ইউনেস্কোর প্রতিবেদন নিয়ে ‘মিথ্যাচারে’ সর কার : আনু মুহাম্মদ

ঢাকা: সরকার ইউনেস্কোকে ‘ঘুষ’ দিতে ব্যর্থ হয়ে সুন্দরবনের রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে উদ্বেগ জানিয়ে সংস্থাটির দেয়া প্রতিবেদন নিয়ে মিথ্যাচার করছে বলে মন্তব্য করেছেন তেল-গ্যাস সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “ইউনেস্কোর টিম যখন বাংলাদেশে এসেছিল, তখন তারা সারাক্ষণ সরকারি দলের লোকজনের কথাবার্তা শুনেছে। সরকারের ভাড়া করা বিশেষজ্ঞ, সরকারের আমলাদের সাথেই তারা কথা বলেছে।

“সরকারের বাইরের অন্যদের সাথে, স্বাধীন বিশেষজ্ঞ এবং আন্দোলনকারীদের সাথে যাতে তারা দেখা করতে না পারে সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব রকমের ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছিল। সুতরাং আমাদের সাথে তো ইউনেস্কোর টিমের দেখাই হয়নি।”

পল্টনের মুক্তি ভবনে ‘সুন্দরবন রক্ষা আন্দোলনে দমনপীড়ন, গ্যাস সম্পদ নিয়ে আত্মঘাতী তৎপরতা এবং আশু কর্মসূচি’ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলন হয়। ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের কাছে ভারতের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ‘মৈত্রী সুপার পাওয়ার থারমাল’ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পথে এগোচ্ছে সরকার। বাংলাদেশে বিভিন্ন নাগরিক ও পরিবেশবাদী সংগঠন এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতা করলেও সরকার বলছে, সুন্দরবনের ক্ষতি না করেই এই কেন্দ্র নির্মিত হবে।

সম্প্রতি ইউনেস্কো এ প্রকল্পের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে তা বাতিল করার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দেয়। গত ২৬ সেপ্টেম্বর-২০১৬ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা হাছান মাহমুদ বলেন, রামপালবিরোধীদের দ্বারা ‘প্রভাবিত’ ইউনেস্কোর চিঠি। এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আনু মুহাম্মদ বলেন, “সরকারের অসুবিধাটা হচ্ছে; সরকার সবসময় লবিং ফার্ম দিয়ে, বিজ্ঞাপনী সংস্থা দিয়ে, টাকা-পয়সা খরচ করে, ঘুষ দিয়ে বিভিন্ন লোকজনকে কেনার চেষ্টা করে। সম্ভবতঃ ইউনেস্কোর টিমের সাথে সেটাতে ব্যর্থ হয়ে তাদের প্রতিবেদন নিয়ে মিথ্যাচার করছে।” বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতেই জাতীয় কমিটি আন্দোলন করছে বলে জানান তিনি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে তিনি বলেন, “রূপপুরেও সরকার বিপুল ঋণ নির্ভরতায় দেশকে আটকে এক মহাবিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পারমাণবিক বর্জ্য ফেরত নেয়া এবং পরিশোধনের কোনো সুস্পষ্ট বিধান না রেখে সরকার রাশিয়ার সাথে রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে চুক্তি করেছে।”

‘রামপাল প্রকল্প বাতিলে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেয়া হবে’:

রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প বাতিলের দাবিতে এবার ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি দেবে বাংলাদেশের তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। এতে বলা হয়, ১৮ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে মিছিলসহ ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের কাছে খোলা চিঠি হস্তান্তর করা হবে।

রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের দাবিতে মাসব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে জাতীয় কমিটি। এর মধ্যে আগামী ১৮ অক্টোবর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ এবং ভারতের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্েয ‘খোলা চিঠি’ দেয়া হবে। ২৪ থেকে ২৬ নভেম্বর ‘চল চল ঢাকা চল’ কর্মসূচিকে সামনে রেখে অক্টোবরে সারা দেশের বিভাগ ও জেলা সদরে সমাবেশ ও পদযাত্রা করা হবে বলে জানান আনু মুহাম্মদ।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, রামপাল প্রকল্পের প্রধান অংশীদার ভারত। এ কারণে ভারত সরকারকে লক্ষ্য করে কর্মসূচি নেয়াও জরুরী মনে করছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পর এবারে বাংলাদেশের নাগরিকদের পক্ষ থেকে প্রকল্প বাতিলে উদ্যোগ নিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি দেব। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বৈজ্ঞানিক তথ্য-যুক্তিতে পরাজিত হয়ে, দেশী-বিদেশী গোষ্ঠির স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে সুন্দরবন বিনাশে সরকার শক্তি প্রয়োগের পথ গ্রহণ করছে। এটা তাদের শক্তির নয়-দুর্বলতার প্রকাশ।

গত ২৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি দেয়ার শান্তিপূর্ণ মিছিলে লাঠি, গুলি, টিয়ারগ্যাস প্রয়োগ করা হয়েছে। সুন্দরবনের উপর রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় যুক্ত হবার কারণে গবেষককে হয়রানি করা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয় লিখিত বক্তব্যে। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, রাজেকুজ্জামান রতন, মোশারেফা মিশু প্রমুখ।