আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড ও আটজনকে যাবজ্জীবন

ঢাকা: আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার আসামিরা নিশ্চিত ছিলো যে, চিহ্নিত হলেও তারা দলীয় সুরক্ষায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় আইনের বাইরেই থেকে যাবেন। আজ বুধবার আওয়ামী লীগ নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার প্রকাশিত ১৮২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে এমন কথা বলেছে হাইকোর্ট।

হাইকোর্ট বলেছে, ‘অপরাধ সংঘটনের ধরণ, স্থান ও সময় এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা দ্বিধাহীনভাবে এই ইঙ্গিত দেয় যে, তারা (আসামিরা) নিশ্চিত ছিল যে, চিহ্নিত হলেও দলীয় সুরক্ষায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় তারা আইনের বাইরেই থেকে যাবে। তাদের এই আচরণ প্রমাণ করে যে, তারা কতটা বেপরোয়া ও সহিংস ছিল। চরম বেপরোয়া, উচ্ছৃঙ্খল রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরাই কেবল এ ধরনের শক্তির ধারণ ও চর্চা করতে পারে।’

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত আরো বলেছে, ‘প্রতিটি হত্যাকা-ই অমানবিক, যা সমাজে ক্ষত সৃষ্টি করে, জনমানুষের নিরাপত্তাবোধে চরম আঘাত হানে। সুসংগঠিত আক্রমণের ফলশ্রুতিতে সংঘটিত যে হত্যাকা-কে কেন্দ্র করে এই ডেথ রেফারেন্স আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে জঘন্যতম ও কাপুরুষোচিত ঘটনা। এই নির্মম ঘটনা কেবল ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের প্রাণ কেড়ে নেয়নি, রক্তাক্ত করেছে সভ্য সমাজকে, মানুষের সুস্থ চেতনাকে, মানবতাকে।’

আদালত বলেছে, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরনের পৈশাচিক সুসংগঠিত হত্যাকাণ্ড অতীতে খুব কমই সংঘটিত হয়েছে। এ ঘটনায় রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের স্পষ্ট চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে।’

আদালত আরো বলেছে, ‘টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ স্কুল প্রাঙ্গনে অসংখ্য জনমানুষের উপস্থিতিতে পরিচালিত সুসংগঠিত আক্রমণের মাধ্যমে যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয় তা থেকে এটি সম্যক উপলব্ধি করা যায় যে, রাজনীতিতে দুর্বত্তায়ন কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে।’

‘এ মামলায় শুধু বর্বর হত্যাকা- প্রতিফলিত হয়নি, রাজনীতি কীভাবে দুর্বৃত্তায়িত হয়েছে এবং এমন দুর্বৃত্তায়ন কীভাবে অপরাধ সংঘটনকারীদের শক্তি ও সাহস জোগায় সেটিও স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। অথচ এটি অস্বীকার করা যায় না যে, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন দেশকে অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে ধ্বংস করে দেয়। গণতন্ত্রের লক্ষ্যই হলো জনকল্যাণ ও মানবাধিকার নিশ্চিত করা। আর সুস্থ গণতন্ত্র আসে কেবল সুস্থ রাজনৈতিক ধারা ও চর্চার পথ ধরে কোনোভাবেই এর দুর্বৃত্তায়নের পথ ধরে নয়।’

আদালতের রায়ে বলা হয়, ‘দেশ যখন ক্রমেই অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বার্থে সকলেরই যখন নিবিষ্ট হওয়া উচিত, সেই সময়ে রাজনীতিতে এই ধরনের দুর্বৃত্তায়ন কোনোভাবেই কাঙ্খিত নয়। দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি দেশকে ধ্বংস ছাড়া অন্য কোনো গন্তব্যে নিয়ে যেতে পারে না। আহসান উল্লাহ মাস্টার বেঁচে থাকলে আইনসভায় অবদান রাখার মাধ্যমে জনকল্যাণে নিবেদিত হওয়ার আরো সুযোগ পেতেন, করতে পারতেন আরো অনেক সুকর্ম। সমাজ ও জাতি হতে পারত আরো উপকৃত। সাজাপ্রাপ্ত অভিযুক্তরা আহসান উল্লাহ মাস্টারকে হত্যার মধ্য দিয়ে সমাজ, জাতি ও এলাকার মানুষকে সমৃদ্ধির পধে হাঁটার সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে।’

গত ১৫ জুন আওয়ামী লীগ নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলা ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড ও আটজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় হাইকোর্ট। অপরদিকে ১১ আসামিকে খালাস দেয়া হয়। বিচারক ওবায়দুল হাসান ও বিচারক কৃষ্ণা দেবনাথের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করে।