আবারও আস্থা সংকটে শেয়ারবাজার

এক সপ্তাহে ১৭ হাজার কোটি টাকা হাওয়া

নিউজ ডেস্ক : নতুন অর্থবছরের (২০১৯-২০) বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য বেশ কিছু প্রণোদনা দেওয়া হলেও আস্থা সংকট কাটছে না। বিনিয়োগকারীদের চরম আস্থা সংকটে অব্যাহত বড় দরপতন হচ্ছে দেশের শেয়ারবাজারে। আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (৯ জুলাই) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্য সূচকের পতন হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে চলতি সপ্তাহের তিন কার্যদিবসেই দরপতন হলো।

শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য বেশ কিছু প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় শেয়ারবাজারে স্বাভাবিকভাবে দরপতন হওয়ার যুক্তিসংগত কোনো কারণ নেই। তবে বাজারে অব্যাহত দরপতন দেখা যাচ্ছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা সংকট বিরাজ করছে এবং বাজারে তারল্য সংকট রয়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মো. রকিবুর রহমান জানান, বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট ও তারল্য সংকটের কারণে বাজারে দরপতন হচ্ছে। বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য বেশ কিছু প্রণোদনা দেওয়া হলেও তারল্য বাড়েনি। বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট কেটে শেয়ারবাজার ভালো হতে সময় লাগবে।

তিনি আরও বলেন, বাজেটে রিজার্ভের কর সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা যুগান্তকারী। তবে শেয়ারবাজারের জন্য যেসব সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। আর এগুলো বাস্তবায়ন করতে সময় লাগবে। এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হলে বাজার অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াবে।

এদিকে বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, মঙ্গলবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের কার্যদিবসের তুলনায় ৩৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২৮০ পয়েন্টে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ১০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮৭৫ পয়েন্টে নেমে গেছে। আর শরীয়াহ সূচক ৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২০৯ পয়েন্টে।

সব সূচকের পতনের পাশাপাশি বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৮৬ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার বিপরীতে কমেছে ২৪২টি। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২৪টি শেয়ারের দর।

বাজারের এ চিত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. বখতিয়ার হাসান বলেন, সম্প্রতি শেয়ারবাজারের যে চিত্র দেখা যাচ্ছে তাতে বোঝা যাচ্ছে, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট রয়েছে। বর্তমানে এটাই শেয়ারবাজারের সব থেকে বড় সংকট।

এদিকে মূল্য সূচকের পতন ও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমলেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ সামান্য বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে ৫১২ কোটি ৯১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৪২৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ লেনদেন বেড়েছে ৮৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

টাকার অংকে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে রানার অটোমোবাইলের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে থাকা এশিয়ার টাইগার সন্ধানী লাইফ গ্রোথ ফান্ডের ১৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে এবং ১৩ কোটি ৭১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে ওঠে এসেছে ন্যাশনাল লাইফের শেয়ার।

এছাড়া বাজারটিতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- জেএমআই সিরিঞ্জ, ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন, সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ, রূপালী ইন্স্যুরেন্স, গ্রামীণফোন, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স এবং রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স।

দেশের অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৯০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ২০০ পয়েন্টে। বাজারটিতে হাতবদল হওয়া ২৭৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৭৪টির, কমেছে ১৮১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২১টির দর। লেনদেন হয়েছে ১৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা।