‘আত্মরক্ষায় ডিভাইস ব্যবহারের অনুমতি নেই’

নিজস্ব প্রতিবেদক: কেউ নিজের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হলে বা নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বাড়তি উপায় হিসেবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র বহন করতে পারবেন। কিন্তু আগ্নেয়াস্ত্র নয়, এমন কোনও ডিভাইস বা সরঞ্জাম সব সময় নিজের সঙ্গে রাখা যাবে না।

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী আত্মরক্ষার্থে কোনও ডিভাইস বা আত্মরক্ষা সামগ্রী ব্যবহারের অনুমোদন নেই। অন্যান্য দেশে, বিশেষ করে বাইরের দেশের নারীদের মধ্যে ‘ইলেকট্রিক টেজার‘ বা ‘টেজার গান’সহ এ ধরনের বিভিন্ন আত্মরক্ষামূলক ডিভাইসের (যেগুলো মারণাস্ত্র নয়) ব্যবহার যখন বাড়ছে, সেখানে বাংলাদেশে যে কারও এসব বহনের ক্ষেত্রে আইনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এসব ডিভাইস ব্যবহারের উপযোগিতা যাচাইয়ের জন্য বছরের শুরুতে উচ্চ আদালত আইসিটি মন্ত্রণালয়কে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। মন্ত্রণালয় সম্প্রতি আদালতকে তাদের মতামত জানিয়েছে। তারা মনে করছে, শরীরে বা সঙ্গে বহন করা সম্ভব এমন কয়েকটি ডিভাইস ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। এগুলো কীভাবে ৯৯৯ সেবার সঙ্গে যুক্ত করা যায় সে ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে।

আত্মরক্ষায় আক্রমণকারীকে হত্যার বিষয়টিও বিশেষ ক্ষেত্রে আইনসিদ্ধ। তবে এই বিষয়টি অনেকগুলো ‘যদি’ দিয়ে আইনে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে আত্মরক্ষায় কেউ কোনও ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেন কিনা বা সঙ্গে কিছু রাখতে পারবেন কিনা, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই আইনে।

আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, কোনও ডিভাইস সঙ্গে রাখতে পারবেন না আইনে তা বলা নেই। আবার রাখতে পারবেন তাও বলা নেই। এ বিষয়টিতে অস্পষ্টতা রয়েছে। আইনে যেসব বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে, সেগুলো করা যায় না। সেজন্য আমরা উচ্চ আদালতে রিট করেছিলাম।

দেশের ১৮৬০ সালের প্রচলিত দ-বিধির ৯৬ ধারা থেকে ১০৬ ধারা পর্যন্ত আত্মরক্ষার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এরমধ্যে দ-বিধির ৯৬ ধারায় বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার জন্য কোনও অধিকার প্রয়োগ করে থাকলে কোনও কাজই আইনে অপরাধ বলে গণ্য হবে না। তবে আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে নিজের সঙ্গে কোনও সরঞ্জাম রাখার কথা এই ধারাগুলোর কোনোটিতেই উল্লেখ নেই।

১০৬ ধারায় প্রয়োজনে জনতার ওপরে গুলি চালানোর কথা বলা হয়েছে। এতে ইঙ্গিত করে, অনুমোদিত আগ্নেয়াস্ত্রের কথা। তবে অন্য কোনও আত্মরক্ষা সামগ্রীর কথা বলা হয়নি। এ বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। তাই কোনও ডিভাইস বা অন্য কিছুই বহন করা আইনত বৈধ না।

১০০ ধারায় আছে, কোনও কোনও ক্ষেত্রে আপনি আত্মরক্ষা করতে গিয়ে অন্য কারও মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারেন। আর এগুলো হলো নিজের নিশ্চিত মৃত্যু ঠেকাতে, মারাত্মক আঘাত, ধর্ষণ থেকে বাঁচতে বা অপহরণের হাত থেকে রক্ষা পেতে। যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে এক্ষেত্রে পরবর্তীতে আত্মরক্ষার্থে হত্যাকা- ঘটেছে বলে আদালতে প্রমাণ করতে হবে। ছাড়াও ১০১, ১০২ ও ১০৩ ধারাতেও বলা হয়েছে, কোন কোন ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার জন্য একজন মানুষ বলপ্রয়োগ করতে পারবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক (এআইজি, মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, আইনে যা বলা আছে তার বাইরে একজন নাগরিক অন্য কোনও অস্ত্র বা কিছু রাখতে পারবেন না। অন্য কারও জন্য প্রাণহানিকর হতে পারে এমন সামগ্রী ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আছে।