাবাড়ীর দোলাইরপাড় এলাকায়, ৪৩৬ মাইক্রোগ্রাম।