আমি সভাপতি পদে থাকতে চাইনি: ড. কামাল হোসেন

নিউজ ডেস্ক: দেশের সংবিধান প্রণেতাদের মধ্যে অন্যতম, আর্ন্তজাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘গণফোরামের সংবাদ সম্মেলনে যে বক্তব্যটি আপনাদের মাঝে দেওয়া হয়েছে এটি দলের বক্তব্য, আমার বক্তব্য নয়। আমাকে ওরা সভাপতি পদে রেখেছে। আমি সভাপতি থাকতে চাইনি, ওরা বলেছে আমাকে কিছু করতে হবে না।’

শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে গণফোরামের (মোকাব্বির খাঁন) কাউন্সিল পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন এসব কথা বলেন।

এর আগে, লিখিত বক্তব্যে পড়ে শোনান সাবেক এমপি রফিকুল ইসলাম কামাল। উপস্থিত ছিলেন- অ্যাডভোকেট আলতাফ হোসেন, মেজবাউদ্দিন আহমেদ, মোস্তাক আহমেদ মোস্তাকসহ অনেক।

সংবাদ সম্মেলনের শুরতেই ড. কামাল হোসেন জানান, দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। আমরা উদ্বিগ্ন। দেশ আজ ধ্বংসের মুখে। দেশকে বাঁচাতে হবে। সেজন্য সব সচেতন নাগরিক, নাগরিক সংগঠন, ছাত্র, শ্রমিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক, শ্রমজীবী, পেশাজীবী ও নারী সংগঠনসহ সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আসুন আমারা জাতীয় সংকট নিরসনের জন্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কাঠামো তৈরির দাবি জানাই।’

আমি গণফোরামের সভাপতি পদে থাকতে চাইনি: ড. কামাল হোসেন

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘দেশ বর্তমানে এক গভীর রাজনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত। গণতন্ত্র আজ নির্বাসিত, কর্তৃত্ববাদী-স্বৈরাচারী সরকারের গণবিরোধী কর্মকাণ্ডের ফলে দেশে চরম অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যর লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস-তেল, ডিজেলের মূল্য নিয়ে সরকারের অব্যবস্থাপনা ও অদূরদর্শীতা এবং লুটেরাদের স্বার্থে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণে জনগণের অর্থনৈতিক দূরাবস্থা আজ চরমে। সাধারণভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে। খুন হত্যা, গুম, ধর্ষণ এবং বিরোধীদলের উপর দমন-পীড়ন, মিথ্যা মামলা ইত্যাদি কারণে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। নির্বাচনি ব্যবস্থাও আজ ধ্বংসপ্রাপ্ত এবং প্রশ্নবিদ্ধ। অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের আপত্তির পরও নির্বাচন কমিশন ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তা দেশের জন্য এক ভয়ঙ্কর অশনিসংকেত। জাতি এই দুঃসহ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চায়।’

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের জীবন ও সম্পদ রক্ষার নিশ্চয়তা দেওয়া রাষ্ট্রের মৌলিক কাজ, তা মূলত ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে। বর্বরোচিত সহিংসতা দমনে সরকারের ব্যর্থতা আজ সুস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান বলেও উল্লেখ করা হয় লিখিত বক্তব্যে।

সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি ও ডা. মিজানুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়।

উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালে গণফোরাম প্রতিষ্ঠা হয়, দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. কামাল হোসেন। বর্তমানে দলটি দু’ভাগে বিভক্ত। এক গ্রুপে রয়েছেন দলটির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি মোস্তফা মহাসীন মন্টু। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলটি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে অংশ নেন। ওই ব্যনারে বিএনপিও নির্বাচনে অংশ নেয়। এরপর থেকে দলটি নেতৃত্বের কোন্দলে ভেঙে যায়। দুই গ্রুপই পৃথক পৃথক জাতীয় কাউন্সল করে কমিটি গঠন করে।

দুই গ্রুপের কাউন্সিলেই ড. কামাল হোসেন চিঠি দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। তবে মোকাব্বির গ্রুপের কাউন্সিলের কমিটি ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে তিনি উপস্থিত হন। এসময় কামাল হোসেন বলেন, ‘সারাদেশ থেকে লোকজন এসেছে, সেজন্য এসেছি। আমি সভাপতি পদে থাকতে চাইনি। ওরা আমাকে বলেছে আপনার নাম রাখা হয়েছে, আপনার কোনো কাজ করতে হবে না।’